পাহাড় জুড়ে শীতের আমেজ। এর মাঝে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির জলাভূমিতে আসতে শুরু করেছে শামখোল, চখাচখিসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বড় অংশ জুড়ে কাপ্তাই লেকের বিশাল জলাধার। আয়তন প্রায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার। ছোট হরিণা থেকে শুরু করে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, লংগদু ও বাঘাইছড়ি পর্যন্ত লেকের বিস্তৃতি।

শীতের সময় হৃদের এসব অংশে বাড়ছে অতিথি পাখির বিস্তৃতি। শীতের এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে আসে শামখোল পাখি। সম্প্রতি বাঘাইছড়ির উগলছড়ি বিলে দেখা যায় একঝাঁক শামখোল। সারা বছর এদের দেখা গেলেও শীতের সময় লেকের পানি কমে যাওয়ায় এদের বিচরণ বাড়ে। এরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়।

উগলছড়ি বিল থেকে শামখোল পাখির ছবি তুলেছেন খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। তিনি জানান, বাঘাইছড়ির উগলছড়িতে প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রচুর পাখি আসে। এর মধ্যে এশীয় শামখোল, চখাচখি, সরালি, রাঙা মানিকজোড়, ছোট মদনটাক, চেনা-অচেনা বিভিন্ন প্রজাতির বক থাকে। তবে শিকারিদের উৎপাতে বিলে পাখি আসা কমে গেছে। এছাড়া দেশীয় বোটের ইঞ্জিনের শব্দে পাখি আতংকিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পাখির আগমন অনেকটা কমে গেছে।

এশীয় শামখোল বকের তুলনায় অনেক বড় পাখি। এরা লম্বায় প্রায় ৬৮ সেন্টিমিটার। ডানা সাদা, তবে ডানা ও লেজের প্রান্ত কালো। এদের চঞ্চু কালো। দুটি চঞ্চুর মাঝে ফাঁকা জায়গা। শিকার ধরে ফাঁকা জায়গায় চাপ দিয়ে খায়। চোখ কালো, পা কালচে। তবে প্রজনন মৌসুমে এদের পা গোলাপি রঙের। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির দেহ হালকা বাদামি। ডানা লম্বায় ৪০ সেমি, চঞ্চু ১৫.৫ সেমি, পা ১৪ সেমি ও লেজ লম্বায় ২০ সেমি। এরা মূল জলচর পাখি।

পুরুষ ও স্ত্রী শামখোল পাখি দেখতে অভিন্ন। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। জুলাই থেকে এপ্রিল প্রজনন মৌসুম। এরা পানকৌড়ি বা বকের মতো ছোট খড়খুটো দিয়ে বাসা বাঁধে। এতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। স্ত্রী শামখোল ৫টি ডিম দেয়। প্রায় ২৫ দিন পরে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এক মাসের বেশি সময় পর শামখোলের ছানারা উড়তে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রামের জলাভূমিতে শামখোল দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি রয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি এশীয় শামখোলকে বিপদমুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন এশীয় শামখোলকে শঙ্কামুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here