আলোকিত ডেস্ক : প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে দেশ। গত কয়েকবছরের মতো এবারও দেশীয় পশুতেই সম্পন্ন হবে কোরবানি। শুধু তাই নয়, কোরবানির পরও অন্তত ৮ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের। ফলে এবার কোরবানিতে পশুর দাম কিছুটা কম থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকাতেও কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ১৮ লাখ। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ। আমরা ধরে নিয়েছি এবার সর্বোচ্চ ১ কোটি ১০ লাখ কোরবানি হতে পারে। অর্থাৎ কোরবানি শেষেও ৮ লাখের মতো পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।’

হিরেশ রঞ্জন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি হাটে ভ্যাটেনারি টিম দিচ্ছি। সীমান্তপথ দিয়ে যেন কোনো অবৈধ গরু ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সতর্ক রয়েছে। প্রতিটি হাটে মোবাইল কোর্ট থাকবে। রাস্তায় চাঁদাবাজির ঘটনা যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মনিটরিং টিমের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমও মাঠে থাকবে।’

কোরবানিতে পশুর দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চাহিদার বিপরীতে যোগান বেশি হলে দাম কম হতে পারে। আমরা ধারণা করছি, পশুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।’

বন্যার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সার্বিকভাবে সংকট দেখা দেবে না। এরইমধ্যে বন্যাকবলিত অঞ্চলে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সেসব অঞ্চলে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গো-খাদ্যের কারণে কেউ যদি পশু বিক্রি করেও থাকে তাহলেও ওই অঞ্চলের কোরবানির জন্য পশুর সংকট দেখা দেবে না।’

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান বলেন, ‘দেশে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশুর যোগান রয়েছে। সরকারের এই তথ্যের সঙ্গে আমরা একমত। তবে প্রতিবছরই যেটা হয় কোনো কোনো স্থানে পশুর পর্যাপ্ত যোগান থাকে, আবার কোথাও সংকট দেখা দেয়। গতবছর ঢাকায় অনেক বেশি গরু উঠেছিল। ফলে বেপারীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবার ময়মনসিংহ, গাজীপুর বা অন্য অঞ্চলে ঠিক ছিল। এর আগের বছর ঢাকায় গরুর সংকট দেখা দিয়েছিল। কারণ রাস্তায় তীব্র যানজট ছিল। ঢাকা পর্যন্ত গরু নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। আবার কোনো কোনো হাটে বেপারীদের আটকে জোর করে গরু ঢোকানো হয়। রাস্তায় প্রচণ্ড চাঁদাবাজি হয়। এতে বেপারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। সরকারকে এসব বিষয়ে আরও সচেতন থাকতে হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান বলেন, ‘যেখানে বন্যা হচ্ছে সেখানকার মানুষ পশু বিক্রি করে দিচ্ছে। আশাপাশের জেলার বেপারীরা তা কিনে নিচ্ছে। যেসব এলাকায় পানি উঠেছে ওই এলাকার মানুষের কোরবানির জন্য হয়ত পশুর কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে।’

মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। দেশে কোরবানিযোগ্য ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু রয়েছে। এ বছর ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। গত বছর ঈদে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মোট সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ এবং কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখের মতো। এদিকে, দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ কমেছে। আগে প্রতিবছর ২৪ থেকে ২৫ লাখ ভারতীয় গরু আসত। ২০১৮ সালে মাত্র ৯২ হাজার গরু ঢুকেছে। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে গবাদিপশুর মোট খামারের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদে ঢাকাসহ দেশের বড় হাটবাজারে পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পশু চিকিৎসকদের দল প্রস্তুত থাকবে। ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় মোট ২৪টি স্থায়ী-অস্থায়ী কোরবানির হাটে দুটি করে দল কাজ করবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৪টি এবং উত্তরের অধীনে মোট ১০টি হাটবাজার বসবে এবার।

যা বলছেন খামারিরা: ঢাকার খিলগাঁওয়ে গড়ে তোলা আজমান অ্যাগ্রোর মালিক জুবায়ের কামরুল বাঁধন। প্রথমে খাঁটি দুধ খাবেন বলে দুটি গাভী কেনেন। পরে সেই থেকে গড়ে ওঠে তার এই অ্যাগ্রো ফার্ম। প্রায় এক যুগ ধরে ব্যবসায় যুক্ত বাঁধন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুইটি গাভী দিয়ে শুরু করেছিলাম। সেই থেকে শুরু। বর্তমানে খামারে গাভী আছে ৮০টি। বকনা-বাছুর মিলিয়ে ১৫০। আর সোনারগাঁওয়ের খামারে কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ৫০টি। ঢাকার প্রায় সবাই এখন আমার খামারটি চেনে। এটিই বড় সফলতা।’

কামরুল বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও যে ভুষি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ১৫০০ টাকা। ওইদিক থেকে একটু চ্যালেঞ্জিং। বিভিন্ন প্রকার ঘাষের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়াই বর্তমানে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’

মুন্সিগঞ্জে ছোট্ট পরিসরে আনিসুর রহমান গড়ে তুলেছেন বাংলার গরু খামার। ২০১৪ সালে ৪ টি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে ১০টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।

সারাবাংলাকে আনিসুর বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম আগের চেয়ে বেশি। ফলে তেমন একটা লাভ হয় না। আর খরচ কমলে গরুর দামও কম হতো।’

ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাজী আনোয়ার হোসেন গড়ে তুলেছেন মনি ডেইরি ফার্ম। প্রায় ২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এ ফার্ম করেছেন। বর্তমানে তার ফার্মে ১০০টি গাভী ও কোরবানিযোগ্য ৮০টি গরু রয়েছে।

আনোয়ার বলেন, ‘গরু পালনে আগের থেকে খরচ বেশি বেড়েছে। তাই খরচের তুলনায় তেমন লাভ হয় না। কোনো কোনো সময় লোকসানও হচ্ছে।’

খবর সারাবাংলা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here