সেকান্দর আলম বাবর : বোয়ালখালীর খেটে খাওয়া মানুষের নিত্য রোজগারের সাথে সুদীর্ঘকাল থেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রায়খালী খাল। বোয়ালখালীর মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক কথন এ খালকে ঘিরে।

কর্ণফুলী থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম গোমদণ্ডী-শাকপুরা-আরাকান সড়কের পাশ ঘেঁষে এর বিস্তৃতি কালুরঘাট পর্যন্ত। উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ খালটি ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধেও পাকিস্তানিরা বাঙালিকে হত্যা করে ভাসিয়ে দিয়েছে এ খালে। কালের পরিক্রমায় এটি এখন দখলে দূষণে বিপর্যস্ত।

দখল ও দূষণে বোয়ালখালীর জনগুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী রায়খালী খালটি এখন বিপন্ন। একদিকে অবৈধ দখলের মহোৎসব, অপরদিকে এর দুইতীরে গড়ে উঠা কলকারখানার বিষাক্ত রঙিন পানি পড়ছে খালে। মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে মৎস্যসম্পদ, চাষাবাদ ও ক্ষেত-খামার। দিন-দিন বাড়ছে জলাবদ্ধতা, সেইসাথে মানুষের দুর্ভোগ ।

উপজেলায় ক্রমবর্ধমান অপরিকল্পিত শিল্প স্থাপন এ খালের জন্য মরণব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে শিল্পের বর্জ্য অন্যদিকে দখলবাজদের পাড় ভরাট করে করে দখলের মহোৎসব হারাচ্ছে নাব্যতা আর চিরাচরিত প্রবাহ।

বোয়ালখালী খালে ফেলা হচ্ছে পটিয়া অংশে থাকা আম্বিয়া গ্রুপের রং মিশ্রিত বর্জ্য। এ রং মিশ্রিত বর্জ্য বোয়ালখালী খাল হয়ে কর্ণফুলী নদী ও রায়খালী খালে ছড়িয়ে পড়ে। ছবি আলোকিত বোয়ালখালী

স্বচ্ছ পানির খালটিতে এখন প্রবাহিত হচ্ছে নানা বৈচিত্রময় রংয়ের দূষিত পানি। এখনকার জেলেরা আর ভরসা করছে না বাপ-দাদার দেখানো পথ জীবিকা অন্বেষণের এ খালটিকে ঘিরে। তারা করবেটা কি। সারাদিন জাল পেতে বসে থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে না প্রাকৃতিক সেই মাছ। শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্যে মৎস্যকুল একপ্রকার উধাও। খালের ধারে উদ্ভিদরাজিও যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। মাটির উর্বরতা হ্রাস পাওয়াই দু’পাড়ের জমিতে শস্য ও সবজি উৎপাদন আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দূষণ আর দখল নিত্য ঘটনা হয়েছে রায়খালী খালের জন্য। তাই বিপন্ন উপজেলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। একদিকে অবৈধ দখলের মহোৎসব, অপরদিকে এর দুই তীরে গড়ে উঠা কলকারখানার বিষাক্ত রঙিন পানি পড়ছে খালটিতে। এতে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে এখানকার মৎস্যসম্পদ, মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে চাষাবাদ ও ক্ষেত-খামার। দিন-দিন বাড়ছে জলাবদ্ধতা, সেইসাথে মানুষের দুর্ভোগ। এতকিছুর পরও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

সরেজমিন পরিদর্শনে কথা হয় স্থানীয় জেলেদের কয়েকজনের সাথে। তারা জানান, কারখানার দূষিত বর্জ্য ও পানি সরাসরি খালের মধ্যে ছাড়ার ফলে প্রতিনিয়তই দূষিত হচ্ছে খালের স্বচ্ছ পানি। ফলে কমেছে মৎস্যসম্পদ। আমরা পানি ব্যবহার করতে পারছি না। করলেও তাতে বিভিন্ন পীড়া দেখা দিচ্ছে।

দেখা গেছে, খালটির উভয় পাড়ে গড়ে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক শিল্প কারখানা। দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা। গড়ে উঠেছে বসতি। এ যাত্রা অব্যাহত রয়েছে দখলবাজদের হাত ধরেই। দখলবাজরা কিছু কিছু জায়গায় খালের মাঝপথে বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে বাঁধ ও দেয়াল দেয়ার ফলে জলাবদ্ধতায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে এবং বর্ষাকালে এলাকার বাড়ি-ঘর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এখন নিয়মিত হয়েছে। এতে ভারি বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। এ নিয়ে এলাকার কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খাল ব্যবহার কলে পণ্য আনা নেয়ার ব্যবসায়ীরা বলেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে একসময় খাল দিয়ে মালামাল আনা নেয়া করা হতো। এখন সংকীর্ণতার কারণে তা মৃতপ্রায়। নৌকা-সাম্পান চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে বর্তমানে।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক বলেন, খাল দখল এবং মিল কারখানার দুষিত বর্জ্য খালে ফেলা বন্ধ করতে ইতোপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। অবৈধ দখলদার সে যেই হোক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here