নিজস্ব প্রতিবেদক : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঢাক-ঢোলের আওয়াজে জমে উঠবে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার প্রতিটি মন্ডপ। ঢাকের বাদ্যে শারদ বন্দনায় মর্ত্যে আগমন ঘটবে দেবী দুর্গার। ঢাক-ঢোলের বাদ্য ছাড়া পূজার আয়োজন জমে না। পূজা সামনে রেখে তাই ব্যস্ত বাদ্যযন্ত্রের কারিগররা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় দিন দিন ঢোলের ব্যবহার কমে গেলেও পূজা উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়েছে ঢোল কারিগরদের। ঢাক-ঢোলের চামড়া পাল্টানো, চাক বদলানো নতুন বেল্ট লাগানোসহ বিভিন্ন কাজে দিন-রাত কাজ চলছে উপজেলার গোমদন্ডী এলাকার জয়ন্ত মৃদঙ্গ ভান্ডারে।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার মানুষ সহদেব মণি দাস এ প্রতিষ্ঠানের মালিক। চার বছর ধরে ঢাক-ঢোল মেরামত ও নতুন বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুত করে আসছেন তিনি।
সহদেব জানান, যুগ যুগ ধরে তারা এ ব্যবসা করছেন। বর্তমানে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের কারণে ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের প্রচলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির পেশায় অর্থের প্রাচুর্য না থাকায় মানুষ পেশা পরিবর্তন করে নতুন উপার্জনের পথ ধরেছে।
বর্তমান সময়ে আরতির আয়োজন হয় ডিজে প্রোগ্রাম দিয়ে। তাই ব্যবসাও আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। পূজা উপলক্ষে কিছুটা কাজের চাপ বাড়ে। পূজার আগেই অর্ডার নেওয়া সব বাদ্যযন্ত্র এক সঙ্গে ডেলিভারি দিতে হয়। তাই ব্যস্ততা একটু বেশি।
পুরোহিত সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘ঢাক-ঢোলের বাদ্যি ছাড়া পূজা-আরতি হয় না। শাস্ত্রে শক্তি পূজার আরতিতে ঢাক-ঢোলের ব্যবহার রয়েছে। ঢাক-ঢোলের তালে ধুনচি নৃত্যের আরতি ছাড়া দুর্গাপূজার আয়োজন ষোলকলা পূর্ণ হয় না।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত বাদন শিল্পী বিনয় বাঁশি জলদাসের ছেলে ঢোলবাদক বাবুল জলদাস বলেন, ‘পূজায় আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছে ঢাক-ঢোল, খোল, জোড়খাই, ডুগির ব্যবহার।’
কবিয়াল সরকার কমল দাশ বলেন, জোড়া কাঠিতে ঢাক কিংবা কাঁসরের উপর একটানা একটি কাঠির তিনটি শব্দ-সুরের যে মূর্ছনা সৃষ্টি করে তা বাঙালির একান্ত নিজের সুর। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার এখন বিলুপ্তির পথে।
বোয়ালখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস জানান, ‘ঢাক-ঢোলে পারদর্শী বাজানাদার এখন কমে এসেছে। ঢাক-ঢোল বাজানোর চর্চা এখন হয় না বললেই চলে। তবে ঢাক-ঢোলের বাজনায় যে হৃদয়ঙ্গম হয় তা অন্য কোনো কৃত্রিমতায় পাওয়া যায় না।’