বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি চসিক মেয়র প্রার্থী রেজাউলের প্রশ্ন!
সময়ের প্রয়োজনে সাহসিকতা নিয়ে রোগী সাধারনের সুচিকিৎসার জন্য বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছেন চসিক মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, যে কোন পরিস্থিতিতে একজন রোগীকে সেবা দেয়া হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সকল প্রকার দল, মত ও ভেদাভেদ এর উর্ধে উঠে রোগী সাধারনকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
ভয়ানক ব্যাথাতুর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনায় নীল হচ্ছি আমরা। করোনার ভয়াবহ সংক্রমনে চট্টগ্রাম আজ বিপর্যস্ত। প্রথমে এ ভাইরাস সংক্রমিতদের সনাক্ত করতে সীতাকুন্ডের বিআইটিডি ল্যাবই ছিল চট্টগ্রামের জন্য একমাত্র ল্যাব। আর চিকিৎসার জনও সীমিত আইসিউ সুবিধা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয় জরুরী ভিত্তিতে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল। সময়ের সাথে করোনা সংক্রমনের প্রাদূর্ভাব দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার পরিধি বৃদ্ধি করে স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা শুরুর পর মেডিকেল কলেজেও শুরু হয় করোনা পরীক্ষা। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়। আইসিউসহ কৃত্রিম শ্বাস যন্ত্র ও অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধার তুলনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে সরকারী এ হাসপাতালগুলো। এমতাবস্থায় আমাদের দাবী ও প্রত্যাশা ছিল বেসরকারী হাসপাতালগুলো তাদের নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই সাহসিকতার সাথে চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে আসবে রোগী সেবায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে জেনারেল হাসপাতালের অতিরিক্ত ইউনিট হিসাবে ব্যাবহারের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া চট্টগ্রামে বিদ্যমান অন্যান্য বেসরকারী হাসপাতালের আইসিউ গুলোকে করোনার চিকিৎসায় ব্যাবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশের মানুষকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা দিতে চিন্তাশীল পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বসভায় নন্দিত ও প্রসংশিত হয়েছেন। তিনি সারাদেশকে প্রতিদিনের ২৪ ঘন্টা গণভবনের সাথে সংযুক্ত করে রেখেছেন। নিয়মিত সবদিকের খবরা খবর রাখছেন, ব্রিফিং করছেন। চট্টগ্রামের জন্যও তিনি যে পরামর্শ ও নির্দেশনা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে দিয়েছেন তদনুযায়ী বেসরকারী হাসপাতাল সমূহ চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে এলে চট্টগ্রামের কোন লোক বিনা চিকিৎসায় মারা যেত না। কিন্তু দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করলাম, বেসরকারী এসব ক্লিনিকগুলো প্রত্যাশানুরূপ সাড়া দিচ্ছেনা। করোনা আক্রান্ত রোগী ছাড়াও হৃদরোগসহ অন্যান্য যে কোন রোগীর মধ্যে শ্বাসের সমস্যা হলে তাদেরকেও ভর্তি না করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা। ফলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করে আমাদের ছেড়ে গেছেন অনেক প্রিয়জন। পরিতাপের সাথে আমরা দেখি বাজারে প্রয়োজনীয় যে কোন ঔষধের দাম রাখা হচ্ছে কয়েকগুন বেশী। ৩০০০ টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে অসাধু ব্যাবসায়ীরা। এটাতো ঠিক না। মনে রাখতে হবে, নগর পুড়লে দেবালয়ও বাদ যায়না। সমস্ত হীন চিন্তা, লোভ ও স্বার্থপরতা পরিহার করে সবার কল্যানের জন্যই কার্য পরিচালনা করতে হবে। চিকিৎসা সেবা পাওয়া এটা কোন সুযোগ নয়, এটা জনগনের অধিকার।
হৃদয়বান ডাক্তার স্বাস্থ্যসেবীরা একদিকে সর্বোচ্চ সংক্রমন ঝুঁকি নিয়ে করোনার দুঃসময়ে রোগী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করছেন। সময়ের সাহসী ও মানবিক এসব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবী, টেকনিশিয়ানদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে, জনগনের একজন হয়েই অন্যান্যদের কাছে আমার জানতে চাওয়া-
আজ কেন বৈশ্বিক দুর্যোগের সময়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দিবে বেসরকারী হাসপাতালগুলো?
* কেন একজন প্রসূতিকে ব্যাথাজনিত জ্বর থাকার কারনে বিভিন্ন হাসপাতালের দুয়ারে ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে হয়?
* কেন হাসপাতালের দুয়ারের বাইরে বিনা চিকিৎসায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরতে হয় রোগী কে?
* কেন আইসিউ গুলো রোগীদের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে না?
* কেন করোনা আক্রান্ত অথবা অন্য কোন কারণে কারো কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের প্রয়োজনে আপনাদের হাসপাতালে পড়ে থাকা অক্সিজেন সুবিধা পাবে না?
* কেন পাবেনা ভ্যান্টিলেশন?
* কেন দুর্যোগকালে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা?
এসব প্রশ্ন রেখেই বলব, গণশক্তির চেয়ে কোন সিন্ডিকেটই অধিক শক্তিশালী হতে পারেনি কখনো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত বাঙালি জন্মলগ্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সংস্কৃতির অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার, ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে চিকিৎসার অধিকার সমুন্নত রাখতেও জনগন আন্দোলমুখী হতে পারে। আপনারা যদি মনে করেন কোভিড রোগী চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা আপনাদের নেই তবে সরকারের দায়িত্বশীল ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে তার সমাধান করতে পারেন। আর নন কোভিড রোগীরা শুধুমাত্র সন্দেহের কারনে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মারা যাবেন এটা খুবই অমানবিক। যে কোন ক্লিনিক হাসপাতালে সাধারন রোগীদের জন্য এক সেকেন্ড এর জন্যও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। তাই বিনয়ের সাথে বলব, আর এক মূহুর্তও সময় ক্ষেপন না করে সকল প্রকার রোগী সেবার দুয়ার সম্পূর্ণ উম্মুক্ত করুন। মানবতাকে সব কিছুর উর্ধে তুলে ধরুন।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা। সকলকে ধন্যবাদ।