মঙ্গলবার সকালে রিও দে জেনেইরোর নিলতন সান্তোস স্টেডিয়ামে কোপার প্রথম সেমিফাইনালে ১-০ গোলে জিতেছে সেলেসাওরা। নেইমারের পাস থেকে জয়সূচক গোলটি করেন লুকাস পাকেতা।
কোয়ার্টার ফাইনালে ১০ জন নিয়েও চিলিকে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল কোপার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ওই ম্যাচেও পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিওঁর মিডফিল্ডার পাকেতা।
বল দখলে এগিয়ে থাকা ব্রাজিল আক্রমণেও দেখায় প্রাধান্য। গোলমুখে তাদের নেওয়া ১৫ শটের আটটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, পেরু গোলমুখে সাতটি শট নিয়ে মাত্র দুইটি রাখতে পারে লক্ষ্যে।
আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দেওয়া শক্তিশালী ব্রাজিলের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে পেরু। কিন্তু স্বাগতিকদের রক্ষণে ফাটল ধরানো সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। ফলে আরও একবার হার স্বীকার করতে হয় তাদের।
সামনে চেনা প্রতিপক্ষ আর মাঠে ফেভারিট ব্রাজিল। যা হওয়ার তাই হলো। কোপার প্রথম সেমিফাইনালে পুরো খেলায় নেইমার-পাকুয়েতারা নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখে পেরুকে হারালো ১-০ গোলে। এই জয়ে কোপা আমেরিকায় টানা দ্বিতীয় ফাইনালে উঠলো ব্রাজিল।
নেইমার-পাকুয়েতা জাদুতে এদিন প্রথমার্ধেই এগিয়ে যায় ব্রাজিল। রিও ডি জেনেইরোর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় শুরু হওয়া ম্যাচে খেলার শুরু থেকেই দারুণ আক্রমণে পেরুর রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে সেলেসাওরা। অবশেষে ৩৫ মিনিটের মাথায় আসে সাফল্য।
ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারের সহায়তায় পেরুর জালে বল জড়ান পাকুয়েতা। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে পেরুর দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বাম দিক থেকে ডি বক্সে ক্রস দেন নেইমার। সেই ক্রস থেকে দারুণ গোলে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন পাকুয়েতা।
এই ম্যাচে ব্রাজিলের আক্রমণ বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে ব্রাজিলের সোনালী দিনগুলোর কথা। কোপার এবারের আসরের সবচেয়ে ফেভারিট দল ব্রাজিলকে এদিন ম্যাচের ৮ মিনিটেই এগিয়ে দিতে পারতেন সেলেসাও যুবরাজ নেইমার। পাকুয়েতার পা থেকে আসা ক্রস ডি বক্সে থাকা রিচার্লিসনের পা হয়ে আসে নেইমারের কাছে। কিন্তু সেলেসাও তারকা শট নেন একেবারেই ভুল জায়গায়।
আবারও ১৯ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় ব্রাজিল। তবে এবার পেরুর ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন গোলরক্ষক গ্যালেস। ক্যাসিমেরোর পাস থেকে পাকুয়েতা-নেইমার হয়ে রিচার্লিসনের কাছে আসা বল রুখে দেন গ্যালেস।
প্রথমার্ধের ওই গোলে ১-০ ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল। ফিরে এসে পেরু কিছুটা চেষ্টা করে ম্যাচে ফেরার। তবে তিতের শেখনো মন্ত্রে এদিন ব্রাজিলের রক্ষণ ছিল জমাট। একেবারেই চিড় ধরাতে পারেননি পেরুর খেলোয়াড়েরা।
পুরো ম্যাচে ৫৫ শতাংশ বল ছিল ব্রাজিলের দখলে। পেরুকে বেশিরভাগ সময় ব্রাজিলের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। ব্রাজিলের গোলমুখে নেওয়া ৮ শটের বিপরীতে পেরু নিতে পেরেছে মাত্র ২টি শট।
বিরতির পর ৪৯ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে এগিয়ে যেতে পারতো পেরু। লাপাদুলার নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে সামলান ব্রাজিলের গোলকিপার এডারসন। ব্রাজিলের আজকের জয়ে নেইমারদের মতো এদিন দারুণ ভূমিকা রেখেছেন এডারসন। ম্যাচের ৬১ মিনিটে গার্সিয়ার শট সামলে দেন এডারসন। তবে পুরোপুরি আয়ত্বে নিতে পারেননি। ভলি দিয়ে রুখে দেওয়া বল পেরুর কাউকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে ক্লিয়ার করেন মার্কুইনহস।
শেষপর্যন্ত ম্যাচে আর কোনো গোল না হওয়ায় ওই এক গোলে এগিয়ে থেকেই ফাইনালের মঞ্চে পা রাখে সেলেসাও বাহিনী।
একেবারে ব্রাজিলিয়ান ধাঁচে, রাজার বেশে কোপার ফাইনালে গেলো ব্রাজিল। বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত এবার অপেক্ষায় দ্বিতীয় সেমিতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয়ের। সবার মনে প্রশ্ন হবে কি স্বপ্নের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল?
কোপার গতবারের ফাইনালে নিজেদের মাঠে পেরুকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। এবারের আসরের গ্রুপ পর্বেও দেখা হয়েছিল দুই দলের। ওই লড়াইয়েও পাত্তা পায়নি পেরুভিয়ানরা। ৪-০ গোলে তাদেরকে বিধ্বস্ত করেছিলেন নেইমার-থিয়াগো সিলভারা।
আগামী ১১ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে আসরের ফাইনাল। সেদিন আর্জেন্টিনা অথবা কলম্বিয়াকে মোকাবিলা করবে ব্রাজিল। এই দুই দল আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পরস্পরের মুখোমুখি হবে।
আরো পড়ুন
কোপা আমেরিকার ইতিহাস