একদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে কারচুপির শঙ্কা থাকলেও বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ানের আশা, ভোটাররাই সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ধানের শীষ প্রতীককে জয়ী করে আনবেন। শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে একটি রেস্টুরেন্টে নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ান এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সেটা নিয়ে আমাদের মনে শংকা আছে। জনগণের মনেও শংকা আছে। তারপরও অতীতের অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে বলতে পারি- ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাবার ইচ্ছা আছে। আশা করি সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবে এবং আমরা সফল হব। কারণ, আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলা-বাধার শিকার হয়েছি। কিন্তু জনগণের ভালোবাসায় সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আমি এ পর্যন্ত এসেছি। আমি বিশ্বাস করি- ১৩ তারিখ সব চক্রান্ত–ষড়যন্ত্র উপেক্ষা জনগণের বিজয় নিশ্চিত করে আমরা ঘরে ফিরতে পারব।’
নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো এবং মামলা করে হয়রানির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সিইসিকে বলেছিলাম-আপনি চট্টগ্রাম ছাড়ার পরে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে হয়ত বিভিন্ন থানায় মামলা হতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে সেই কথার প্রতিফলন আমরা পেয়েছি। গত পরশুদিন বোয়ালখালীতে নৌকার একটি ক্যাম্পে সাজানো আগুন দিয়ে একটি মোটরসাইকেল তারা পুড়িয়ে দেয়। এরপর বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আবু, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খানসহ যারা আমার পক্ষে নির্বাচনে মূল কাজ করছে, তাদের আসামি করে পুলিশ একটি মামলা করেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের দিন এলাকায় না থাকার জন্য এবং ভোটের কাজে অংশগ্রহণ না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’
‘আমি প্রশাসনকে বলতে চাই- আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন। জনগণের আকাঙ্খার বিরুদ্ধে আপনারা যাবেন না। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে, তারা ভোট দিতে পারব কি না। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি,নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। প্রশাসন বলেছে- জনগণের ভোট দিতে পারবে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা প্রশাসনের আশ্বাসে আস্থা রাখতে চাই’, বলেন সুফিয়ান।
ভোটকেন্দ্রে কোথাও কোনো অনিয়ম, অসঙ্গতি, কারচুপি এবং ভোটদানে বাধা দেওয়ার ঘটনা দেখলে সাথে সাথে প্রচারের মাধ্যমে জাতিকে অবহিত করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আবু সুফিয়ান।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদের ‘একবছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কাজ দৃশ্যমান করার’ প্রতিশ্রুতি নিয়েও কথা বলেন আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। কালুরঘাট ব্রিজ বোয়ালখালীবাসীর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য একটা মরণযন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ কালুরঘাট ব্রিজের দুই পাশে আটকে থাকে। তবে কালুরঘাট ব্রিজকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার জন্য মূলা হিসেবে ব্যবহার না করে চট্টগ্রামের স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে এই ব্রিজ হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
নৌকার প্রার্থীর মতো নির্বাচিত হলে বোয়ালখালীকে সোনায় মুড়িয়ে দেব, এমন প্রতিশ্রুতি আমি দিতে চাই না, বলেন আবু সুফিয়ান। ‘তারপরও মানুষের কিছু প্রত্যাশা থাকে একজন সংসদ সদস্যের কাছে। আমি নির্বাচিত হলে আমার এলাকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চুরি-ডাকাতি, মাদক থেকে আমার এলাকাকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করব। সকল মত-পথ, রাজনৈতিক দলের মানুষ যাতে সুন্দর পরিবেশে, মর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থানে থাকতে পারে সেই চেষ্টা করব। কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ যাতে না থাকে, একটি সুন্দর সমাজ যাতে বির্নিমাণ করতে পারি, সেই প্রত্যাশা আমার আছে’, বলেন বিএনপিনেতা।
ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘একজন রাজপথ থেকে উঠে আসা কর্মী হিসেবে আমার কমিটমেন্ট হচ্ছে জনগণের প্রতি। রাজনীতিতে এসেছি দেশের জন্য, জনগণের জন্য কিছু করার কমিটমেন্ট নিয়ে। এতটুকু বলতে পারি, যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি, লাভ এবং লোভ আমাকে কাবু করতে পারবে না। এই আবু সুফিয়ানকে যেভাবে রাজনীতির শুরু থেকে মানুষ দেখে এসেছে, সংসদ সদস্য হতে পারলেও আমি সেই আবু সুফিয়ানই থাকব।’
আবু সুফিয়ানকে বহিরাগত হিসেবে নৌকার প্রার্থীর অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে বহিরাগত বলা হয়েছে। কিন্তু আমি চান্দগাঁও এলাকার ভোটার এবং আমৃত্যু থাকব। নৌকার প্রার্থী তো এই আসনের ভোটারই নন, তিনি তো ভোটই দিতে পারবেন না বলে পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমরা সবসময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। এখনও সেই লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। ভোটারদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এটা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে যাতে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রশাসনকে চোখ-কান খোলা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি, তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আমার আসনসহ বাংলাদেশের মোট ৬টি আসনে ইভিএমে নিবাচন হয়েছে। প্রতিটি আসনে আমিসহ আমাদের সব প্রার্থীকে হারানো হয়েছে। সেজন্য ইভিএম এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই শঙ্কার কথা আমরা কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছিলাম। জবাবে তিনি একটি হাস্যকর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- আমাদের মেশিন নাকি ইন্ডিয়ার চেয়ে উন্নততর। আমরা বুঝতে পারছি না, এই নির্বাচন কমিশন কি আদৌ আমাদের কথা বুঝতে পারছে না, নাকি আমরা ওনাদের কথা বুঝতে পারছি না। আমরা এমনও শুনেছিলাম যে, প্রিজাইডিং অফিসার নাকি ২৫ শতাংশ ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন। এসব বিষয় আমাদের কাছে পরিস্কার করা হয়নি। এজন্য এই নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে কি না, সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আশঙ্কা আছে। জনগণের মধ্যেও ইভিএম নিয়ে আতঙ্ক আছে।’
সংবাদ সম্মেলনেম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমসহ চট্টগ্রামের বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।