ইসমাইল জসিম
করোনা কোন পাপ নয়, আর করোনা রোগী কোন পাপী নন। এরা আমার আপনার ভাই বোন, পিতা মাতা,কিম্বা স্ত্রী সন্তান। তারা পরিস্থিতির স্বীকার।
আর করোনা মানেই মৃত্যু তা নয়, সঠিক পরিচর্যা ও ট্রিটমেন্ট পেলেই এরা সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারে আপনার পাশেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে, করোনা আশংকা বা সংক্রমিত হলেই তার যেন মৃত্যু অবধারিত হয় তারই সর্বপ্রকার ব্যবস্থাই করছেন, আপনার পাশের প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন, স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা হয়েছে বলে একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে সমাজ থেকে বের করে দিয়ে তাকে রোদ বৃষ্টির মধ্যেই পুকুর পাড়ে নির্বাসন দিয়েছে, করোনা রোগীর সেবা করছে বলে তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে বাড়িওয়ালা একজন ডাক্তারের করোনা হয়েছে বলে তার বাসায় ঢিল মারছে প্রতিবেশিরা, করোনা হয়েছে বলে রোগীর ডাকে সাড়া দিচ্ছে না তার আত্মীয় স্বজন, করোনায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বলে পিতার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পুত্র। দাপন কাপন দিতেও বের হচ্ছে না আত্মীয় স্বজন। সামান্য জ্বর কাশি বলে তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে তার ডাক্তার, রোগীর শ্বাসকষ্ট থাকলে তো কথাই নেই। আরে ভাই এখন মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জ্বর , কাশি, শ্বাসকষ্ট হতেই পারে। ডাক্তারের শরনাপন্ন হলে তাদের সঠিক গাইড দিন। যেন ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে পারে। ভর্তিযোগ্য হলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা দিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোন ডাক্তার বসছে না তার চেম্বারে, কল দিলেও কোন সাড়া দিচ্ছে না, অনেক রোগী আছেন প্রতি মাসেই তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়, পরীক্ষা করাতে হয়, কিন্তু এসব রোগী আজ নিরুপায়। জরুরী কোন চিকিৎসা নিতে হলে তার আত্বীয় স্বজন কাঁধে করে, রিক্সা করে, কিম্বা এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে জীবিত প্রিয়জনের লাশ নিয়ে ঘরে ফিরছেন। কোভিড-১৯ এর সামান্যতম কোন লক্ষণ থাকলেই তাকে নন কোভিড- ১৯ হাসপাতালগুলো প্রবেশেরও অনুমতি দিচ্ছে না। কোভিড-১৯ নেগেটিভ হলে তাকে ভর্তি করছে না কোভিড ১৯ হাসপাতালগুলো। তাহলে করোনা নেগেটিভ কি তার অপরাধ? নাকি তার অসুস্থ হওয়াটাই অপরাধ।
এ তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমরা কম বেশি সবাই অবগত হয়েছি এ করোনা বিষয়ে। এ রোগের এখনো পর্যন্ত কোন অষুধ আবিষ্কৃত হয় নি, গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপরেও কি থেমে আছে চিকিৎসা সেবা? তাবত বিশ্বের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে এসব রোগীদের সুস্থ করে তুলতে। একজন রোগীর সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা প্রয়োজন তা হচ্ছে সেবা। একমাত্র সঠিক সেবাই সুস্থ করে তুলতে পারে করোনা রোগীসহ সকল রোগীকে। যার প্রমাণ আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশ রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। আজকে সারা বিশ্বের একটিই স্লোগান ” Stay Home, Stay Save” এ স্লোগান আমাদের মানতে হবে।ঘরে থাকুন নিরাপদ থাকুন। নিজেকে বাঁচতে হবে, অন্যকেও বাঁচাতে হবে। আর এই ঘরে থাকাটা কি আমরা কিম্বা সরকার নিশ্চিত করতে পারছি। লকডাউন, কোয়ান্টেইন, স্টে হোম, সামাজিক দূরত্ব এসব কঠিন কঠিন শব্দের সাথে আমরা কম বেশি পরিচিত হয়ে গেছি। কিন্তু সরকার আর ব্যবসায়িকদের সমন্বয়হীনতার কারণে আমরা আজ ঘরেও কতটুকু নিরাপদ?
সব কথার শেষ কথা হচ্ছে। আমাদের কে সচেতন হতে হবে , নিয়মমাফিক চলতে হবে, মানবিক হতে হবে। নিজেকে বাঁচানোর অজুহাতে আমরা যেন অমানুষ হয়ে না যায়, মানবতাকে বিসর্জন না দেই। আমরা সামাজিক দূরত্ব চাই না, চাই নিরাপদ দূরত্ব।