মনজুর আলম : বেশ কয়েকদিন ধরে ফলাও করে সর্বত্র প্রচার হচ্ছিল এবারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কালুরঘাট সেতুর একটি রফা হবে। স্থানীয় দায়িত্বশীল দুই এমপির মুখ থেকে সরাসরি এ কথা শুনে আশায় বুক বেঁধেছিল এলাকার মানুষ। সেতু নিয়ে তারা হয়ত এবার সুখবর পাবে। অথচ গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এ সভা। কিন্তু সেখানে সেতু নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি শুনে হতাশ দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েক লাখ মানুষ।
এ বিষয়ে জানতে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অপর সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে এখন বাসায় আছি। এ নিয়ে পরে কথা বলবো। অথচ গত ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেছেন, কালুরঘাট সেতুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে, এবারের একনেক সভায় সেতুর ডিজাইন নিয়ে আমাদেরও উপস্থিত থাকতে বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে পরেরদিন সেতু নির্মাণের দাবিতে উপজেলা জাসদ আয়োজিত বোয়ালখালীর এটি জনসভায় এমপি মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেছেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে টেলিফোন করা হয়েছে আমাকে দেখা করার জন্য। আমি আমাদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আমার শরীরের অবস্থা জানতে চেয়ে শারীরিক যত্ন নিতে বললে, মোশাররফ ভাই বলেন, নেত্রী ওনার শরীরের কি যত্ন নেবেন, ওনার মাথা তো আউট হয়ে গেছে, উনি ঘুমানোর সময় কালুরঘাট সেতু, জাগন্ত অবস্থায়ও কালুরঘাট সেতু নিয়ে চিন্তা করেন। এখন নতুন কথা শুরু করছে সেতু না হলে নাকি পদত্যাগ করবেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সামনে থাকা একটি টেবিলে পরপর তিনবার টেবিল চাপড়িয়ে বলেন, আমিতো ওনাকে বলেছি, আমি সেতু করবোই- করব। তিনি আমাকে রেল কাম সড়ক সেতু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, সেতু না হলে আমার এলাকার মানুষের সামনে আমি কি মুখ নিয়ে যাব। আমার মৃত মাকে গালি শুনানোর জন্য আমার এমপিগিরি করার দরকার নেই। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি আর মোশাররফ সাহেব এলাকায় বলে দেন, সেতু হবে। আগামী মিটিংয়ে এর ডিজাইন নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবদুল মোমিন বলেন, কতই দুর্ভাগা আমরা ! মঙ্গলবারের একনেক সভায়ও কালুরঘাট সড়ক ও রেল সেতু নেই। অথচ ব্যর্থতা ঢাকতে গত কিছু দিন ধরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই ভুল তথ্য সরবরাহ করে সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনকে বিভ্রান্তির মধ্যে রেখেছিল। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম দুই এমপির কথার বাস্তবয়ান হবে। কিন্তু একনেক সভায় আমাদের প্রাণের দাবিটি উপেক্ষিত থেকেই গেল! এটি বোয়ালখালী ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য একটি মর্মান্তিক পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই অবিলম্বে এ নিয়ে আবারো আমাদের মাঠে নামতে হবে। না হলে প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু সহজে হবে না।-দৈনিক আজাদী