মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী- জন্ম: ২৬ অক্টোবর, ১৯১৯ – মৃত্যু: ২৭ জুলাই, ১৯৮০) তেহরানে জন্মগ্রহণকারী ইরানের শেষ রাজা ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে ইসলামিক বিপ্লবের ফলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি শাহানশাহ (সম্রাট বা রাজাদের রাজা) পদবী ধারণ করেন। এছাড়াও, আরিয়ামের, বোজর্গ আর্তেশতারান পদবীও তিনি লাভ করেন। ইরান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় ও পাহলভী পরিবারের সর্বশেষ সম্রাট ছিলেন তিনি।
প্রারম্ভিক জীবন
রেজা পাহলভী ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী তাজ উল-মূলক দম্পতির সন্তান তিনি। অধিকতর পড়াশোনার লক্ষ্যে ১১ বছর বয়সে ইনস্টিটিউট লে রোজে নামের একটি সুইস বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। চার বছর অধ্যয়নের পর ১৯৩৬ সালে হাইস্কুলের ডিপ্লোমা নিয়ে ইরানে ফিরে আসেন। এরপর তেহরানের স্থানীয় সামরিক একাডেমিতে নিবন্ধিত হন ও ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ তারিখে তিনি ক্ষমতায় আসেন। এ সময় অ্যাংলো-সোভিয়েত বাহিনী তাঁর বাবা রেজা শাহকে জোরপূর্বক ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করায়। তাঁর আমলে সংক্ষিপ্তকালের জন্য ইরানের তৈলশিল্প জাতীয়করণ করা হয়। শাসক হিসেবে অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক পুণর্গঠনকে ঘিরে শ্বেত অভ্যুত্থানের প্রবর্তন করেন। এছাড়াও ইরানকে বৈশ্বিক শক্তিতে রূপান্তর ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিল্প-কারখানার আধুনিকীকরণ এবং মহিলাদের ভোটাধিকার মঞ্জুর করেন।
মূল্যায়ণ
ধর্ম নিরপেক্ষবাদী মুসলিম হিসেবে তিনি শিয়াদের সমর্থন হারানোসহ শ্রমিক শ্রেণী, বাজারী নামে পরিচিত ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক বজায়, দূর্নীতিতে শাসকগোষ্ঠীর জড়ানোয় তাঁর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এছাড়াও, বিভিন্ন বিতর্কিত নীতি গ্রহণ, সমাজতান্ত্রিক দল তুদেহ পার্টি নিষিদ্ধকরণ ও গোয়েন্দা সংস্থা সাভাককে রাজনীতিতে জড়ান। রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ১৯৭৮ সালে ২,২০০ রাজনৈতিক কর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ইসলামিক অভ্যুত্থান ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মদদপুষ্ট সরকারকে ঘিরে ইসলামপন্থীদের সাথে তাঁর মতভেদ ঘটতে থাকে ও কম্যুনিস্টদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে ১৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে বিপ্লব সংঘটিত হয় ও তাঁকে ইরান ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরফলে ইরানীয় রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকভাবে বিলোপ ঘটে ও মোল্লা খোমেনি’রনেতৃত্বে ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়।
দেহাবসান
ইরানে ফিরে আসলে তিনি আসন্ন মৃত্যুদণ্ডে সাব্যস্ত হবেন; তাই তিনি মিশরে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। কায়রোতে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করেন। এ সময় পাহলভীর পরিবার, আনোয়ার সাদাত, রিচার্ড নিক্সন ও গ্রীসের দ্বিতীয় কনস্ট্যানটাইন উপস্থিত ছিলেন।