পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর
পবিত্র রমজানের শেষে ঈদ-উল-ফিতর এসেছে আনন্দের বার্তা নিয়ে। তবে এবারের ঈদটি অন্যবারের মতো নয়; বরং অনেকটাই ব্যতিক্রমধর্মী। বিশেষ করে করোনা মহামারীর কবলে পড়ে ঈদ এবার যেন হয়ে পড়েছে অনেকটা নিরুত্তাপ, উত্তেজনা ও আড়ম্বরহীন। ঈদে এবার কেনাকাটার হৈ-হল্লা ও জৌলুস নেই বললেই চলে। দেশে দীর্ঘদিন লকডাউনজনিত কারণে প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকায় জনজীবনসহ অর্থনীতির চাকা হয়ে পড়েছে প্রায় স্থবির। দৈনন্দিন আয়-উপার্জনহীন সাধারণ মানুষের এবার বেঁচে থাকাই হয়ে উঠেছে দুঃসাধ্য। সরকারের নগদ প্রণোদনা, ত্রাণ সহায়তা, দশ টাকা কেজি দরের চাল, টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য, সর্বোপরি বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে অভাব ও হাহাকার নেই বটে; তবে কোন আড়ম্বর ও বিলাসিতা নেই বললেই চলে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনে এবারে মসজিদের বাইরে খোলা ময়দানে কোথাও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মসজিদগুলোতেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি ও সুক্ষার নিয়মকানুন। পরস্পর কোলাকুলি, করমর্দন করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে। তবু তো ঈদ বলে কথা। ঘটা করে উৎসব অনুষ্ঠান না হোক, ঈদ-উল-ফিতর ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্যই বয়ে আনে সুনির্মল এক আনন্দবার্তা- ঈদ মোবারক।
প্রতিবছরের মতো আবারও এসেছে ঈদ-উল-ফিতর, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দ-উৎসব। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এসেছে খুশির এই দিনটি। ঘরে ঘরে, জনে জনে আনন্দ ও খুশির বার্তা বয়ে এনেছে এই ঈদ। দিনটি ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলকে এক কাতারে শামিল করার চেতনায় উজ্জীবিত করে। কল্যাণের পথে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করে। ঈদের আগে রোজার একটি মাস সংযম ও আত্মত্যাগের মাস। রোজার কঠোর অনুশীলন ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি এবং গরিব-দুঃখী-অনাহারিদের কষ্ট অনুভবের প্রেরণা দেয়। এ সময় গরিব-দুস্থদের ঈদের আনন্দে শরিক করার জন্য রয়েছে ফিতরা ও যাকাতের ব্যবস্থা, যা বিত্তবান প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য প্রদেয়। ঈদের নামাজের ভেতর দিয়ে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করা হয়। নতুন পোশাক পরে সকালে ঈদগাহে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচী। ধনী-দরিদ্র সবাই এই দিন মেতে ওঠে আনন্দে-উৎসবে।
ঈদ-উল-ফিতরের মূল তাৎপর্য বিভেদমুক্ত জীবনের উপলব্ধি। ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-পঙ্কিলতা মানুষের জীবনে কমবেশি আসে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়। কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ চান মানুষ পাপ ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে সৎপথে ফিরে আসুক। সম্প্রীতির আনন্দধারায় সিক্ত হয়ে উন্নত জীবন লাভ করুক। ঈদ-উল-ফিতর মানুষকে এই শিক্ষা দেয়। দিবসটির উৎসব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে সমাজের ধনী-দরিদ্রের সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে। শ্রেণীবৈষম্য বিসর্জনের মধ্য দিয়েই এ আনন্দ সার্থক হয়ে ওঠে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারও ঈদ উদযাপিত হবে বলে আশা করা যায়।
করোনায় নানা ভোগান্তি আর কষ্টের পরও আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার অনুভূতিই আলাদা। ঈদ বিভেদ-বৈষম্যহীন, ভ্রাতৃচেতনায় ঋদ্ধ এক নির্মল আনন্দ-উৎসব-বিনোদনের দিন। এই উৎসবের দিনে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে আনন্দ। রমজান আমাদের চিত্তশুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে সেই শিক্ষার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তি ও শ্রেয়বোধের চেতনায় স্থিত হতে হবে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব সকল প্রকার হিংসা, হানাহানিমুক্ত হোক। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক। সকল শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন সুদৃঢ় হোক, আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি দিন- এই প্রত্যাশায় ঈদ মোবারক, সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। সারাদেশে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনায় মনোযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে বাজার এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকায় জনজীবনে বিরাজ করছে স্বস্তি। এসবই ঈদের আনন্দে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।