অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ৫০ জনের তালিকা চূড়ান্ত। শুটিংয়ের দিনক্ষণও ঠিকঠাক। শিল্পীদের কেউ প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু বায়োপিক–সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ মার্চ শুটিং শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে শুটিং শুরু নিয়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসানও ঘটতে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করোনার প্রভাবে সবকিছু পাল্টে গেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী চিত্র বড় পর্দায় আসার আগেই প্রথম দিনের শুটিং কিছুদিন স্থগিত রাখতে হয়েছে। নতুন দিন–তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানালেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন।

দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীচিত্র আসবে বড় পর্দায়। একজন বড় পরিচালকের হাতে নির্মিত হবে একজন বড় নেতার জীবন নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। মার্চের প্রথম দিন এই জীবনীচিত্রের জন্য নির্বাচিত অভিনয়শিল্পীদের একটি প্রাথমিক তালিকার আংশিক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। সেই তালিকায় আছেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের একঝাঁক প্রিয় মুখ।

কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের খবর ও সংশ্লিষ্ট অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছিল অনেক তারকা শিল্পীর নাম, যাঁরা কিনা অভিনয় করতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনীচিত্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছিল এ সিনেমার জন্য অডিশন দেওয়া অভিনয়শিল্পীদের চরিত্রের ছবি। অবশেষে সেসব জল্পনা-কল্পনা আংশিক সত্য হয়ে এল। বিএফডিসি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫০ জন অভিনয়শিল্পীর নামের তালিকায় উঠে এসেছে ফেরদৌস, তিশা, আরেফিন শুভ, নুসরাত ফারিয়াদের নাম।

তালিকায় দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করবেন আরিফিন শুভ এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবেলার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া ও বড় বেলার চরিত্রে জান্নাতুল সুমাইয়া। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে ফেরদৌস আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করবেন নুসরাত ইমরোজ তিশা।

অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোয় দেখা যাবে খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), জান্নাতুল সুমাইয়া (বড় শেখ হাসিনা), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা দীঘি (ছোট রেনু), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া) ও মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান)।

বঙ্গবন্ধুর জীবনীচিত্রের নতুন শুটিংয়ের তারিখ কবে জানতে চাইলে নুজহাত ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিচালক এখনো নতুন দিনক্ষণের ব্যাপারে কিছু জানাননি। এটা একান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত। আমাকে জানানো হয়েছে, প্রথম দিন যে শুটিং শুরুর কথা ছিল, তা আপতত হচ্ছে না।’

এদিকে বঙ্গবন্ধুর মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া দিলারা জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানি না ঠিকভাবে করতে পারব কি না। তবে ইতিহাসের অংশ হওয়ার এই সুযোগ পেয়ে আমি খুবই সম্মানিত, আনন্দিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছবিটা মন দিয়ে দেখবেন। এত বড় পরিচালক, নিশ্চয়ই আমাকে দিয়ে চরিত্রটা বের করে নেবেন। বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” পড়েছি। তাঁর বাবা-মায়ের সাক্ষাৎকার দেখেছি। আমি অপেক্ষা করছি কাজটা করার জন্য।’

তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে অভিনয় করতে যাওয়া ফেরদৌস এটিকে ইতিহাসের অংশ হওয়া মনে করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক বাংলাদেশের একটি ইতিহাস হতে যাচ্ছে। এই ছবিতে কাজ করার সুযোগ পাওয়া ইতিহাসের অংশ হওয়ার মতো। ছবিটিতে কাজ করার ব্যাপারে আমাকে যতবার ডেকেছে কর্তৃপক্ষ, আমি দেখা করেছি, অডিশন দিয়েছি। তবে এত বড় চরিত্র পাব, প্রথমে ভাবিনি। আমি যখন শুনলাম তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছি, অসম্ভব খুশি হয়েছি। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর নামটিও জড়িয়ে আছে। ভেবেছিলাম, শুটিংয়ের আগে চরিত্রটি নিয়ে আবার আলোচনায় বসব। কিন্তু শুনলাম, শুটিং আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।’

এদিকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া জান্নাতুল সুমাইয়া (হিমি) বলেন, ‘কখনোই ভাবিনি এমন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাব। আমি খুবই ভাগ্যবান, শেখ রাসেল জাতীয় প্রতিযোগিতার কারণে দুবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি। জাতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় দুবার গান-নাচ-আবৃত্তিতে প্রথম হয়েছিলাম। ৯ বছর আগে যাঁর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলাম, সেই শেখ হাসিনা ম্যামের চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছি! তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে। ভেবেছিলাম, অডিশন দিয়েছি, কোনো একটা চরিত্র হয়তো পাব। তাই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাবতেই অন্য রকম লাগছে, আমি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি।’
প্রস্তুতির বিষয়ে হিমি জানান, এখনো চিত্রনাট্য তিনি হাতে পাননি। শুধু সরকারি ঘোষণার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, কেউই এখনো চিত্রনাট্য হাতে পায়নি। সবকিছু পরিষ্কারভাবে জানতে পারলে, চরিত্রে কোন বয়সটা দেখানো হয়েছে, তা বলতে পারতাম। যদিও জানি আমার অংশটা বড় শেখ হাসিনার। অলরেডি ইন্টারনেট ঘেঁটে শেখ হাসিনা ম্যামের সেই সময়কার ছবি ও ভিডিও দেখে তাঁর সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিচালকের সঙ্গে এটা নিয়ে যদি আরও বসতে পারি, তাহলে আরও অনেক বিষয় পরিষ্কার হবে। প্রস্তুতিও ভালো হবে।’

বায়োপিক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণাধীন এই চলচ্চিত্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এই বাজেটের ৬০ ভাগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ৪০ ভাগ ভারত সরকার। বায়োপিকটি নির্মাণে শ্যাম বেনেগালের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। বায়োপিকের চিত্রনাট্য করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়েদি। শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব পেয়েছেন নীতিশ রায়। কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে আছেন শ্যাম রাওয়াত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫০ জন শিল্পীর মধ্যে ১৩ জনই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া। বিএফডিসি থেকে প্রকাশিত শিল্পীদের তালিকা ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এ তথ্য। নামভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়া আরিফিন শুভ ২০১৯ সালে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার পান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন গাজী রাকায়েত, রাইসুল ইসলাম আসাদ, দিলারা জামান, শহীদুল আলম সাচ্চু, শতাব্দী ওয়াদুদ, তৌকীর আহমেদ, ফেরদৌস, রোকেয়া প্রাচী, মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও প্রার্থনা দীঘি।

শুটিং শেষে ছবিটি কবে নাগাদ দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে, মুক্তির দিন কি কিছু চূড়ান্ত করেছেন—এসব প্রশ্নের জবাবে শ্যাম বেনেগাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। আগামী বছরের মার্চে তাঁর জন্মবার্ষিকীর আশপাশে ছবিটা রিলিজ করার পরিকল্পনা আছে। আর এটাই এখন আমার লক্ষ্য।’
ছবিতে কি বঙ্গবন্ধুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো অধ্যায় তুলে ধরা হবে নাকি সমগ্র জীবনটা দেখতে পাবেন দর্শকেরা? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্যাম বেনেগাল বলেন, ‘তাঁর সমগ্র জীবনী নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি বায়োপিক নির্মাণ করতে যাচ্ছি।’

‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের অভিনয়শিল্পী বাছাইয়ের আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিএফডিসিতে কয়েক দিন ধরে অডিশন চলতে থাকে। শুরুতে এ বছরের ৬ থেকে ১০ জানুয়ারি ঢাকার বাংলাদেশ টেলিভিশন মিলনায়তনে টানা পাঁচ দিন ধরে অডিশন চলে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here