দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু:
চারপাশে থৈ থৈ পানি। মাঝে একখণ্ড সবুজ ক্ষেতে সবজির সমারোহ। দিন-রাত পরিশ্রম করে এই সবজির বাগান গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কৃষকরা। কর্ণফুলী নদীর মাঝে জেগে থাকা এই চরের নাম নাজির চর। ২৪০ একর আয়তনের এ নাজির চরে সারা বছরই চাষ হয় সবজির।

গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) নৌকা যোগে নাজির চর ঘুরে দেখা যায়, আলু, বেগুন, শীম, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, তিতকরলা, চিচিংগা, শশা, খিড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, টমেটো, মিষ্টি আলু, শালগম, আখসহ নানা সবজির ক্ষেত।

নাজির চরে সবজির আবাদ করেছেন শহীদুল আলম শহীদ। তার সাথেই মূলত যাওয়া হয় নাজির চরে। তখন সকাল ১০টায় কর্ণফুলী নদীতে নৌকায় আমরা কয়েকজন। সঙ্গী ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তপন কান্তি দে, উপ- সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র দে ও তাসরিনা আকতার। বলা চলে আটঘাঁট বেঁধেই নাজির চর ভ্রমণ। শহীদের উৎসাহে কৃষকদের সাথে আলাপ আলোচনা।

জানা গেছে, ৩২০ একরের নাজির চর নদীর ভাঙনে এখন ২৪০ একরে দাঁড়িয়েছে। এ চরে প্রায় ৬০ জন কৃষক সারা বছর ধরে সবজির চাষ করছেন। এক সময় এ চরে ঘরবাড়ি জমিজিরাত ছিলো এ কৃষকদের পূর্ব পুরুষের। কালের পরিক্রমায় তা নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে তা আবার জেগে উঠলে আবারো চাষাবাদ শুরু হয়। বোয়ালখালী থেকে এ চরে যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা নৌকা।

৮০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক আব্দুর ছবুর বলেন, তার নিজস্ব ৩ একর জমি রয়েছে নাজির চরে। এ চরে চাষাবাদ করেই সংসার চলে তার। এ বছর তিনি এক একর জমিতে করেছেন মিষ্টি আলুর আবাদ। ফলনও ভাল হয়েছে। এছাড়া করেছেন শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ।

শহীদ জানায়, শুধু সবজি নয়, এখানে ধানও ফলে এ চরে। যোগাযোগের কারণে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে না পারায় চাষাবাদে ব্যয় হচ্ছে বেশি। চাষের শুরু থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত সবই করতে হয় গায়ে খেটে। তাই খুব একটা আর্থিক লাভবান হতে পারেন না কৃষকরা। প্রতিদিন যতটুকু ফসল সংগ্রহ করা যায়, তা বাজারে বিক্রি করে সেই অর্থ ঘরের সদাইপাতি কিনেই শেষ হয়ে যায়। এ বিষয়ে সরকারি সুযোগ সুবিধা ও সহায়তা বাড়ানো কথা বলছেন কৃষকরা।

সরকারি সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ চরের কৃষকরা তাদের মনের কথা তুলে ধরেন উপস্থিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে। মনে দুঃখ ক্ষোভ থাকলেও কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে পেয়ে খুশি হন তারা। এসময় কৃষক মো. হাসান, মাহমুদুল হক, মহিউদ্দীন ও মো. হশেম বলেন, সরকারি সহায়তা পাওয়া গেলে সমন্বিতভাবে সময়োপযোগী ফসলের চাষ করা যেতো। এতে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে।

তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ। পড়ন্ত বিকেলে কৃষকদের হাসি মাখা মুখ চোখে ভাসছিল বিদায়ের পালায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here