‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরোধী যে বক্তব্য প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সামনে রেখেছেন তার পেছনে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের দূরভিসন্ধি রয়েছে। তারাই প্রিয়া সাহাকে বাছাই করেছেন, কারণ তারা জানতেন এমন জঘন্য মন্তব্য তাকে দিয়েই করানো সম্ভব।’ এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

রোববার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় ফেসবুকে বাংলায় দেওয়া একটি পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। প্রথম ইংরেজিতে ও পরে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে একই বক্তব্যের একটি অনূদিত পোস্ট বাংলায় প্রকাশ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি লিখেছেন- গত নির্বাচনের পর আমি একটু বিরতি নেই, তাই এই পেজেও কম পোস্ট করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার কিছু বলা উচিত বলে মনে হলো।

আপনারা হয়তো দেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার ভয়ংকর ও মিথ্যা দাবি। উনি বলেছেন বাংলাদেশ থেকে নাকি ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ‘গায়েব’ বা ‘গুম’ হয়ে গেছেন। প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি যে সংখ্যাটি উনি বলছেন তা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যার ১০ গুণেরও বেশি, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যার কাছাকাছি। এতো মানুষ গুম হলো সবার অজান্তে? ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ গায়েব হলো কোনো তথ্য প্রমান ছাড়াই?

প্রিয়া সাহাকে আমেরিকায় পাঠানো হয় বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের মনোনয়নে। অনেক সমালোচনার পর আজ তারা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন তারা অংশগ্রহণকারীদের কথাবার্তার উপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেন না। কিন্তু যখন তাদের একজন মনোনীত অংশগ্রহণকারী তাদেরই রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে কোনো ভয়ংকর মিথ্যা বক্তব্য দিলেন, তাদের উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবাদ জানানো, যা তারা করেননি।

এই বিষয়টি থেকে কিন্তু মার্কিন দূতাবাসেরই দুরভিসন্ধি প্রকাশ পায়। তারা জেনেশুনেই প্রিয়া সাহাকে বাছাই করে কারণ তারা জানতো উনি এই ধরণের ভয়ংকর মিথ্যা মন্তব্য করবেন। এই ধরণের কাজের পিছে একটাই কারণ চিন্তা করা যায়: মানবিকতার দোহাই দিয়ে আমাদের এই অঞ্চলে সেনা অভিযানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। মনে রাখা ভালো কয়েকদিন আগেই মার্কিন এক কংগ্রেসম্যান একটি বক্তব্যে বলেছিলেন বাংলাদেশের মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখল করা উচিত।

মার্কিন দূতাবাস যে আওয়ামী লীগ বিরোধী তা নতুন কিছু নয়। তাদের সকল অনুষ্ঠানেই জামাত নেতাকর্মীরা ও যুদ্ধাপরাধীরা নিয়মিত আমন্ত্রিত হতেন। প্রিয়া সাহার মিথ্যা বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তাদের সরাসরি আধিপত্য বিস্তারের ষড়যন্ত্র পরিষ্কারভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সৌভাগ্যবশত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার অন্যান্য দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নীতিতে বিশ্বাসী নন। তারা এই ধরণের ভয়ংকর মিথ্যা দাবি বিশ্বাস করার মতন বোকাও নন।

দুপুর ১টায় ইংরেজিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেন:

After these last elections I had taken a bit of a break and did not post much on this page. Recent events, however, warrant an observation.

Some of you may have seen the ridiculous claim that Priya Saha made to United States President Donald Trump. She claimed that 3 Crore 70 lakh minorities, or almost 4 Crore, have disappeared! That is more than ten times the number of our martyrs in our Liberation War, or almost as many people as were killed in World War 2. Yet this happened without anyone even knowing about it? Did 37 million people just vanish without a trace?

She was a member of a delegation selected by the US Embassy in Dhaka. After much criticism the US Embassy finally issued a statement today. The Embassy stated they do not restrict participants. Which is fine, but why would they not refute an obviously false and outrageous statement made by one of their selected participants to their own Head of State?

This tells me the US Embassy is the one that had an ulterior motive here. They picked Priya Saha because they knew she would make this outrageous statement. The only logical outcome of making such a claim to the US President is to build demand for a military intervention in the region on humanitarian grounds. This ties in with another US Congressman’s recent statement that Bangladesh should take over Rakhine state.

It is no secret that the US Embassy is decidedly anti-Awami League. They have always hosted Jamaat and war criminals at all their events. With their support of Priya Saha’s statement they now appear to be plotting a direct takeover of our country.

Fortunately for us, President Trump and his administration have a very different policy of non intervention in foreign affairs. They are also not so stupid to believe such a ridiculous claim.

জয়ের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য নেই ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রোববার (২১ জুলাই) তাঁর ফেরিফাইড ফেসবুক পেইজর একটি পোস্টে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরোধী যে বক্তব্য প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সামনে রেখেছেন তার পেছনে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের দূরভিসন্ধি রয়েছে।’

সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে সারাবাংলাকে জানান হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পোস্টের ব্যাপারে দূতাবাস কোনো মন্তব্য করতে চায় না।’

সজীব ওয়াজেদ জয় তার পোস্টে বলেন, ‘প্রিয়া সাহাকে আমেরিকায় পাঠানো হয় বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের মনোনয়নে। অনেক সমালোচনার পর আজ তারা একটি বিবৃতি দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, ‘এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র রোববার (২১ জুলাই) কোনো ধরনের বিবৃতি প্রকাশ করেনি। তবে প্রিয়া সাহার বিষয় নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমকর্মী জানতে চাইলে তাদেরকে দূতাবাস থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে যে, গত ১৬ থেকে ১৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতার অগ্রগতি বিষয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ মোট ১০৬টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। সরকারি প্রতিনিধিদলের বাইরেও ওই সম্মেলনে বেসরকারি পর্যায়ের একাধিক প্রতিনিধি ছিল, যারা ধর্মীয় স্বাধীনতার ইস্যূতে কথা বলেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তাই যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণকারীদের কথাবার্তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে না।

সজীব ওয়াজেদ জয় রোববার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় ফেসবুকে বাংলায় দেওয়া একটি পোস্টে মার্কিন দূতাবাস নিয়ে মন্তব্য করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here