অনলাইন ডেস্ক

আওয়ামী লীগের সভাপতি (দশমবার) নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হুইপগণ। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। তারা প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতিকে অভিনন্দনও জানান।
এ সময় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপসহ উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এ অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্র্নিবাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

এছাড়া জাতীয় এ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যারা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন, তারা হলেন: বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), অ্যাড. কামরুল ইসলাম এমপি ও সিমিন হোসেন রিমি।

এছাড়া যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদে ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ডা. দীপু মনি রয়েছেন। পাশাপাশি কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি।

সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহবান
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, আমি চাই-দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়।
তিনি গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ)’র ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা প্রদানকালে একথা বলেন। খবর বাসস।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা (সংসদ সদস্য) জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইন সংশোধন করেন এবং বিচারকরা ওই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন, আমি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, দেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজনীয় সবকিছুই করেছি-যাতে করে আইনের শাসন ও জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আইনের আওতায় যেসব মামলা রয়েছে- তা দ্রæত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তাঁর সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। তিনি বলেন, যদি সন্ত্রাসবাদী-বিরোধী মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি হয়, তবে যারা সন্ত্রাসবাদে জাড়িয়ে গেছে- তারা আর এই অপরাধে নিজেদের জড়াবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাথে সাথে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ধরনও বদলে গেছে, এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ করা হয়। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ ঠেকাতে আমরা একটি আইন প্রণয়ন করেছি। এই আইনটি নিয়ে নানা লোকে নানা কথা বলে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- যেভাবে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে, তাতে এটাকে ঠেকাতে এই আইনটি জরুরি।’ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা চালাতে প্রধানমন্ত্রী অভিভাবক, শিক্ষক ও আলেমসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহŸান জানান। তিনি বলেন, কোন বাচ্চা যেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে- সেজন্য আমাদের বিশেষ মনযোগ দিতে হবে। ঝালকাঠি ও গাজীপুর আদালতে জঙ্গি হামলার উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারকগণ রায় প্রদান করে যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য তাঁর সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু নির্বাচন মামলার দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে সারা দেশে বর্তমানে ১০১টি ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে এবং সাতটি ট্রাইব্যুনাল মানব পাচার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো পরিচালনা করছে। তিনি আশা করেন, যদি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তবে এ ধরনের অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে মোট ১২২৭ জন বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং আরো ২০০ বিচারক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে তারা কি পেয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর কি পেয়েছেন, তা ভেবে দেখতে বিচারকদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দেখতে পাবেন। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখে। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পদক্ষেপ গ্রহণকালে তিনি রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন বিদেশি ফোন কল পান। এ সময় তিনি নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার রায় প্রদানের জন্য বিচারক গোলাম রসুলের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন প্রদানের উদ্দেশে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের লক্ষ্য ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার বক্তব্য রাখেন। বিজেএসএ সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিজেএসএ’র ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিলের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here