অব্যাহত বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই লেকে পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গতকাল রাত ৮টা থেকে কাপ্তাই বাঁধের (বিদ্যুৎ কেন্দ্রের) ১৬টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এই ১৬ গেট দিয়ে ৬ ইঞ্চি হারে পানি ছাড়া হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ প্ল্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। কর্ণফুলীসহ সকল শাখা খালে পানির স্রোত বেড়ে নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ।
এদিকে পূর্ণিমা এবং পূর্ণিমার পরবর্তীতে জোয়ার স্বাভাবিকভাবেই প্রবল হয়। এর সাথে কাপ্তাই লেকের পানি যুক্ত হলে নগরীর নিচু এলাকাও প্লাবিত হবে। বিশেষ করে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। গত দু তিন বছর বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও জোয়ার এবং কাপ্তাই হ্রদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। আর এতে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছিল। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়া এবং লেকের পানি কর্ণফুলী নদীতে ছেড়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
কাপ্তাই লেকে বর্তমানে পানি রয়েছে ১০৬.৩৮ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সুত্র জানায় কাপ্তাই লেকে সর্বোচ্চ ১০৯ ফুট পানি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এর বেশী পানি লেকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। বর্তমানে যে হারে লেকে পানি বাড়ছে তাতে সহসা পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কাপ্তাই লেকের প্রধান বাঁধ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে বাড়তি পানি কর্ণফুলী নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সুত্র জানায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫টি জেনারেটরের মধ্যে বর্তমানে ৪টি জেনারেটর সচল রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ১ নাম্বার জেনারেটর বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ৪টি জেনারেটর থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। যার পুরোটাই জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হচ্ছে।
একটানা ভারী র্বষণ ও পাহাড়ি ঢলে রাউজানে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই কাপ্তাই লেক থেকে বর্ধিত পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। জোয়ারের সাথে এই পানি এসে পড়লে রাউজানের বেশির ভাগ এলাকায় আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। রাউজান দক্ষিণাংশের বাগোয়ান, পাহাড়তলী, নোয়াপাড়া, পশ্চিম গুজরা, উরকিরচর, বিনাজুরী ইউনিয়ন কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সাথে। কাপ্তাই লেকের পানির ছেড়ে দেয়ার সংবাদ শুনে এ অঞ্চলের মানুষ আতংকিত । এমনিতে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানির স্রোতে রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কিছু কিছু বিধ্বস্ত রাস্তা এলাকার মানুষ সেচ্ছাশ্রমে চলাচল উপযোগী করলেও কাপ্তাই লেকের পানির কারণে আবারও সেগুলো তলিয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here