মায়ানমার সেনার অত্যাচারে গত দুবছর আগে বাংলাদেশ পালিয়ে আসে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। রবিবার বাংলাদেশের মাটিতে দুবছর পূর্তি সমাবেশ পালন করল রোহিঙ্গারা। সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ভিটেবাড়ি পুনরুদ্ধার, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে। অন্যথায় তারা যাবে না।

তাদের দাবি, রোহিঙ্গা মুসলমানদের আগে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে মায়ানমারকে। এরপর বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা একসঙ্গেই ঘরে ফিরে যাবে। এজন্য মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি আছেন বলে ওই সমাবেশ থেকে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

এদিন সকালে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ৫ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার যেভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবতা দেখিয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

মাত্র দেড় ঘণ্টার সমাবেশে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উপস্থিত হন। সকাল ৯টার আগেই বিভিন্ন শিবির থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে মধুরছড়ার সমাবেশস্থলে জড়ো হন। শুধু সমাবেশ নয়, রোহিঙ্গা নেতারা মায়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মায়ানমারের ‘নাটক’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। সমাবেশে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এই পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চাই না।

সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে নেতারা বলেন, ‘আমাদের সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের যদি মায়ানমারে ফিরে যেতে হয়, একসঙ্গে যাব, একসঙ্গে সীমান্ত পার হব। রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে মায়ানমারকে। সঙ্গে রাখাইনে ফেলে আসা ভিটেমাটিও ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই প্রত্যাবাসন সফল হবে।’

রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিজ দেশ মায়ানমারে ফিরতে চাই। নাগরিকত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তা পেলে শিবিরের সব রোহিঙ্গা ফিরে যাবে। এ জন্য আমরা মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনাতে বসতেও রাজি।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে আশ্রিত আরও ৪ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা রয়েছে কক্সবাজারে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন উখিয়া-টেকনাফে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here