সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী গ্রামের একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে পঙ্গপালের মতো আধা ইঞ্চি সাইজের কিছু পোকার আবির্ভাব হয়েছে। ঝাঁক ঝাঁক পোকা দল বেঁধে গাছের পাতা ও শাখায় বসে একের পর এক গাছের পাতা খেয়ে নষ্ট করছে। খেয়ে ফেলছে গাছপালা। এ পোকাগুলো আসলে কোন প্রজাতির, তা উদঘাটন ও করণীয় নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই বিষ স্প্রে করে পোকাগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য এরই মাঝে কিছু পোকা সংগ্রহও করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমন পোকা বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি। পঙ্গপালের মতো হলেও আফ্রিকান পঙ্গপালের মতো ক্ষতিকর নয় এগুলো। এদের পাখা নেই, ঘাসফড়িংয়ের মতো নরম শরীর, তবে জীবনীশক্তি অনেক বেশি। এরই মাঝে গবেষণার জন্য ৪টি পোকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো এক সপ্তাহ ধরে না খেয়ে আছে,  ফ্রিজে ২ দিন রাখার পরেও মরেনি। পোকাগুলো দেখতে সোনালী রঙের। পা কালো, পিঠে সোনালি ডোরাকাটা। কচি পাতা, আগাছা থেকে শুরু করে শুকনো পাতা, কাঁচা পাতা ও গাছের শাখা-প্রশাখায় এরা থাকতে ভালোবাসে। কচি পাতা এদের প্রিয় খাদ্য।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, পোকাগুলো পঙ্গপালের মতো দেখতে। তবে আফ্রিকান পঙ্গপালের মতো ক্ষতিকর না। আমরা পোকাগুলোকে স্প্রে করে মেরে ফেলেছি। তবে কিছু পোকা সংগ্রহ করেছি। এক সপ্তাহ না খেয়েও সেগুলো জীবিত আছে। ফ্রিজে রাখা হলেও মরছে না। শক্ত প্রাণের পোকা।

সার্বিক পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানাচ্ছে,  দেশে পঙ্গপাল সদৃশ এসব পোকার উপস্থিতিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। পোকাগুলো কী প্রজাতির, কোথা থেকে আসছে, দমনের উপায়সহ দেশে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেসব ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পোকাগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার (২ মে) ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম সরেজমিনে লম্বরী গ্রামের ওই পরিত্যক্ত মুরগির খামার পরিদর্শন করে। এই টিমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,  গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট,  খামারবাড়ি কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পরামর্শকরা রয়েছেন।  এই টিম পোকাগুলোর স্যাম্পল সংগ্রহ করবে। পরে কৃষি গবেষণা কর্মকর্তারা পোকার আসল রহস্য উন্মোচন করবেন। পঙ্গপাল সদৃশ এসব পোকা ভারত অথবা মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) ড. আহমেদ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে বিরল প্রজাতির এসব পোকার উপস্থিতিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের একটা টিম গেছে। ২ দিন পর ওই টিম আমাদের সঠিক তথ্য দিতে পারবে। তবে আফ্রিকান পঙ্গপালের মতো এরা এতোটা ক্ষতিকর না। আমরা প্রস্তুত আছি। বিষয়টি সবসময় পর্যালোচনা করছি। আমাদের গবেষণা কর্মকর্তারা এ পোকার রহস্য উন্মোচন করবেন। কক্সবাজারেও সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here