অনলাইন ডেস্ক : খাদ্যে ভেজালকারীরা সবচেয়ে বড় অপরাধী এবং জঙ্গী বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম।

সোমবার (২৭মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ খাদ্য ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রোগ বৃদ্ধির মূল কারণ ভেজাল খাদ্য, ভেজাল ঔষধ। যারা এ ধরনের কাজ করে তদের মধ্যে মানবতা নাই। তাদের লজ্জা নাই। বড় বড় কোম্পানিগুলোর কোন নীতি আদর্শ নাই। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা কোন উদ্যোগ গ্রহন করে না। খাদ্যে ভেজালকারীরা সবচেয়ে বড় জঙ্গী। ভেজালকারিদের মৃত্যুদন্ড দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এবং এজন্য আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্টমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতে হবে। এই আইন কার্যকর হলে দেশে খাদ্যে ভেজাল কমে যাবে।

তিনি আরো বলেন, রাজনীতিতেও ভেজাল ঢুকে গেছে। আগামী কাউন্সিলে এসব নব্য ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দেশে সুষ্ঠ রাজনীতি চলছে। সুষ্ঠ রাজনীতি চলতে দিন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে ভেজাল, মাদক ও নারী নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তিনি বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, যারা রাজনীতিতে আছেন তারা তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপরাধ করে, আগুন সন্ত্রাস করে। যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তারা হচ্ছে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। আর রাজনীতির ভেজাল হচ্ছে জামায়াত বিএনপি। জামায়াত বিএনপি থেকে রাজনৈতিক ভেজাল মুক্ত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আইনে ক্রসফায়ার নেই, এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হবে আজ কিংবা কাল। সংসদের আগামী অধিবেশনে ভেজাল প্রসঙ্গ তুলে ধরা হবে। প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিসহ সকলকে একজোট হয়ে ভেজাল বিরোধী আন্দোলন করার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া বলেন, বড় বড় হাসপাতাল গুলোতে বেশিরভাগ রুগী হচ্ছে লিভারের। আর এই সমস্যার মূল কারন হচ্ছে ভেজাল তেল খাওয়া। সব কিছুই ভেজাল চলছে। ৯০ ভাগ ঔষধে এখন ভেজাল। প্রশাসন এবং রাজনীতিক কিছু ব্যক্তির কারনে এসব ভেজালকারিরা সহজে ব্যবসা করে যাচ্ছে।সকলকে এক সাথ হয়ে এসব ভেজালকারির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

নিরাপদ খাদ্য ও আমাদের করণীয় শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক থেকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ১৬টি পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়;

১। কৃষকদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সচেতন করতে হবে।

২। যথাযথ প্রতিষ্ঠানের অনুমােদন ছাড়া ফসলে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৩। খাদ্যের মান অক্ষুন্ন রাখতে সরবরাহকারীকে কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

৪। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়ােগ ও প্রয়ােজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।

৫ । খাদ্যে ভেজালকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ।

৬। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।

৭। খাদ্য উৎপাদন , সংরক্ষণ , পরিবহন , বিক্রয় ও ভােক্তার খাদ্য গ্রহণ প্রতিটি স্তরে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

৯। নিরাপদ খাদ্য ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদি পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

১০ । নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়ােজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রয়ােজনীয় জনবল নিয়ােগ দিতে হবে।

১১। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহকে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

১২। ফরমালিনসহ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরােপ করতে হবে।

১৩ । খাদ্যের নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে সততা , স্বচ্ছতা ও দেশপ্রেমের সাথে কাজ করতে হবে ।

১৪ । নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সর্বস্তরে গণসচেতনতা ও দায়িত্ববােধ সৃষ্টি করতে হবে।

১৫। খাদ্য উৎপাদনকারী শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

১৬। খাদ্য উৎপাদন , সংরক্ষণ , বাজারজাতকরণ , পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টদের এবং ভােক্তাদেরকে প্রয়ােজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ খাদ্য ও আমাদের করণীয় শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে ভেজাল ও মাদক বিরোধী আন্দোলনের সভাপতি মো. আতা উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থি ছিলেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আ.লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. নাসিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া, বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here