ঈদের নামাযের নিয়ম, ঈদের দিনের সুন্নাত ও ঈদের নামাযের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল!

হযরত সায়্যিদুনা বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত; নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেয়ে নামাযের উদ্দেশ্যে তাশরীফ নিয়ে যেতেন। আর ঈদুল আযহার দিন নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু খেতেন না। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫৪২, দারুল ফিক্র বৈরুত)

বুখারী শরীফের বর্ণনায় হযরত সায়্যিদুনা আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত; হুযুর ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে (নামাযের উদ্দেশ্যে) তাশরীফ নিয়ে যেতেন না। আর খেজুরের সংখ্যা বিজোড় হতো। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৯৫৩)

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার ﷺ ঈদের দিন (ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে) এক রাস্তা দিয়ে (তাশরীফ নিয়ে) যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫৪১)

ঈদুল ফিতরের নামাযের জন্য যাওয়ার সময় রাস্তায় নিম্নস্বরে তাকবীর বলবে আর ঈদুল আযহার নামাযের জন্য যাওয়ার পথে উচ্চরবে তাকবীর বলবে। তাকবীর হচ্ছে নিম্নরূপ:

ঈদুল ফিতরের তাকবীর:

আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর। ওয়া লিল্লাহিল হামদ্‌।

অর্থ: আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই, আল্লাহ্‌ মহান। আল্লাহ্‌ মহান। সকল প্রশংসা তাঁর জন্য।

ঈদুল ফিতরের নামায:

ঈদুল ফিতরের নামাযের নিয়ত:

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল ঈদিল্‌ ফিত্‌রি মা’আ সিত্তাতি তাক্‌বীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা’য়ালা ইক্‌তাদাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।

অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র (সন্তুষ্টির) জন্য অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের দুই রাকআত ওয়াজিব নামায এই ইমামের পিছনে আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।

ঈদুল ফিতরের নামায পড়ার নিয়ম:

প্রথমে ইমাম ও মুক্তাদিগণ ইদুল ফিত্‌রের দুই রাকআত নামাযের নিয়ত করে তাকবীরে-তাহ্‌রীমা বলে হাত বাঁধবেন (অন্যান্য নামাযের নিয়ম অনুযায়ী)। অতঃপর মনে মনে ছানা পড়বেন। তারপর ইমাম সরবে ও মুক্তাদিগণ নীরবে পরপর তিনটি তাকবীর বলবেন। এই তাকবীর তিনটির প্রথম দুইটি বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানোর পর নিচের দিকে ছেড়ে দিবেন (ঝুলিয়ে রাখবেন)। তৃতীয় তাকবীর বলার পর হাত বাঁধবেন। তারপর ইমাম যথানিয়মে (অন্যান্য নামাযের নিয়ম অনুযায়ী) আউযুবিল্লাহ্‌ ও বিসমিল্লাহ্‌-সহ সূরা ফাতেহা এবং অন্য একটি সূরা পড়ে প্রথম রাকআত শেষ করবেন। দ্বিতীয় রাকআতেও যথানিয়মে ইমাম কিরআত পাঠ করবেন। তারপর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তিনটি তাকবীর বলবেন এবং দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আবার ছেড়ে দিবেন। চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবেন। অতঃপর যথানিয়মে (অন্যান্য নামাজের নিয়ম অনুযায়ী) নামায শেষ করবেন।

ঈদের নামায যাদের জন্য ওয়াজিব:

দুই ঈদের (অর্থাৎ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার) নামায ওয়াজিব। যাদের উপর জুমার নামায ওয়াজীব শুধুমাত্র তাদের জন্য (ঈদের নামায ওয়াজীব)। ঈদের নামাযে আযানও নেই, ইকামতও নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯ পৃষ্ঠা)

ঈদের জামআতের খুতবা:

দুই ঈদের নামায আদায়ের শর্তাবলী জুমার নামাযের ন্যায়। শুধুমাত্র এতটুকুই পার্থক্য যে, জুমার নামাযে খোৎবা শর্ত আর ঈদের নামাযে খোৎবা সুন্নাত। জুমার খোৎবা নামাযের আগে আর ঈদের খোৎবা নামাযের পর দিতে হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)

ঈদের নামাযের সময়:

এই দুই ঈদের নামাযের সময় হলো, সূর্য এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠার (অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ২০ অথবা ২৫ মিনিট) পর থেকে দাহওয়ায়ে কুবরা” অর্থাৎ শরয়ীভাবে অর্ধ্বদিন পর্যন্ত। কিন্তু ঈদুল ফিতরের নামায একটু দেরীতে আর ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)

ঈদের নামাযের কিছু অংশ পাওয়া না গেলে:

ইমামের প্রথম রাকাতের তাকবীর সমূহের পর যদি মুক্তাদী (নামাযে) সম্পৃক্ত হয় তখন ঐ সময়ই (তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অতিরিক্ত) তিনটি তাকবীর বলবে যদিও ইমাম ক্বিরাত পড়া শুরু করে দেয়। ইমাম যদিও তিনটির চেয়ে অতিরিক্ত বলে থাকেন তবুও মুক্তাদী তিনটিই বলবে এবং যদি তার তাকবীর বলার পূর্বেই ইমাম রুকুতে চলে যায় তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর না বলে ইমামের সাথে রুকুতে চলে যাবে এবং সেখানেই তাকবীর গুলো বলবে।

যদি ইমামকে রুকুতে পাওয়া যায় এবং মুক্তাদীর এই প্রবল ধারণা জন্মে যে, তাকবীরগুলো বলার পরও ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে এবং তারপর রুকুতে যাবে আর যদি তা না হয় তবে ( আল্লাহু আকবার ) বলে রুকুতে চলে যাবে এবং সেখানে তাকবীরগুলো পড়বে। যদি রুকুতে তাকবীরগুলো শেষ করার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেন তখন বাকী তাকবীর সমূহ রহিত হয়ে যাবে। (অর্থাৎ অবশিষ্ট তাকবীর সমূহ এখন আর বলবে না)। আর যদি ইমাম রুকু থেকে উঠার পর মুক্তাদী জামাআতে সম্পৃক্ত হয়, তবে এখন আর তাকবীর বলবে না বরং (ইমাম সালাম ফেরানোর পর) যখন আপনার অবশিষ্ট নামায পড়বেন তখন তা বলবেন। রুকুতে তাকবীর বলার কথা যেখানে বলা হয়েছে সেখানে হাত উঠাবে না আর যদি মুক্তাদী দ্বিতীয় রাকাতে জামাআতে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে প্রথম রাকাতের তাকবীরগুলো এখন বলবে না বরং যখন তার না পাওয়া রাকাতটি আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন তাকবীরগুলো বলবে। দ্বিতীয় রাকাতের তাকবীরগুলো যদি ইমামের সাথে পাওয়া যায় তবে ভাল আর তা না হলে এক্ষেত্রে তা-ই প্রযোজ্য হবে যা প্রথম রাকাতের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮২ পৃষ্ঠা দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৪ পৃষ্ঠা। আলমগিরী ১ম খন্ড, ১৫১ পৃষ্ঠা)

ঈদের নামাযের জামআত না পেলে:

ইমাম নামায পড়ে নিলেন আর এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট রয়ে গেলো। চাই সে শুরু থেকেই জামাআতে সম্পৃক্ত হতে না পারুক অথবা অংশগ্রহণ করল কিন্তু কোন কারণে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো, তাহলে সে অন্য কোন জায়গায় নামায পাওয়া গেলে নামায আদায় করে নেবে, অন্যথায় জামাআত ছাড়া নামায পড়া যাবে না। তবে উত্তম এটাই যে, সে চার রাকাত চাশতের নামায আদায় করে নেবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা)

এবি/টিআর ৪/৬/২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here