শুকলাল দাশ : দুইযুগ ধরে সম্মেলন না হওয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের বোয়ালখালী উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডিস্থ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রামের তিন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ বাঁশখালী ও বোয়ালখালী উপজেলার কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নির্দেশের পর ১০দিন পার হয়ে গেলেও হয়নি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের নেতারা জানান, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২২ বছর আগে। এই ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকেই বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। বৈঠকে মোছলেম ভাই (দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ) উপস্থিত ছিলেন না। তিনি পরদিন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য চলে যান। মোছলেম ভাই আসলে এই দুই উপজেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করবো।

বোয়ালখালীর বাসিন্দা দক্ষিণ জেলা আওয়মীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন জানান, বোয়ালখালী উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পর ১০ দিনের মধ্যে সম্মেলনের জন্য আহবায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলেও তা হয়নি। সভাপতি দেশে না থাকলে দলের সিনিয়র সহ সভাপতি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং আহবান করতে পারেন। কিন্তু সেটা করা হয়নি।

বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২২ বছর আগে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি (মোছলেম উদ্দিন আহমেদ) কোন সম্মেলন ছাড়া নিজে এককভাবে (জেলার সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদন এবং স্বাক্ষরবিহীন) নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে ৯৩ সদস্যের একটি পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছেন। যেটা সম্পূর্ণ সংগঠন বিরোধী ও বেআইনি। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী।কমিটির সহ সভাপতি করা হয়েছে এক সময়ের ফ্রিডম পার্টি নেতা ও পরবর্তীতে বিএনপির দক্ষিণ জেলার সাবেক সভাপতি আহমদ খলিল খানের সহযোগী আলহাজ্ব মনসুর আলম পাপ্পীকে। তিনি হত্যা মামলার আসামি। জোরপূর্বক কালুরঘাটে দলের নেতা কালাম মেম্বারের বালু মহাল দখল করেছেন তিনি।

আলহাজ্ব মনসুর আলম পাপ্পীর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি ফ্রিডম পার্টির সাথে যুক্ত ছিলাম না। আহমদ খলিল খানের সহযোগী প্রসঙ্গে পাপ্পী বলেন, ছবিতো ভাই(আহমদ খলিল খানের সাথে) যে কারো সাথে থাকতেই পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে খালেদা জিয়ারওতো ছবি আছে।’ কালুরঘাটের উভয় পাশের বালুর মহাল নিয়ন্ত্রন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমি সরকার থেকে বৈধভাবে ইজারা নিয়েছি। এজন্য আমি সরকারকে ট্যাক্স দিই।’

বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, সম্মেলন ছাড়া একটি কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এটাতে আমার অনুমোদন নেই। কমিটিতে ফ্রিডম পাটি ও বিএনপির নেতাকে গুরুত্বপূর্ন পদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বোয়ালখালীতে কালাম সাহেবেরও (দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম) একটি কমিটি আছে।

উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, দলের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ এমপি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক পানি সম্পদ উপ মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুর সবুর, আওয়ামীলীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি ও সাধারন সম্পাদক-চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম।

তথ্যসূত্র: দৈনিক আজাদী

Print Friendly, PDF & Email