নিজস্ব প্রতিবেদক : বোয়ালখালী পৌরসভার ৫ম বাজেট ঘোষণা হয়ে গেল গত অগাস্ট মাসে। নব গঠিত এ পৌরসভা উত্তীর্ণ হয়েছে ২য় শ্রেণিতে। এ পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র বলা চলে ৪নং ওয়ার্ডকে। প্রথম পৌর নির্বাচনে এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সুনীল চন্দ্র ঘোষ। গত ২০১৪ সালে মে মাসে পৌরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

নবগঠিত পৌরসভার ভিত্তি তৈরি করা ছিলো অনেকটাই চ্যালেঞ্জের। স্বল্প আয়ে এলাকার উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে প্রতি পদে পদে নানান প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ পৌরসভা গঠনের পর অবকাঠামোগত পরিবর্তন ছিলো সবচেয়ে বেশি কঠিন কাজ ।

গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সুনীল চন্দ্র ঘোষ একান্ত সাক্ষাতকারে আলোকিত বোয়ালখালীকে এসব কথা জানান। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে ৪নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা ও নানা পরিকল্পনার কথা।

আলোকিত বোয়ালখালী : ৪নং ওয়ার্ড বোয়ালখালী পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র বলা চলে। এ ওয়ার্ডকে আধুনিক এলাকায় রূপান্তর করতে আপনি কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন বা এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কি ছিলো ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ সবক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ বোয়ালখালী উপজেলা। নবগঠিত পৌরসভাকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে যেসব পরিকল্পনা বা ভিত্তি করা দরকার আমরা তা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলো না অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের। এরপরও এলাকাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

আলোকিত বোয়ালখালী : উপজেলা সদরের যানজট নিরসনে কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : পৌর এলাকার বুড়িপুকুর পাড় থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কে অব্যবস্থাপনা, চালকদের সচেতনতার অভাব, যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া ফুটপাতে ভাসমান হকাররাও এর জন্য দায়ী। এ সমস্যা নিরসনে বুড়িপুকুর পাড়ের রেলওয়ে গেট এলাকায় কানুনগোপাড়া, বেঙ্গুরা ও পোপাদিয়ার সৈয়দপুরগামী সিএনজি অটোরিকশার পার্কিং ভাগ করে দেওয়ায় এ সমস্যা আপাতত: অনেকাংশে কমছে। তবে পুরোপুরি এ পার্কিং সরিয়ে নেওয়া গেলে তা একেবারেই নিরসন হবে। জায়গার অভাবে তা সরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ এলাকার অদূরে একটি গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তবে পৌর সদরে যানজটের চাপ কমে আসবে।
পরিকল্পনা রয়েছে নিরাপদ ও পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সিএনজি স্ট্যান্ড চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সরিয়ে নেওয়া।

আলোকিত বোয়ালখালী : উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি দূর করতে আপনার ভূমিকা কেমন ছিলো ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : আমার এলাকায় প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিলো দুর্নীতিমুক্ত রাখা। পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় জনগণকে তাদের চাহিদার আলোকে সেবা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের মতামতকে অধিক গুরুত্বকে প্রধান্য দেওয়া।

আলোকিত বোয়ালখালী : পৌর এলাকা নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : জনবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব, আলোকিত, উন্নত নাগরিক জীবন গড়ে তোলার জন্য এ এলাকার রাস্তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে নিরিবিলি শহরের রূপ আনা।

আলোকিত বোয়ালখালী : নাগরিকের মানবিক উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : পৌরসভার সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। এছাড়া সরকারি সুবিধা প্রাপ্যতায় নাগরিকদের সার্বিক সহযোগিতা ছিলো সবসময়। ৪নং ওয়ার্ডের প্রায় ৮০% নাগরিক এ সুবিধা ভোগ করছেন।
ইচ্ছা রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিনোদন চর্চায় নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে নাগরিক কেন্দ্র গড়ে তোলা। এছাড়া এলাকাভিত্তিক লাইব্রেরী, সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চাকেন্দ্র তৈরিতে প্রণোদনা দেওয়া।
পৌরসভায় একটি অনুদান তহবিল প্রতিষ্ঠা করা গেলে এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, কমিউনিটির নানা উদ্যোগ, মেধাবী ছাত্রছাত্রী, গুণীজনদের সম্মাননা অনুদান/প্রণোদনা দেওয়া যাবে। এছাড়া নাগরিকদের শিল্প-সংস্কৃতি-রাজনৈতিক অধিকার চর্চায় একটি আধুনিক পৌর অডিটোরিয়াম তৈরির প্রয়োজন রয়েছে।

আলোকিত বোয়ালখালী : সামান্য বৃষ্টি হলেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, চরম ভোগান্তিতে পড়েন সেবা গ্রহীতারা, এর থেকে পরিত্রাণে কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : শুধুমাত্র টানা বৃষ্টির ফলে হাসপাতালের সামনের অংশে জলাবদ্ধতার অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর জন্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থায় দায়ী। তা নিরসনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের জলাবদ্ধতা যাতে না হয় তার জন্য পৌর সদরে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কয়েকটি জায়গায় ড্রেন নির্মাণ করা হবে।
এর পাশাপাশি নিয়মিত ও বিশেষভাবে বর্ষা মৌসুমের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পূর্বেই ড্রেনগুলো পরিস্কার করতে হবে। ড্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আধুনিক বাহনের দরকার রয়েছে। ড্রেনগুলো সচল রাখতে সচেতনতা ও স্থানীয় উদ্যোগ সৃষ্টির প্রয়াস করতে হবে।

আলোকিত বোয়ালখালী : স্বাস্থ্যসম্মত পৌরসভা গঠনে আপনার কি কি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : উন্নত ও সুন্দর জীবনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত পৌরসভা। মশার উৎপাত নাগরিকদের অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যার একটি। তাই মশক নিধন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ফরমালিন মুক্ত ও নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্প-নিম্ন আয়ের নাগরিকদের সুলভে চিকিৎসা দেয়া।

আলোকিত বোয়ালখালী : পৌর কাউন্সিলর হিসেবে নাগরিকদের সেতুবন্ধন কেমন হওয়া উচিত মনে করেন ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : প্রথমেই বলে রাখি, নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্যতায় কর্মী হয়ে তৎপর ছিলাম। উন্নয়ন ও সেবা মূলক কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর সহযোগিতা ছিলো ও পেয়েছি সব সময়। নয়তো এতো অপ্রতুলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। সামনের দিনগুলোতে আধুনিক পৌর এলাকা বিনির্মাণে আমি এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই।

আলোকিত বোয়ালখালী : বর্তমান সরকার ডিজিটালে গুরুত্ব দিচ্ছে, আপনার এলাকায় এ সেবা কিভাবে গ্রহণ করছে ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : ভবিষ্যতে পৌরসভায় প্রাথমিকভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। বোয়ালখালী পৌরসভার ওয়েব পেজ এবং ই-তথ্য সেবা চালু রয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল পৌর বুলেটিন বোর্ড করা দরকার। যেখানে প্রতিনিয়ত পৌরসভা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেখানো হবে।

আলোকিত বোয়ালখালী : সুশাসনে নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : জনগণের অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও মতামত ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। পৌরসভা জনগণের প্রতিষ্ঠান। যার দায়িত্ব হচ্ছে এলাকাবাসীকে সেবা দেয়া। ফলে দক্ষ ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে জনগণের ব্যাপক অংশমূলক পৌরসভা গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল।

আলোকিত বোয়ালখালী : কি কারণে কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : তৃণমূলে কাজ করে এলাকাবাসীর ভালোবাসা আমি সব সময় পেয়ে এসেছি। এই এলাকার সন্তান হিসেবে পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। তাদের ভালোবাসা ও ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি।

আলোকিত বোয়ালখালী : আপনার এলাকায় কি কি উন্নয়ন কাজ বিগত ৫ বছরে করতে পেরেছেন বলে মনে করেন ?
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : আবারো বলছি সাধ ছিল, তবে সাধ্য ছিলো না। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে প্রায় ১০টি সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে, পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি, প্রধান সড়কে আলোর ব্যবস্থা করা হয়ছে। নতুন পৌরসভা হওয়ায় বাজেটে অপ্রতুলতা ছিলো। ফলে আরো অনেক কাজ বাকি রয়েছে গেছে। তবে এলাকাবাসীর ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত ৫বছর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এলাকার উন্নয়নে কাজ করার। আগামী নির্বাচনে যদি নির্বাচিত হই তবে এলাকা নিয়ে যে স্বপ্ন ও অসম্পূর্ণ যে কাজ রয়েছে তা ধারাবাহিকভাবে পূরণে কাজ করবো।

আলোকিত বোয়ালখালী : ধন্যবান আপনাকে আলোকিত বোয়ালখালীকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
সুনীল চন্দ্র ঘোষ : আলোকিত বোয়ালখালী পরিবারকে ধন্যবাদ। একই সাথে আলোকিত বোয়ালখালীর পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ।

এবি/পিএস/ডিবিআর/টিআইআর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here