৩৯ বছরের মারিয়ম নবট্যানজি। আফ্রিকার উগান্ডায় তিনি থাকেন। একার দায়িত্বে ৩৮ সন্তানের ভরণপোষণ করে চলেছেন এই স্বামী পরিত্যক্তা। কামপালার উত্তরে ৫০ কিলোমিটার দূরে কফি বাগান দিয়ে ঘেরা একটা ছোট গ্রামে ঘর বানিয়ে ৩৮ সন্তানকে নিয়ে সংসার মারিয়মের।
মারিয়মের জীবন ছোটবেলা থেকেই কষ্টের। তিন দিন বয়সে তাঁকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন মা। ঠাকুরমার কাছেই মানুষ মারিয়ম। ১২ বছর বয়স হলে তাঁকে এক রকম জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেন ঠাকুরমা। তার এক বছর পরই মারিয়ম যমজ সন্তানের জন্ম দেন। যমজ সন্তান পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন মারিয়ম।
কিন্তু এর পর টানা চার বার তিনি যমজ সন্তানের জন্ম দেন। মারিয়ম বুঝতে পারেন কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। তিনি চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক তাঁকে জানান, তাঁর ডিম্বাশয়ের আকার অত্যন্ত বড় এবং তিনি নিজেও ভীষণ ভাবে ফার্টাইল।
এই অবস্থায় যদি তাঁর গর্ভনিয়ন্ত্রণের অপারেশন করা হয়, তা হলে তাঁর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হতে পারে। কোনও গর্ভনিয়ন্ত্রক ওষুধও তাঁর পক্ষে মারাত্মক হতে পারে বলে জানান চিকিৎসক।
কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না মারিয়ম। ইতিমধ্যেই তখনই তিনি ৮ সন্তানের জন্ম দিয়ে ফেলেছেন। স্বামীকে বিষয়টা জানান। বারবার এ ভাবে একাধিক সন্তানের জন্ম দেওয়াটা বন্ধ হওয়া উচিত বলেও জানান মারিয়ম। কিন্তু স্বামী তাঁর কথায় একেবারেই কান দেননি।
ফলে চিকিৎসকের আশঙ্কাই সত্যি হল। পরপর চার বার ত্রিপলেট (এক সঙ্গে তিন সন্তান) এবং পাঁচ বার কোয়াড্রুপলেট (এক সঙ্গে চার সন্তান)-এর জন্ম দেন মারিয়ম।
আড়াই বছর আগে শেষ বার মা হয়েছিলেন মারিয়ম। সে বারও যমজ সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তাদের মধ্যে একজন মারা যায়। এর পরই তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দেয় তাঁর স্বামী। এর মধ্যে অন্য এক মহিলাকে বিয়েও করে নিয়েছিল সে।
সব মিলিয়ে মোট ৪২ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। তবে তাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছে ৩৮ জন। বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার পর ৩৮ সন্তানকে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন মারিয়ম। জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে তাঁকে যেন দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ভাগ্য। ৩৮ সন্তানকে ভাল শিক্ষা-খাবার কী ভাবে দেবেন সেটাই তাঁকে দীর্ঘ দিন ভাবিয়েছে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি।
তখন তাঁর ঠাকুমা অনেক সাহায্য করেছিলেন। কামপালায় যে বাড়িতে মারিয়মের সংসার এখন, সেটা তাঁকে ঠাকুমাই করে দিয়েছিলেন। ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন মারিয়ম। নানা রকম কাজ করে সংসার চালান তিনি।
মারিয়ম জানাচ্ছেন, সারা পরিবারের জন্য সারা দিনে ২৫ কিলোগ্রাম ভুট্টা লাগে। আর্থিক অনটনের জন্য মাছ-মাংস রান্না হয় না বললেই চলে। বড়রা রান্না এবং ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে। কোন দিন কে কোন কাজটা করবে, তার একটা রুটিন ঘরের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে।
মারিয়মের ঘরের দেওয়ালে সব সন্তানদের ছবি টাঙানো রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা পড়াশোনা অনেক দূর পর্যন্ত করেছে, তাদের গলায় সোনালী চকচকে মালাও পরিয়ে রেখেছেন মারিয়ম।আফ্রিকায় পরিবারের গড় আকার অন্য দেশের তুলনায় বড়। উগাণ্ডাতে প্রতি মহিলার গড় সন্তান সংখ্যা ৫.৬। যা এই মহাদেশের সর্বোচ্চ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে মহিলাদের গড় সন্তান সংখ্যা ২.৪।