কাজী শরীফ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের সামনে হোটেল প্রয়াসের অবস্থান। ওই হোটেলের মালিক দীর্ঘদিন ব্যবসা করার পর এখন বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। কারণ ছাত্রদের তিনি আর বাকিতে খাওয়াতে পারছেন না।
তিনি তার বিকাশ নাম্বার দিয়ে অনুরোধ করেছেন, আখিরাতের চিন্তা করে হলেও যেন তার পাওনা টাকা ছাত্ররা দিয়ে দেয়। আমার এক আইনজীবী বড় ভাই দাবি করেছেন, অলি সাহেব ঢাকা কোর্টে গিয়েও তার পাওনাদার খুঁজছেন। তার কাছে টাকা বাকি রেখে অনেকেই এখন বাসমতি চাল দিয়ে ভাত খান। কিন্তু তিনি মোটা চালের ভাতও খেতে না পেরে আজ অভাবে দিন গুজরান করতে করতে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
কয়েকদিন আগে এফ রহমান হলের ক্যান্টিনের মালিক লিখেছেন, আপনারা দয়া করে খেয়ে টাকা দিবেন। আমার বাজার করার টাকা নাই! কী নিষ্ঠুর আমাদের ছাত্রদের মন। এত কষ্ট করে বাজার করে রান্না করে যারা খাওয়াচ্ছে আমরা তাদের প্রাপ্য টাকা দিই না! অনেকে অলি ভাই কিংবা হলের ক্যান্টিনের মালিকের জন্য মন খারাপ করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে মন আমারও খারাপ।
তবে আমার আশংকা কাজ করছে অন্য জায়গায়। এখন এরা সবাই মিলে দুটো পরিবারকে কিংবা এ হোটেল বা ক্যান্টিনকে ঘিরে থাকা গোটা বিশেক পরিবারকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু একসময় এরাইতো বিসিএস ক্যাডার হবে, পুলিশ, কাস্টমস, ট্যাক্স ক্যাডাররের কর্মকর্তা কিংবা আমার মত বিচারক হবে। কেউ কেউ শিক্ষক হবে। সরকারি বেসরকারি বড় বড় পদে বসবে। তখন এরা টাকার লোভ সামলাবে কী করে? অন্যের হক তাদের কাছে নিরাপদ থাকবে কী করে?
আমি সবসময় ভাবি যারা ঘুষ খায়, চুরি করে, অন্যের হক মেরে খায় তারা ছাত্রজীবনে কেমন ছিল? আজ উত্তর পেলাম। যারা ভার্সিটি হলের টাকা মেরে খায়, অলি ভাইদের নিঃস্ব করে দেয় তারাই সরকারি-বেসরকারি চাকুরিতে গেলে ঘুষ খায়, ধান্দা করে। কাজের বিনিময়ে বেতনের বাইরেও কোটি কোটি টাকা বানিয়ে ফেলে।
অলি ভাইরা কোন একসময় মারা যাবে। উনাদের কবরে শুইয়ে দিয়ে মানুষ বলবে, লোকটা বোকা ছিল কিংবা সৎ ছিল। আর ওইসব লোকজনের মৃত্যুর পর বলবে, চোর মারা গেছে! এটাই অলি ভাইদের অর্জন। একজীবনে এটাও খুব কম পাওয়া নয় কিন্তু!
Courtesy:কাজী শরীফ, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম।