ভাস্কর ডিকে দাশ মামুন
জ্ঞানী-গুণীর বিবেচনা-লব্ধ চিরন্তন সত্য- “স্রষ্টা রচেছেন প্রকৃতি, মানুষ তারমাঝে সৃষ্টি করেছে নগর”। তটিনী কর্ণফুলীর তীর জুড়ে পাহাড়ী ঢালে বহু কালের পুরনো একটি নগর চট্টগ্রাম। বাঙালী জাতির শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সর্বোপরি সভ্যতার অসংখ্য আকরিক মিশে আছে এই চট্টগ্রামে।
এই নগরীর যে শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে তা অতি ধ্রুতলয়ে। সেই প্রলয়ে (!) কত যে অমুল্য সম্পদ, স্থাপনা, ইতিহাস মুছে যাচ্ছে নিত্য দিনের বুলডোজারের নির্মম অত্যাচারে। “ইটের মাঝে ইট/মাঝে মানুষ কীট”- এই সত্যটি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠায় আমরা সময় ও বংশ পরম্পরায় প্রতিস্থাপন করে চলেছি। বহিরাঙ্গের স্রষ্টা প্রদত্ত নৈসর্গিক আবিলতায় এক মহান মুক্তির মাঝে মানুষ নামের স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিটি নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে যেন আর রাজী নয়! চৌহদ্দি রচনার মাঝে আনন্দ আর উল্লাসে, মহোৎসবে মানুষ যেন তার মনুষ্যত্ব, মানবিকতা খুজে ফিরতে ব্যগ্র।
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাধীন সার্বভৌমবাংলার মাটিতে সুচিকিৎসার বাতাবরণ সৃষ্টি করতে চিকিৎসালয় অবশ্যই দরকার। কোভিড ১৯’র চরম দিনে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার অস্থি-হাড়-গোড় পর্যন্ত বিশ্ববাসির কাছে এক্সরের রিপোর্ট হয়ে গেছে। তবে, বুঝতে আমার বিলম্ব হচ্ছে- আকাশ চুম্বী অগনিত অট্টালিকার ভিড়ে সিআরবির মত একখন্ড ঐশী প্রদত্ত প্রাকৃতিক বৈভবের বুক চিরে একটি চিকিৎসালয় বানাতে হবে, এ বড় সেলুকাস! তাই আমার ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে মানবিক ও যৌক্তিক কারণে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে অবস্থান নিলাম।
তার মানে এ নয় যে, হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা না হোক। নগরীর চারপাশে দৃষ্টি দিলে এমন একটি উপযোগী চিকিৎসালয় গড়ার স্থানের অভাব হবে না। মূলত: অভাব হয়েছে ভাবনা বিকাশের। এই প্রলয়, বিধ্বংসী, অমানবিক উদ্যোগ থেকে পরিত্রাণের ত্রাতা হলেনমানবিকতার অতলান্ত সমূদ্র, বঙ্গবন্ধু তনয়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। আমি তাঁর কাছে খোলা এই প্রাণের আর্তিখানা রাখলাম-“সিআরবিতে হাসপাতাল নয়, এখানে গড়ে দিন একচিলতে স্বর্গের নন্দনকানন কিংবা জান্নাতুল ফেরদৌস”। কাউকে দোষারোপ কিংবা কটাক্ষ করার জন্য এই লেখাটি আমি লিখিনি। যারা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আসুন আপনারাও সিআরবিকে ঢেলে সাজানোর রক্ষা করার আন্দোলনে সামিল হই। ধন্যবাদ।
লেখক- ভাস্কর ডিকে দাশ মামুন, গবেষক- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, সন্দীপনা