কাজী ফেরদৌস
প্রকাশ: ২৮/১২/২০২০
২৫ ডিসেম্বর মহামতি যীশুর শভ জন্মদিন। সাধারণ ভাবে যীশুর অনুসারীরা এদিনটি বড়দিন হিসেবে পালন করে থাকে। বর্তমান পৃথিবীতে চারটি একেশ্বরবাদী ধর্মের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ইহুদি ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ও জবুরী ধর্ম। তবে জবুর ধর্মগ্রন্থের কোন অনুসারী পৃথিবীতে এখন আছে কিনা আমার জানা নেই। বাকি তিনটি ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থ গুলো এখনো সজীব ও চলমান আছে। তৎমধ্যে সবচেয়ে সচল বা Most Practising Religion হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। তবে তিনটিম ধর্মই বর্তমানে সচল। তিনটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক ধর্মই একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং এদের আদি পিতা বলা হয় হযরত ইব্রাহিমকে। তবে তিনটি ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলো হযরত মুসা নবীর প্রচারিত ইহুদি ধর্ম। নবী হযরত ইব্রাহিমের বংশধরদের দুটি ধারা থেকে ইহুদি এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের উৎপত্তি। তবে যবুরী ধর্মকে ইহুদি ধর্মের একটি উপধারা বলা যায় কারণ যবুরী ধর্মের প্রবর্তক হযরত দাউদ নবী বা ডেভিড ছিলেন ইহুদি তথা বনি ইসরায়েল জনগোষ্ঠীরই একজন নবী। খৃস্ট ধর্ম ও কিন্তু ইহুদি ধর্মের একটি বাই প্রোডাক্ট বলা যায়।
এই দুটো ধর্মের গ্রন্থ কে একসাথে বাইবেল (পুরাতন ও নুতন নিয়ম)ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিও টেস্টামেন্ট বলা হয় আবার আলাদা ভাবে তওরাত ও ইঞ্জিল বলা হয়। তবে ইহুদি ধর্মের অনুসারীরা নিজদের সেমেটিক জাতি হিসেবে পরিচয় দেয়। ইসলামের জন্মস্থান আরব অঞ্চলের অধিবাসীরা ও সেমেটিক জাতি গোষ্ঠী বলেই আমার ধারণা। কারণ মুসলমানদের আরবি ও ইহুদিদের হিব্রু দুটো ভাষর বৈশিষ্ট্য গত মিল হলো ওগুলো লিখা শুরু হয় ডান দিক থেকে আর শেষ হয় বাম দিকে গিয়ে। নন সেমেটিক সকল ভাষা লেখা শুরু হয় বাম দিক থেকে আর শেষ হয় ডান দিকে গিয়ে। সেই হিসেবে খৃষ্টান ধর্ম আদিতে সেমেটিক জন গোষ্ঠীর ধর্ম হলেও পরবর্তী তে রোমানরা সেই ধর্ম গ্রহণ করার পর সমগ্র ইউরোপের নন সেমেটিক জনগোষ্ঠীর ধর্মে পরিনত হয়।তবে ইহুদিরা মনে করে তাদের ধর্মই এখনও সেমেটিক ধর্ম। এজন্য ইহুদি বিরোধীদের তারা Antisemitic বলে আখ্যায়ীত করে।
এবার আসল কথায় আসা যাক।ইহুদি খৃস্টান ধর্মাবলম্বীরা যদিও চারটি একেশ্বরবাদী ধর্মকে আলাদা ধর্ম মনে করে ইসলাম তথা মুসলমানরা এই চারটি ধর্মকে একই ধর্মের ধারাবাহিকতা মনে করে এবং তৌরাত ও ইনজিল বর্নিত সকল নবী রসুল গন কেই আল্লাহর প্রেরিত হিসেবে স্বীকার করতে হয় এবং তাঁদের ধর্মগ্রন্থ কে ও আল্লাহর প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মানতে হয়।নাহয় মুসলমানের ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। পবিত্র কোরানে অনেক ঐতিহাসিক ঘঠনাবলির উল্লেখ আছে যে গুলো আগে তৌরাত ও ইনজিল শরীফে বর্নিত হয়েছিল। তবে কোরানে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। ইসলামের মতে কোরান এসব ঘটনা গুলোর বর্ননায় ভ্রান্তি নিরসন করেছে মাত্র। যেমন খৃষ্টানদের বিশ্বাস যীশু কে ক্রুশবিদ্ধকরে হত্যা করা হয়েছে। তবে কোরানের ভাষ্য যীশু কে আল্লাহ স্বশরীরে স্বর্গে উঠিয়ে নিয়েছেন।খৃষ্টানদের বিশ্বাস যীশুর মৃত্যুর পর আবার পুনরুত্থান হয়েছিল যে দিবসটিকে তারা ইস্টার সানডে হিসেবে পালন করে । কিন্তু ইসলামের মতে যীশুর পুনরাগমন হবে কেয়ামতের আগে। এবং তিনি ইসলাম ধর্মের পতাকা তলে সমগ্র মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। তখন মানুষের মধ্যে আর কোন ধর্মীয় পার্থক্য থাকবে না।যীশুকে খৃষ্টানরা ইশ্বর পুত্র মনে করে।
ইসলামের মতে অলৌকিক ভাবে আল্লাহর ইচ্ছায় কুমারী মাতা মেরীর গর্ভে যীশুর জন্ম। তৌরাতে বর্নিত অনেক কাহিনি মুসলমানদের মধ্যে ও প্রচলিত। যেমন আদম হাওয়ার সৃষ্টি, হাবিব কাবিলের কাহিনি, আসহাবে কাহাফের গল্প, হিজিরের গল্প এয়াজুজ মাজুজের গল্প ইত্যাদি। বনি ইসরায়েল সম্পর্কে কোরানে একটি আলাদা সুরাই আছে। তিনটি প্রাচীন ধর্মের অনুসারীরা জেরুজালেম তথা বায়তুল মুকাদ্দস কে পবিত্র জ্ঞান করে। এবং ইসলামের প্রথম কেবলা ও ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস। পরে মুসলমানদের কেবলা পরিবর্তন করে আদি পিতা ইব্রাহিম নির্মিত কাবা ঘরের দিকে প্রত্যাবর্তন করে বিশ্বাস এর মূল ধারায় ফিরে আসে। তবে ঐতিহাসিক ভাবে ইহুদি খৃষ্টান ইসলাম তিনটি ধর্মই একেশ্বরবাদী ধর্ম হলেও এবং তিনটির আদি পিতা এক হলেও বর্তমান পৃথিবীতে তিনটি ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বৈরীতা সবচেয়ে বেশি। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ভারতীয় উপমহাদেশ।
এখানে বৈরীতা মুলত হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমিত। এটা পাশাপাশি বসবাসের কারণে। তবে বর্তমান পৃথিবীতে ইসলাম সর্বকনিষ্ঠ ধর্ম এবং অপেক্ষাকৃত নুতন ধর্ম।সুতরাং নুতনের সাথে পুরাতন বিশ্বাস এর চিরন্তন দ্বন্দ্ব এখানে ও দৃশ্যমান।নুতন কিছু মানেই ধরে নেওয়া হয় এন্টিথিসিস। পুরাতন মানেই থিসিস। সুতরাং দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে যায়। যেমন ভারতের নুতন ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচীন সনাতন ধর্ম তথা আর্য ধর্মের হাতে মার খেয়ে ভারতের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। নুতন চিন্তা নুতন ধারণা কে সবসময় সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখা মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ও বটে। শুরু তে খৃষ্ট ধর্মের সাথে ইসলামের কোন বিরোধ ছিল না। বরং ভাল সম্পর্ক ছিল বৈকি।
আবিসিনিয়া তথা বর্তমান ইথিওপিয়ার তখনকার খৃষ্টান শাসক নাজ্জাসী কোরেশদের অত্যাচারে জর্জরিত আবিসিনিয়া হিজরতকারী মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং কোরাইশ সর্দারদের বিরোধিতা সত্বেও পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।তবে ইহুদিদের সাথে বৈরীতা তৈরি হয় মদিনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামি হুকুমতের সাথে ইহুদি গোষ্ঠী বানু কোরায়েজার বিশ্বাস ভঙ্গ ও হায়বর যুদ্ধের কারণে। তবে একসময় সেই বৈরিতা শেষ ও হয়ে যায়।ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের জেরুজালেম বিজয়ের পর পাঁচ শত বছর বহিস্কৃত থাকার পর ইহুদিরা জেরুজালেমে ফিরে আসে। তাদের বহিস্কৃত করেছিল রোমান শাসকরা। এর আগে ব্যাবিলন সম্রাট নেবুচাদ নেজার।সুতরাং মুসলমান শাসনামলে ইহুদিদের জেরুজালেম তথা প্যালেসটাইন থেকে বহিষ্কার তত্ত্ব আসলে একবারেই ভিত্তিহীন ও চরম এক মিথ্যাচার। তবে খৃষ্টানদের সাথে দ্বন্দ্বের শুরু মুসলমানদের হাতে জেরুজালেমের পতন ও রোমান ইস্টার্ন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে মুসলমানদের সামরিক কৌশল গত দ্বন্দ্ব ও সিরিয়া অঞ্চল মুসলমানদের দখলে আসার পর থেকে। যদিও ইসলাম সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী যুদ্ধ সমর্থন করে না তথাপি প্রাথমিক সংঘাত গুলো ছিল মুলত নিরাপত্তা ও কৌশল গত দ্বন্দ্ব। কারণ নবপ্রতিষ্ঠিত ইসলামি রিপাবলিককে আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখার প্রয়োজনে সন্নিহিত অঞ্চলের বৈরী শক্তি গুলোকে রুখে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। সুতরাং ইসলামের প্রথমদিকের যুদ্ধ গুলো ছিল আধুনিক পরিভাষায় Preemptive Strike. এগুলো মূলত কোন ধর্মীয় সংঘাত ছিল না। কিন্তু পরবর্তী উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে ইসলাম তার মৌলিক চরিত্র হারাতে শুরু করে এবং সামন্তবাদী ধারণা গ্রহণ করে সাম্রাজ্য বিস্তারএর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাতেই ইউরোপীয় শক্তির সাথে সংঘর্ষ ও সংঘাত শুরু হলে অনিবার্য হয়ে উঠে ক্রুসেড।সাম্রাজ্য বিস্তার এর যুদ্ধ পরিনত হয় ধর্ম যুদ্ধে।
এতে করে তৎকালীন বিশ্বের প্রধান দুটি ধর্ম ইসলাম ও খৃষ্টান ধর্ম পুরো এক শতাব্দী ধর্ম যুদ্ধে জড়িয়ে যায়।যদিও ইউরোপ, ইস্টার্ন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের যুদ্ধ গুলো ছিল মুলত আদিপত্যবাদী যুদ্ধ। তবে ধর্ম কে এখানে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং এটা মূলত করে ছিল ইউরোপীয় রাজন্য বর্গ পোপ দ্বিতীয় আরবান এর প্ররোচনায় ।তারা দরিদ্র জনগোষ্ঠী কে জেহাদি প্রেরণায় উদ্ভুদ্ধ করতে ইসলাম ও এর নবী সম্পর্কে মিথ্যা ও বিদ্বেষ পূর্ণ অপপ্রচার চালানো শুরু করে। তবে একাদশ শতাব্দীর শুরু তে কুর্দি সেনাপতি সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর হাতে মার খেয়ে জেরুজালেম হারিয়ে খৃষ্টান জগৎ পরবর্তী প্রায় আটশো বছর পূর্ব দিকে আর তাকায় নি।তখন উসমানীয় তুরস্কের খেলাফতের নেতৃত্বে মুসলমানদের বিজয় ধ্বনি ইউরোপ প্রকম্পিত হতে থাকে এবং প্রায় সমগ্র পূর্ব ইউরোপ তুরস্কের অধীকারে চলে আসে।চতুর্দশ শতাব্দীর পর থেকে ইউরোপর জেগে উঠা শুরু হয়। তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লব ও তৎপরবর্তী রেনেসাঁস পুরো ইউরোপের চেহারা পালটে দেয়। সামরিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে এগিয়ে যাওয়া ইউরোপ বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে চলে আসে। পুরো এশিয়া আফ্রিকা তাদের পদানত হয়ে যায়।
তুর্কি খেলাফত ক্ষয় হতে হতে বিলীন হয়ে যায়।প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জেরুজালেম সহ পুরো আরব অঞ্চলের মুসলিম কর্তৃত্ব খৃষ্টানদের হাতে চলে যায়।এই সুদীর্ঘ সময় ইহুদিরা নিগৃহীত হয়েছিল ইউরোপীয় খৃষ্টান জনগোষ্ঠীর হাতে। কিন্তু মেধা ও মননে অগ্রগামী ইহুদি ধীরে ধীরে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ কব্জায় নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তারা খৃষ্টানদের সাথে বৈরীতার অবসান ঘটিয়ে সহযোগী শক্তি হিসেবে অবস্থান নিয়ে বিশ্ব ব্যবস্হার উপর যৌথ কর্তৃত্ব স্হাপন করতে সক্ষম হয়। তাদের যৌথ শক্তির নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয় বিশ্ব ব্যাপী মুসলিম জনগোষ্ঠী। এতে চাপা পড়ে যায় তিন ধর্মীয় গোষ্ঠীর একেশ্বরবাদী ঐক্য চেতনা। যদিও বর্তমান পৃথিবীতে তাদের কাছাকাছি সহ অবস্থান করার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি, অর্থনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ সেটার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তারচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় ইহুদি ও খৃষ্টান জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় দৃষ্টি ভঙ্গির আমূল পরিবর্তন। তারা নবী মুসা এবং ঈসা তথা যীশুর অনুসারী বলে পরিচিত হলেও তারা মূলত কোন ধর্মীয় চেতনা লালন করে না বরং ধর্মের অনুশাসন থেকে যোজন যোজন দুরে চলে গেছে। ধর্ম ও চার্চের মুখে লাগাম পড়িয়ে তারা ধর্মনিরপেক্ষ কার্যত ধর্মহীন রাজনীতির অনুসারী বনে যায়। এটা ইহুদি পণ্ডিতদের আবিষ্কার। অপর পক্ষে ইসলামের অনুসারীরা তাদের ধর্মগ্রন্থের এবং ধর্মীয় অনুশাসন পুরোপরি অনুসরণ করে। বরং এখন আরো কঠিন মৌলিক ধারা অনুসরণের দিকে অগ্রসর হতে চায় বলে পশ্চিমের খৃষ্টান ও ইহুদি জগৎ মনে করে।
ইহুদি পণ্ডিত ওয়াইজ ম্যান লর্ড বেলফোরকে বলেছিলেন আমাদের ফিলিস্তিন যখন সমৃদ্ধ শহর ছিল আপনাদের লন্ডন তখন বরফে ডাকা বদ্ধ জলাশয় ছিল। বাগদাদ শহরে যখন নিজামিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দশলক্ষ বইয়ের সংগ্রহ সহ লাইব্রেরি ছিল বা ভরতে যখন তাজমহল ও লাল কেল্লা হয়ে ছিল তখন লন্ডনে কি ছিল। আপনি হয়ত বিশ/পঞ্চাশ বছর সামনে দেখছেন। ভবিষ্যৎ দর্শন যারা করে তাদের দৃষ্টি শক্তি বহুদূর দেখতে পায়।তার জন্য প্রয়োজন গভীর ইতিহাস জ্ঞান এবং Intuition. এই শতাব্দীর শেষ হতে হতেই বদলাতে থাকবে পৃথিবী। আগামী দু’শ বা তিনশো বছর পর বিশ্বের সামরিক ও অর্থনৈতীর প্রাণকেন্দ্র হবে এশিয়া ও প্যানপ্যাসিফিক অঞ্চল। তবে দৃষ্টি যাদের মোহাচ্ছন্ন তাদের পক্ষে অতদূর দেখা কি সম্ভব?
এই দৃষ্টিভঙ্গীগত মৌলিক পার্থক্যের কারণে তিন ধর্মের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দুরে থাক বরং আগামীতে আরও সংঘাতময় সম্পর্কের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ প্রথম দুটি ধর্মের অনুসারীরা বর্তমানে মূলত বস্তুবাদী পৃথিবীর ধারণা কে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর আর মুসলমান জনগোষ্ঠী বস্তুবাদী ধারণা কে প্রত্যাখ্যান করে ভাববাদী ধারণা নিয়ে অগ্রসর হতে উৎসুক।
ভাববাদী চেতনার সাথে বস্তুবাদী ধারণার কখনো মিল বা আপোশ হতে পারে না। অতএব, চিরাচরিত সংঘাত এর পথেই চলছে তিন একেশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ মানুষ। সুতরাং যীশুর শান্তির বাণী অধরাই থেকে যাবে মনে হয়।
মুসলমান মনে করে পৃথিবীতে আবার নবী মোহাম্মদ (দ) নবী মুসা এবং ঈসার সত্য ধর্ম আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে অপর দুই নবীর অনুসারীরা ধর্ম কে জীবন থেকে নির্বাসনে পাঠাতে বদ্ধপরিকর। তারা ধর্ম গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় বহন করে কিন্তু ধর্মকে ধারণ করতে নারাজ।
কবি ইকবালের কবিতা দিয়ে শেষ করিঃ
তুরের নূর এখনো জ্বলিছে
মুসাই কেবল নাই।
বেথেলহাম এর গীর্জা আছে
ঈসাই কেবল নাই।
হেরার রশ্মি এখনো জ্বলিছে
চেতনাই শুধু নাই।
আগামীর পৃথিবী কোন দিকে মোড় নেয় তা কারো জ্ঞাত নয়। এই শতাব্দী বা এই মিলেনিয়াম কি পৃথিবীর সকল একেশ্বরবাদীদের একতাবদ্ধ হয়ে পৌত্তলিকতা, নাস্তিকতা মোকাবিলা করতে উদ্বুদ্ধ করবে নাকি ধর্ম নামক বিষয় বস্তুকে চেতনার যাদুঘরে পাঠাবে তাও অজানা।
আগামীর পৃথিবীর মানুষের মনোজগৎ ভাব জগতের কি পরিবর্তন আসবে তাও অজ্ঞাত। তবে যীশুর কাঙ্খিত শান্তির পৃথিবীতে সকল মানুষ সুখে থাকুক এই শুভকামনায় সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।।
নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২০
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here