ভোরের সূর্যের সঙ্গে নতুন আলো ঠিকই আলোকিত করবে পুরো দিন। তবে সে আলোতে মিশে থাকবে শোকের তাপ। হৃদয়ে সেই উত্তাপ গ্রহণ করে বিনয় এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি আজ স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাঘন দিন। একাত্তরের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছিল এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের প্রাক্কালে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা হত্যা করে জাতির কৃতী সন্তানদের। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে ফেলা।

পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর হত্যাকারীরা ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই কারও কারও নিকট আত্মীয় বধ্যভূমিতে স্বজনদের মরদেহ খুঁজে পান। পরে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

বুদ্ধিজীবীদের মরদেহজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন, তাদের কারও চোখ-হাত-পা বাঁধা, কারও শরীর ক্ষত-বিক্ষত। মরদেহর ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। অনেকের মরদেহ খুঁজেও পাওয়া যায়নি। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর একটি ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল।

বলার অপেক্ষা রাখে না, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতেন। দেশের জন্য বড় ধরনের অবদান রাখতে পারতেন। কিন্তু ঘাতকদের নির্মমতায় তারা সেটি পারেননি। এটা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় কর্মসূচি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকালে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর তাদের শ্রদ্ধা জানাবেন সকল স্তরের জনগণ।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় বিশেষ অনুষ্ঠান ও ক্রোড়পত্র প্রচার করা হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভাসহ নানাবিধ আয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here