বাদল সৈয়দ

এখন চারিদিকে শুধু চাকুরি হারানোর খবর। এটা করোনার চেয়েও ভয়াবহ দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আমার মতে একজন কর্মচারী ছাটাই না করেও একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে।
নিচে কীভাবে তা পারে তা বলার চেষ্টা করা হলো।

১. চরম দুঃসময়ে আপনি পঞ্চাশ শতাংশ কর্মচারী ছাঁটাই করছেন?
তা না করে বেতন প্রয়োজনে অর্ধেক করে দিন। বলুন,আবার ভালো দিন আসলে আগের বেতনে ফিরে যাওয়া হবে। দেখবেন সবাই মেনে নেবেন। কারণ এমন কি যার চাকুরি টিকে আছে তিনিও চান না, মধ্য বয়সে তাঁর একজন সহকর্মীর চাকুরি চলে যাক।
২. আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জিজ্ঞেস করুন কারা বিনা বেতনে ছমাসের ছুটি নিতে পারবেন? তবে গ্যারান্টি থাকবে যে, ছমাস পর তাঁদের জন্য কাজের জায়গাটি অপেক্ষা করবে। দেখবেন, কিছু কর্মী অন্তত এ সুবিধা নেবেন। এতে আপনি ছমাসের জন্য কিছু অর্থ বাঁচাতে পারবেন।
৩. একইভাবে জিজ্ঞেস করুন, কারা ২৫% বেতনে ছুটি নিতে পারবেন? এ সুযোগও অনেকেই নেবেন। আপনার টাকা সাশ্রয় হবে।
৪. অর্ধেক বেতনে ফিরে আসি। কথা হলো, বেতন অর্ধেক হলে চলবে কীভাবে। সব কর্মীর খরচের তালিকা নিন। তারপর অফিস থেকেই চিহ্নিত করে দেয়া হোক, তার অপ্রয়োজনীয় খরচ কোনগুলো। সেগুলো বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হোক।
৫. প্রয়োজনে অফিস থেকে সবার জন্য একসাথে শুকনো
খাবারের বাজার করা হোক। প্রতিটি কর্মী তাঁর চাহিদা বলে দেবেন। সেগুলো এক করে একটি টিম বাজার করে তা বিলি করবেন। এতে খাদ্য কেনার খরচ অনেক কম পড়বে, যেহেতু পাইকারি রেইটে কেনা যাবে।
৬. উচ্চ পদস্থদের সুযোগ কমিয়ে দিন। তা খরচ করুন নিচের দিকে। এ বাঁচানো খরচ দিয়ে কিছু কর্মীর চাকুরি রক্ষা করা যাবে।
৭. অফিসের বাহুল্য ব্যয় কী তা চিহ্নিত করুন। যেমন চা,বিস্কিট।
এটা খাওয়ানোর দরকার কখনোই খুব বেশি ছিলো না, করোনাকালে তো তা করাই যাবে না। এরকম আরো অনেক বাহুল্য খরচ আছে, যেমন বিদ্যুত, তেল, বিজ্ঞাপন খরচ। এগুলো কমিয়ে আনুন। মনে হতে পারে, এগুলো এমন কীই বা খরচ? কমালেই বা কী?
কথাটা ঠিক না। ছোট ছোট খরচ বাঁচালে কয়েকজন কর্মীর চাকুরি বাঁচবে। তাঁরা পানিতে পড়বেন না। মনে রাখবেন, একবার ক্রাইসিসে পড়ে ‘আমেরিকান এয়ারলাইন’ কৃচ্ছতার যে প্ল্যান নিয়েছিলো, তাহলো যাত্রীদের যে সালাদ সার্ভ করা হয় তা থেকে একটি করে জলপাই কমিয়ে দেয়া। মাত্র একটি ‘জলপাই’ এর দামও আমাদের অনেক সাহায্য করতে পারে।
৮. যারা কর্মী আছেন, তাঁদেরও মালিকের দূর্দশা বুঝতে হবে। কৃচ্ছতার যে নিয়ম তিনি চালু করবেন, তা মেনে নিতে হবে।
৯. ব্যবসার কাজে বিদেশ ভ্রমন বা বায়ার/ প্রিন্সিপালদের দেশে উড়িয়ে নিয়ে আসা করোনার কারণে এমনিতেই বন্ধ থাকবে। তার জায়গায় এখন সব আলোচনা হবে অনলাইন মিটিংয়ে।
এ খরচটা কিন্তু অনেক বড় খরচ ছিলো, বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য। এ বেঁচে যাওয়া টাকা কর্মী ধরে রাখার পেছনে খরচ করা যায়।
১০. মুনাফার টার্গেট দয়া করে অর্ধেক করে ফেলুন। যদি সে লক্ষ্য দশ শতাংশ থাকে তা পাঁচ শতাংশ করে ফেলুন। কিংবা আরো কম। যে লাভ হারাচ্ছেন তারচে চাকুরি বেঁচে যাওয়া কর্মীদের চোখের জলের দাম লাখো গুণ বেশি।
আমরা যেন ভুলে না যাই, আজ যে বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের সকল কর্মীর ঘাম, যা রক্তের মতো দামী।
এ দুঃসময়ে সে ‘রক্তবর্ণ’ ঘামের অপমান করলে তা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
#আসুন মায়া ছড়াই

বাদল সৈয়দ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here