অন্তর মাহমুদ :
সাম্প্রতিক সময়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকদ্রব্য পাচার, স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তথ্য আদান প্রদান, মদ, গাজা, ইয়াবা বিক্রয়, তক্ষক (টুটঠ্যাং) ব্যবসা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিনষ্টসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনায় নিরাপদ বাহন হিসেবে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে স্থান পেয়েছে।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা যেমন বাড়ী থেকে বেড়িয়ে সারাদিন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে রাতে বাড়ী ফিরেন তেমনি একজন ব্যক্তি মালিকাধীন মোটরসাইকেল চালকও প্রতিদিন তার চাকুরি কিংবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে পার্বত্য জনপদের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। চিরচেনা পার্বত্য এই জনপদে দুই ধরনের মোটরসাইকেল চালক থাকায় কারা ঠিক ভাড়াটিয়া মোটরসাইকেল চালক আর কারা ব্যক্তি মালিকানাধীন মোটরসাইকেল চালক তা বোঝা সত্যি কঠিন। আর এই উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভাড়াটিয়া মোটরসাইকেল চালকদের নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড হওয়া দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল। ফলে অপরিচিত ব্যক্তি মালিকানাধীন মোটরসাইকেল চালককে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক ভেবে কেউ সিগনাল (ইশারা) দিয়ে থামতে বলবে না, তখন কাউকে আর বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না। আবার নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড পরিধান করা বাধ্যতামুলক করা হলে সমাজে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা নিয়ে যারা অপরাধমূলক কাজ করে থাকেন তাদের দৌরাত্বও কমবে। ড্রেসকোডে নম্বর থাকার কারণে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের। রাত-বিরাতে কত নম্বর ড্রেসকোডধারী কোন মহল্লায়? কোন ভাড়াটিয়া? নিয়ে গেলো তা এলাকাবাসী সনাক্ত করতে সক্ষম হবে সহজেই। এ ছাড়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঝটিকা গিয়ে কোন অপরাধ করতে সাহস পাবে না অপরিচিত কোন সংঘবদ্ধ চক্র।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা বলেছেন, ইয়াবা, গাঁজা সহ বিভিন্ন অবৈধ মালামাল পরিবহনের অভিযোগে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা ইতিপূর্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার বিষয়টি সকলে অবগত আছেন। চালকদের আগেও ড্রেসকোড ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি মন্তব্য করে তিনি চালকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থেও নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড করার এমন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিরন জয় ত্রিপুরা বলেছেন, এ বিষয়টি ইতিপূর্বে অনেকবার আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। অপরাধ নিয়ন্ত্রনে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার আছে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো: সোহরাব হোসেন তার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেছেন, গত ০৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় মোটর সাইকেল যোগে এসে ইয়াবা সেবনের সময় কতিপয় সেবনকারীকে আটক করা হলেও কেউ কেউ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে। মোটরসাইকেল চালকের গায়ে যদি ড্রেসকোড থাকতো তাহলে পালানো অপরাধী চালককে সনাক্ত করতে সহজ হতো নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে মন্তব্য করে তিনি ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড এর আওতায় আনার অনুরোধ জানান প্রশাসনের প্রতি।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম-ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের নিজস্ব নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড থাকার পক্ষে সহমত পোষন করে বলেন, বিভিন্ন সময় ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের নিখোঁজ হওয়া এবং মাদকদ্রব্য বহন জনিত অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়া নিয়ন্ত্রনে নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড কার্যকরী পদক্ষেপ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।