মুস্তফা নঈম : পাহাড় নদী সমুদ্র এই ত্রিমাত্রিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বন্দর নগর চট্টগ্রাম। বিশ্বের এক প্রসিদ্ধতম স্থান। তার দক্ষিণ–পূর্ব কোণে চৌদ্ধ মাইলের ব্যবধান। স্থানটির পূর্ব সীমায় সবুজে ঢাকা উঁচু–নিচু পাহাড়। দিগন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণে সুবিস্তৃত প্রাচীন জনপদ পটিয়ার চক্রশালা। এটাই আবার মোড় নিয়ে পশ্চিম সীমানায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উত্তরে আঁকাবাঁকা ঐ দূরে বহুদূরের লুসাই পাহাড় হতে উছলে পড়া নদী। রাজকুমারীর কানের ফুল হারিয়ে যার নাম ‘‘কর্ণফুলী”। এই চৌহদ্দীর মাঝখানে যে এলাকা এটাই বোয়ালখালী। ‘‘এক কালের হাওলা পরগনা”। কয়েকজন দরবেশের মাজারে ধন্য। সকল সম্প্রদায়ের মানস কেন্দ্র শ্রীপুর বুড়া মসজিদ, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিখ্যাত ধর্মস্থান কালাচাঁদ ঠাকুরের মন্দির নবজাতকের অন্ন প্রাসনের মাসন কেন্দ্র। রয়েছে কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে চণ্ডীর উদ্ভবস্থান খ্যাত মেধসমুনির আশ্রম। বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দিরসহ মিলিয়ে সর্ব ধর্মের সখ্য সহাবস্থানের এক নিপুণ পুণ্য ভূমি ।
সুপ্রাচীন সময় থেকে শিক্ষা সংস্কৃতিতে অগ্রসর এবং তিরিশের যুববিদ্রোহের রূপকার মাস্টারদা সূর্যসেনসহ বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের চারণ ভূমি ছিল এই বোয়ালখালী। অনেক বিপ্লবীর নাড়ী পোতা মৃত্তিকা। মাস্টারদা সূর্যসেনের গঠিত বিপ্লবী দলের মাস্টার মাইন্ড বিপ্লবী চারুবিকাশ দত্ত, ৩০ শের যুববিদ্রোহ ও জালালাবাদ যুদ্ধে নিহত বিপ্লবী বীর শহীদ হরিগোপাল বল (টেগরাবল খ্যাত), শহীদ মতিলাল কানুনগো, শহীদ প্রভাস বল, বিপ্লবী সুবোধ বল, যুববিদ্রোহের জেনারেল লোকনাথ বল, মধু দত্ত, বিপ্লবী বিজয় সেন, অশ্বিনী কুমার চৌধুরী,সুশীল কুমার চৌধুরী,বিপ্লবী কল্পনা দত্ত, বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদ যতীন্দ্র মোহন রক্ষিত যুববিদ্রোহের অন্যতম সংগঠক সারদা শীল,বিপ্লবী কামাল উদ্দিন খান এমন অনেক অনেক নাম ।
মশহুর কবি করম আলী, যশস্বী ইতিহাসবিদ ড. কালিকারঞ্জন কানুনগো, খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার পূর্ণচন্দ্র সেন, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আশুতোষ দত্ত,নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর শিক্ষক দীক্ষাগুরু খ্যাতিমান শিক্ষক বেনী মাধব দাস,বিখ্যাত দত্ত ভ্রাতৃবৃন্দ ও তাদের মহীয়সী জননী রত্নগর্ভা মুক্তাকেশী। রসিক চন্দ দত্ত ও মুক্তাকেশী দেবী অসাধারণ মেধাবী প্রজন্ম বিখ্যাত ১১ দত্ত ভ্রাতৃবৃন্দর বড়জন ড. রেবতী রমন দত্ত প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তোলেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য স্যার আশুতোষ কলেজ । যা বৃটিশ বাংলায় গ্রামাঞ্চলের সর্ব প্রথম উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। ২১শে পদ প্রাপ্ত খ্যাতনামা কবিয়াল রমেশ শীল, একসময় দেশের চলচ্চিত্র জগতের প্রাণপুরুষ চিত্ত চৌধুরী, ঢোল বাদনের নিপুণ শিল্পী একুশে পদক প্রাপ্ত বিনয়বাঁশী জলদাস, আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষ।
উল্লেখিত এরা ছাড়াও যাঁদের জন্য বোয়ালখালী গৌরববোধ করতে পারে এমন ক’জন মানুষ হচ্ছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মোহাম্মদ ইদ্রিচ, বাংলাদেশের খ্যাতনামা চক্ষু চিকিৎসক ডাক্তার আহমদ শরিফ, ডা.সৈয়দ হারুন,বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আকবরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আবুল আইস,আলী আহমদ কমিশনার, প্রখ্যাত পুঁথি সংগ্রাহক আশুতোষ চৌধুরী, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাহিত্যিক নাট্যকার খ্যাতনামা বংশীবাদক সুচরিত চৌধুরী, খ্যাতিমান কবিয়াল রায় গোপাল, প্রখ্যাত ব্যাংকার ডা. এম এ শাকুর, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আমেরিকার বোস্টন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শরীফ, বোয়ালখালীর প্রথম শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম,মোজম্মেল হক (যিনি ছাতু মিয়া নামে খ্যাত) সাংবাদিকতা পেশায় এই বোয়ালখালীর পথিকৃৎ পুরুষ নুরুল ইসলাম। তিনি ইংরেজি দৈনিক পিপলস ভিউর সম্পাদক ছাড়াও এসোসিয়েট প্রেস অব পাকিস্তানের তৎকালীন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতায় চট্টগ্রামের বিমলেন্দু বড়ুয়া যিনি সুদীর্ঘ সময় আজাদীতে কর্মরত ছিলেন। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. সুনীতি ভুষণ কানুনগো ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে সৃজনশীল প্রকাশনা জগতের কিংবদন্তী প্রতিষ্ঠান ‘বইঘর’ । এক সময় শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিকগন উন্মুখ হয়ে থাকতেন, কখন ‘বইঘর’ তার একটি কাব্য গ্রন্থ,উপন্যাস কিংবা গল্প গ্রন্থ প্রকাশ করবে। তিনি লেখক খ্যাতি পাবেন।
সৃজনশীল এই প্রকাশনা সংস্থা ‘বইঘর’ এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মোহাম্মদ শফি এই বোয়ালখালীর সন্তান । তিনি চট্টগ্রামের বহু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রবর্তী সৈনিক ছিলেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ (আজকের চারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠার অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে যখন বইঘরের স্বর্ণ যুগ সেই সময় যারা এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে বর্তমান বাংলা কাব্য জগতের প্রধানতম কবি আল মাহমুদ ও প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক এখলাস উদ্দিন আহমদ অন্যতম।
(বর্তমানে বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ঢাকাস্থ অনুপম প্রকাশনী স্বত্বাাধিকারী মিলন নাথ ও অ্যার্ডন পাবলিকেশনের মালিক সৈয়দ জাকির হোসাইন, চট্টগ্রামের আবির প্রকাশনের নুরুল আবসার এদের ‘বইঘর’ এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মোহাম্মদ শফির সার্থক ভাবউত্তরাধিকারী হিসেবে ধরে নিতে পারি)।
এমন অনেকের জন্য বোয়ালখালী গৌরবান্বিত। যুগ যুগ আগে নশ্বর এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া বোয়ালখালীর রত্নসন্তানদের নাম উল্লেখ করতে গেলে তালিকা কেবলি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।
ক্ষুদ্র এই তালিকায় এটাই প্রতীয়মান যে তিরিশের যুব বিদ্রোহ,স্বরাজ আন্দোলন, বৃটিশ বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনসহ শিক্ষা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে এই জনপদের মানুষ কি ভাবে সক্রিয় ছিল। অগ্রসরমান পূর্ব পুরুষের প্রবাহমান রক্তধারা এখনো চলমান এই জনপদে। মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরের নিকটবর্তী এই এলাকা গুরুত্ব ছিল অনেক। এই এলাকার অসংখ্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে নিজ এলাকায়, চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে। আমরা তাদের জন্য গৌরবান্বিত।
এই বোয়ালখালীতে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে চারটি কলেজ রয়েছে। বালক ও বালিকা উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে প্রচুর । প্রাথমিকের কথা নাই বল্লাম।
একালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেত্রী কবরী ছাড়াও শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি,ব্যবসা এবং সামরিক বেসামরিক,সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে অনেক বড়পদ অলংকৃত করেছেন অনেকে। এছাড়া আমাদের জানার বাইরেও জীবিত অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন যারা এই পবিত্র মাটির সন্তান। এই বোয়ালখালী অনেক নক্ষত্র সন্তানের জন্মভূমি ।
এই লেখা বোয়ালখালীর ইতিহাস নয়,একটি খণ্ডচিত্র । আমাদের অহংকারের কিছু নাম তুলে আনা মাত্র । যাদের আলোকে আমরা আলোকিত। বোয়ালখালী আলোকিত ।
এই বোয়ালখালীর ভিতরে পূর্ব সীমানার অনতিদূরে একটি গ্রাম ‘‘কানুনগোপাড়া”। নামেই মোগল যুগের পরিচয় মেলে। এই কানুনগোপাড়া আমাকে বার বার টেনে নিয়ে যায় মাটির কাছে, মানুষের কাছে। শ্যামল বাংলার এক শ্যামলিনী কন্যার সোঁদা গন্ধময় শরীরের কাছে। কানুনগোপাড়া আমার স্বপ্নের গ্রাম, স্মৃতির গ্রাম। আমার প্রাণের স্পন্দন। বোয়ালখালীর প্রতিটি সড়ক উপ–সড়ক যেন আমার শিরা–উপশিরা। কানুনগোপাড়া, বোয়ালখালী আমার জীবনের স্বর্ণালী সময়ের জ্বলজ্বলে স্মারক। আমার আবাল্য কৈশোর প্রারম্ভ–যৌবন আমার বেড়ে ওঠা, এই জনপদের ধূলিকণার কাছে জনগোষ্ঠীর কাছে ঋণী হয়ে আছে। এই এলাকার মানুষের মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ, এলাকার আলো বাতাস আমার অস্তিত্বের প্রতিটি রেণুতে প্রোথিত। আমার শিক্ষক পিতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সোলায়মানের কর্মস্থল বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া।যিনি তার সুদীর্ঘ তিনযুগের বেশি সময় ধরে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মময় জীবন কাটিয়েছেন। তিনি এই এলাকার সবুজ শ্যামলিমা, কাজল মাটির সঙ্গে মিশেছিলেন সুনিপুণ বন্ধনে। এলাকার মানুষগুলো ছিল তাঁর অন্তপ্রাণ। পিতার কর্মস্থল আমার বেড়ে ওঠার নান্দনিক স্থান ‘‘বোয়ালখালী”। কড়লডেঙ্গা পাহাড়ের চিরহরিৎ লাবণ্য উত্তর পশ্চিমের কর্ণফুলীর রূপালী জলধারার সুশীতল পরশ বোয়ালখালীর মানুষগুলোকে গড়ে তুলেছে কোমল স্নিগ্ধতায়।
উপমহাদেশের খ্যাতনামা রাজনীতিক বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, তাঁর পিতা খ্যাতিমান আইনজীবী যাত্রামোহন সেনগুপ্ত, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের আরেক লড়াকু রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, বাংলাভাষা আন্দোলনের রূপকার শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম,মুক্তবুদ্ধিচর্চার অন্যতম ব্যক্তিত্ব সাহিত্যিক আহমদ ছফা, স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম বীর সৈনিক কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম যে মাটির সন্তান–সেই চন্দনাইশে আমার পিতামহ প্রপিতামহের আদি বাসস্থান। আমার শিক্ষক পিতার জন্মভূমি।
পিতৃভূমি চন্দনাইশ আমার কাছে শুধুই পিতৃভূমি। তার বিপরীতে বোয়ালখালীর বিরাট একটা স্থান জুড়ে আছে আমার স্বপ্নময় জগতে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে এই জনপদে কানুনগোপাড়ায়। কানুনগোপাড়াকে কেন্দ্র করে নিরন্তর চষে বেড়িয়েছি পুরো বোয়ালখালীর প্রতিটি পাড়ার অলিতে–গলিতে। জ্যৈষ্ঠপুরা সূর্যমেলা,কানুনগোপাড়ায় শিবচতুর্দশী মেলা,শাকপুরার রাস উৎসব,মেধসমুনির আশ্রম, কড়লডেঙ্গা পাহাড়, বোয়ালীকালন্দর দরগার বিষধর সাপের গল্প, শ্যামরায়ের হাট প্রাঙ্গণে প্রবীর চৌধুরী ( যিনি বন চৌধুরী নামে খ্যাত)র নেতৃত্বে ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসবের নাট্যপক্ষে রাত জেগে নাটকদেখা, নাটক করা সবকিছু আজ সোনালী ফ্রেমে বন্দী। এই বসন্ত নাট্য উৎসবে চট্টগ্রামের বাইরের অনেক নাট্যদল তাদের নাটক প্রদর্শন করতো।
বোয়ালখালীর দক্ষিণ–পূর্ব সীমানার পর ইলাদের গ্রাম। ওখানে বুড়া কালী বাড়ি। তারপর উত্তরে কর্ণফুলী নদীর ওপারে বেতাগী গ্রাম। কর্ণফুলী নদীর উজানে যাওয়ার পথে জ্যৈষ্ঠপুরার পেছনে ‘‘কুশাইল্যামুড়া”। নদীর কোমর ধরে প্রেমিক যুগলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বড়ো মনোরম এক দৃশ্য। পর্যটনের এক নান্দনিক স্পট।
এই জনপদ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক রুচিবোধের শুদ্ধতায় একদিন পরিপূর্ণ ছিল। এখানে কানুনগোপাড়া বান্ধব পাঠাগার ও পোপাদিয়া সাধারণ পাঠাগার, কধুরখীল,শাকপুরা গ্রামেও ছিল এমন পাঠাগার। এসব পাঠাগার ছিল সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র বিন্দু। এগুলো সব ব্রিটিশ কালের।
এই বোয়ালখালীতে পিসি সেন সারোয়াতলী হাই স্কুল, মুক্তকেশী বালিকা বিদ্যালয়, ড. বিভূতিভূষণ হাই স্কুল, কধুরখীল হাই স্কুল, শাকপুরা আদর্শ হাই স্কুল সর্বোপরি স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ, এসব হচ্ছে সেই ব্রিটিশ কালের। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে স্কুল পর্যায়ে প্রথম শহীদ মিনার গড়ে উঠে এই বোয়ালখালীর কদুরখীল হাই স্কুলে। শহীদ মিনার স্থাপনের কারণে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের বিরূপ আচরণের শিকার হতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে । আর যে সকল ছাত্র এই শহীদ মিনার গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের অবস্থা ছিলো আরো নাজুক।
বোয়ালখালী শহরতলী একটি বড় গ্রাম। বর্ধিষ্ণু এই এলাকাটাকে কর্ণফুলী নদীটাই বিভাজিত করে শহর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কেবল মাত্র একটি সড়ক সেতুর অভাবে অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও উন্নয়নের সকল সুযোগ থেকে পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে জনসংখ্যার ভারে ন্যুয়ে পড়া শহর চট্টগ্রামের সম্প্রসারিত নগরীর অংশ হতে পারে নগরগাঁয়ে জড়িয়ে থাকা বোয়ালখালী। বোয়ালখালীর পূর্বে অংশে বিস্তৃর্র্ণ কড়লডাঙ্গা পাহাড়। এই পাহাড়কে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে পারে সবুজ শস্যের গোলা।ফলের বাগান। সাম্প্রতিক সময়ে বোয়ালখালী–কালুরঘাট সেতুর দাবিতে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। হয়তো একদিন এই সেতু বাস্তবায়িত হবে।
আমি চাইনা আমার স্বপ্নের গ্রাম অনন্তকাল গ্রাম থাকুক, পিছিয়ে পড়ুক সকল উন্নয়ন থেকে। সবুজ শস্যের ক্ষেতে দোলা দিয়ে যাওয়া হাওয়ার মতো একদিন উন্ন্য়নের হাওয়ায় দোল খাবে আমার বোয়ালখালী।
আমার স্মৃতির গ্রাম আমার ভালোবাসা, হৃদয়জুড়ে চিত্রার্পিত এক ক্যানভাস ‘‘বোয়ালখালী”। নিরন্তর ফুল ফোটার জৌলুস নিয়ে বসন্ত আসুক আমার স্বপ্নের গ্রামে।
লেখক : চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, দৈনিক কালের কণ্ঠ ।