স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, স্মার্ট সিটি হচ্ছে সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট। এর তিনটি পিলার- সবার জন্য, পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা। গণপরিবহন নেই কিন্তু ফ্লাইওভারের বন্যা বসানো আহাম্মক শহরের কাজ। চট্টগ্রামকে হত্যা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সময় নির্ভরতা দেখা হচ্ছে না প্রকল্পে। ফ্লাইওভার কার জন্য। সেখানেও বন্যা হয়! চট্টগ্রামকে ঢাকার আগে প্রস্তুত হতে হবে। যা আমি তেমনভাবে দেখছি না। কিন্তু সরকারের কার্পণ্য নেই।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে তৃতীয় চিটাগাং আইটি ফেয়ার উপলক্ষে আয়োজিত ‘স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথি ছিলেন এলজিইডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, চুয়েটের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

মূল প্রবন্ধে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন হতে পারে। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হতে পারে। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ব্লু ইকোনমি হতে পারে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহর এলাকা বাড়াতে হবে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা সিদ্ধান্তহীনতা। এখানে গণপরিবহন নেই। মেলা করার জায়গা নেই। ট্রাক-বাস টার্মিনাল নেই, সড়ক দখল করে থাকে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। সীতাকুণ্ড-মিরসরাইয়ে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমদ বলেন, ৬০ লাখ মানুষের শহর চট্টগ্রাম। শহরকে বাসযোগ্য করতে হবে। এটি রকেট সায়েন্স নয়। যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা কঠিন নয়। বিমানবন্দর থেকে শহরে আসতে আড়াই ঘণ্টা লাগে। বেসিক চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

আমিরুল হক বলেন, স্বপ্ন দেখি সিঙ্গাপুর, পানির নিচে মুরাদপুর। পোর্ট কানেকটিং রোডটি করতে পারিনি। সারাদেশের ট্রাক যাবে বন্দরে। ফ্লাইওভার করলেন, মুক্তি যদি না পান লাভ কী! টাকা পানির মতো নিচে যায়, বিনিয়োগকারীকে নিরাপত্তা দিতে হবে। বে টার্মিনালের দিকে নজর দিতে হবে।

মন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, পাবলিং হিয়ারিংকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বিদেশে। এখানে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় নেই।

চেম্বারের পরিচালক মি. তানভীর বলেন, স্মার্ট সিটির জন্য স্মার্ট নাগরিক চাই। এ চেম্বারের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’র উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ১০০ বছরের চিন্তা করে যেকোনো উন্নয়ন কাজ করতে হবে।

সমকাল সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, সাবলীলভাবে বসবাসযোগ্য শহর স্মার্ট সিটি।  রাজধানী শহর মেরে ফেলেছি। চট্টগ্রামের অবস্থাও ভালো নয়। চিন্তার মধ্যে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এখানে চসিক, সিডিএ, ওয়াসার প্রতিনিধি থাকা উচিত ছিলো। বিমানবন্দর থেকে আসার পথে দেখেছি, নদী দখল হচ্ছে। সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। সবাই মিলে এ শহর রক্ষার চেষ্টা করেন।

ইনকিলাব সম্পাদক এএম বাহাউদ্দিন বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনায় সোসাইটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। চট্টগ্রাম প্রাচীন নগর৷ সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ভুটানের থিম্পুতে ১০ বছর ক্রাইম হয়নি। রুয়ান্ডায় ট্রাফিক আইন এতো কড়া, আইন ভাঙলে ছাড় নেই। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট আছে কিনা, ঢাকার ফ্লাইওভারে বাতি জ্বলে না। চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারের পানি জমার ছবি বিশ্ব দেখেছে। লজ্জার বিষয়। সমস্ত উন্নয়ন চিন্তা ঢাকাকেন্দ্রিক। আমার মনে হয়, চট্টগ্রাম আগে স্মার্ট ছিলো। বিমানবন্দর থেকে জামালখান যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগেছে। মহিউদ্দিন ভাই চট্টগ্রামের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। তার সন্তান নওফেল আছেন। চেম্বারে নতুন প্রজন্মের পরিচালকেরা এসেছেন। সবাই মিলে স্মার্ট সিটি কনসেপ্ট নিতে হবে। পঞ্চগড় জেলা শহর, দুপুরে ভাত খাওয়ার হোটেল নেই। ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে পুরো দেশ গ্রাম।

চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখে প্রকল্প নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here