মাজার নির্মাণ বিরোধী বেশ কিছু কমেন্ট ‘ফেবুতে’ দেখতে পেলাম।
সেখানে কিছু হাদিসের উদৃতিও দেওয়া হলো।একটি হাদিসে দেখানো হলো, ‘কবররের উপর ঘর বানাতে নিষেধ’।
*** হ্যাঁ, এটা নিষেধ ছিল থাকার ঘর বা বসবাস করার ঘরের জন্য।অর্থাৎ কবরের উপর কেউ ঘর তৈরি করে বসবাস করা নিষেধ।
এটার আরবী হলো ‘বেনা আ’লাল্ কুবূর’।এটা হানাফী হাযহাবে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ।
*** অপর একটি হাদিসে উঁচু কবর সমান করার জন্য রসূল সাঃ এর নির্দেশটি ফতেহ মক্কার বছরের ঘটনা।অর্থাৎ মক্কায় তখন মুশরিকদের উঁচু কবর গুলো ভাংগার আদেশ দেয়া হয়েছিল।
সকলেই জানেন,ফতেহ মক্কায় কোন যুদ্ধ হয়নি।সেখানে কোন সাহাবাও শাহাদাত বরণ করেন নি বা ইন্তেকাল করেন নি।কাজেই তখন মক্কায় কোন সাহাবার কবর থাকার প্রশ্নই উঠে না।যদি কোন মুসলিম তখনকার সময়ে মক্কায় ইন্তেকাল করেও থাকেন সেক্ষেত্রে মুশরিকরা মুসলিমদের কবর পাকা করার সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবাই যায় না। সুতরাং মানতেই হবে রসূল সাঃ এর সেই আদেশ মুশরিকদের উঁচু কবর ভাংগারই আদেশ ছিল।
****আর রসূল সাঃ এর সাহাবাদের উঁচু কবর, হযরত ওসমান রঃ সহ রসূল সাঃ এর সন্তানদের পাকা বা উঁচু কবর নেই বা ছিল না বলে যে মিথ্যাচার টি করা হয় তা আসলে ডাহা মিথ্যা।জান্নাতুল বকী আর জান্নিতুল মুয়াল্লার সব উঁচু কবর আর মাজার এবং মা ফাতেমা রঃ এর মাজার ভেংগেছে সৌদি সরকার,তাও মুঃ বিন আঃ ওহাব নজদীর আদেশে।মাত্র দেড় শত বছরের কিছু আগে।
যদি রসূল সাঃ মাজার ভাংগার আদেশ দিতেন তা হলে পৃথিবীর কোথাও কোন নবী রসূল কারো মাজারই অবশিষ্ট থাকত না।কারণ রসূল সাঃ এর সময়কাল হতে হযরত ওমর রঃ এর সময়কাল পর্যন্ত পুরা আরব ভূখন্ড জুড়ে অসংখ্য নবী রসূলের মাজার বিদ্যমান ছিল।রসূল সাঃ সত্যিই যদি মাজার ভাংগার আদেশ করে যেতেন তাহলে হযরত ওমর রঃ তিনি কোথাও একটি মাজারও অবশিষ্ট রাখতেন না।অথচ সারা আরব বিশ্বজুড়ে অসংখ্য নবী রসূলের মাজার এখনো বিদ্যমান। কাজেই হাদিসের এক পিঠ পড়ে অন্য পিঠের খবর না নিয়ে নিজেকে হাদিসের পন্ডিত মনে করা পাগল আর গন্ড মূরখদের অভ্যাস।
সুতরাং কিছু বাংলা শিক্ষিত কিছু দুশমনে রসূলদের মধ্যে আবাল বক্তার বক্তব্যে প্রলুব্ধ হয়ে ‘গুগল’ ঘেটে ঘেটে হাদিস বের করে করে বিশ্ব নন্দিত আলেম ওলাদের সাথে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করা মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ মাত্র ।
তা না হলে হযরত আলী রঃ থেকে শুরু করে হযরত ইমাম হোসাইন রঃ,হযরত উয়াইসুল করনী,ইমাম আজম হযরত আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ,ইমাম তিরমিজী,হযরত আবদুল কাদের জিলানী প্রমুখ সাহাবা তাবেঈন,তাব্এ তাবেঈন,আইম্মায়ে মুজতাহেদীন,আইম্মায়ে হাদিসএবং আউলিয়ায়ে কামেলীনের কারো মাজার তৈরিও হতো না।
এবং সেগুলো চৌদ্দশত বছর ধরে টিকেও থাকতো না।
যদি কেউ বলেন,যারা মাজার বানায় তারা জাহান্নামী,তা হলে হযরত ইমাম বুখারি সহ সমস্ত হাদিসের ইমামদের সকল ছাত্ররা জাহান্নামী হবে(নাউযু বিল্লাহ)।
যদি কেউ বলেন, তোমরা কোরআন আর হাদিসে কি আছে, সেটা দেখ।পৃথিবীতে কোথায় কে কি করেছে,সেটা ইসলাম নয়।তা হলে বলতে হয়,কোরআন আল্লাহর কালাম,আর হাদিস রসূল সাঃ এর বাণী।কিন্তু কোরআন এবং বিশাল হাদিসের এত বড় ভান্ডার ছাপাখানা তৈরি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শত শত বছর যাবৎ কাদের কলমে লিপিবদ্ধ হয়ে বর্তমান পর্যন্ত এসেছে?
নিশ্চয় যারা মাজারে শুয়ে আছেন তারা এ কাজগুলো করেছেন, আরা যারা তাদের পরবর্তী উত্তরসূরি হাদিসের ইমাম গণের শাগরেদরা যারা মাজার নির্মাণ করেছেন,যারা মাজারের ইজ্জত করেছেন তারাই তো আমাদের বর্তমান সময় পর্যন্ত কোরআন এবং হাদিসকে ধারণ করে, হৃদয়ংগম করে আর হাজার হাজার হাতের লিখায় কপি করে আমাদের পূর্ববর্তী বাপ দাদা,পরদাদাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
এখন বলতে হয়, তা হলে তারা কেউ ইসলাম বুঝতেন না?
তারা কোরআন হাদিসের বিধি নিষেধ জানতেন না?
যদি বলা হয়, উনারা সবাই আল্লাহর রসূলের হাদিসের বিরোধিতা করেছেন। যেখানে উঁচু কবরও অবশিষ্ট না রাখতে আদেশ করা হলো,সেক্ষেত্রে তারা কিনা মাজার বানিয়ে ছাড়লেন?
তা হলে তো তাদের ফতোয়া মতে উনারা সবাই বিদ্আতি, মুশরিক আর জাহান্নামী।
ওহাবী আর সালাফীরা
ইমাম বুখারি রহঃ এর হাদিসগুলো মানেন,কিন্তু উনার মাজার তাদের পছন্দ না।
কথাটি এমন হলো, বাবার রেখে যাওয়া জায়গা জমি,গাড়ি বাড়ি,ব্যংক ব্যালেন্স সব কিছু ছেলেদের কাছে খুব প্রিয়,কিন্তু বাবা কিংবা বাবার স্মৃতি তাদের মোটেও পছন্দ না।
সেই কারণেই তো মাজার বিদ্বেষীদেরকে অনেকেই বেজন্মা বলে গাল মন্দ করতে বাধ্য হয়।
আল্লাহ্ সকলকে সুমতি দান করুন।
নিবেদনে:-
সৈয়দ মৌলানা মুফতি সাজেদ উল্লাহ আজিজী, এমএম,এমএফ,বিএ(অনার্স)এমএ(ফার্স্টক্লাস)
অধ্যক্ষ-বেংগুরা সিনিয়র মাদ্রাসা, বোয়ালখালী ।
নোট: মতামতের জন্য লেখকের এফবিতে যোগাযোগ করুন-সম্পাদক