- মেয়র হিসেবে অন্তর্বর্তী সময়ের দায়িত্ব নিচ্ছি: ডা. শাহাদাত হোসেন
- মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ট্রাস্টিবোর্ড গঠন
পট পরিবর্তনে আবারও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন! ২০০১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৬ সালে তা চলে গিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাতে। পরবতীর্তে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নেতৃত্বে কর্তৃত্ব নেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যসহ তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পদত্যাগ করায় আবারো পরিচালনায় আসছে সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক একজন মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে তা পরিচালনা করে আসছিলেন।’
তাহলে এখন আপনি (মেয়র) কিভাবে তা পরিচালনা করবেন? সরকারের পক্ষ থেকে কি কোনো নির্দেশনা এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কেউ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত কি হবে? তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। তাই সিটি মেয়র হিসেবে অন্তবর্তী সময়ের জন্য আমরা তা পরিচালনা করবো।’
সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চেয়েছি আশা করছি শিগগিরই এবিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। এখন গুরুত্বপূর্ণ এই তিন পদ শূন্য হলে বিশ্ববিদ্যালটি কে পরিচালনা করবেন? এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এক চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক চেয়ারম্যান জানান, উপাচার্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের কাজও তিনি করবেন। সুতরাং এখানে শূন্যতা বলে কিছু নেই।
এদিকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দাবি করে তা পরিচালনার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের জন্য সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেন। সেই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০০১ সালের ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। সেই থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়। তখন সেই চিঠিকে ইস্যু করে তখন আদালতে রিট মামলা করেছিলেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (তিনি মেয়র হিসেবে ২০০১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন) ২০১৯ সালে সেই রিট খারিজও হয়ে যায়। কিন্তু তখন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি নিজেই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নিয়ে নেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এর পরিচালনা সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সিটি কর্পোরেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় —১ এর উপ—সচিব ফরহাদ হোসেন ২২ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে মতামত চাওয়া হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির বিশেষ সভায় গত রবিবার মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছেন, কর্পোরেশনের টাকায় এবং জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৩ সালেও চসিকের নিজস্ব ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমি কেনা হয়েছে। তাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এবং চট্টগ্রামের জনগণের সম্পত্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনায় কারা থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় সদ্য পদত্যাগ করা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সাথে। তিনি বলেন,‘ নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড তা পরিচালনা করে।’
এখন ট্রাস্টি বোর্ড কে গঠন করবে? জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরর অনুমোদন পেলে আমরা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবো। আর অনুমোদনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়টি মেয়র হিসেবে তা পরিচালনা করা হবে।’
২০০১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী উদ্যোক্তা হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মেয়র পদ চলে যাওয়ার পর মনজুরুল আলম মঞ্জু মেয়র থাকাকালীন সময়ে বিদায়ী মেয়র হিসেবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু ২০১৫ সালে আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র পর মেয়র হিসেবে পদাধিকার বলে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান আ জ ম নাছির উদ্দিন দায়িত্ব বুঝে নেন। আর তখন থেকেই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে বিরোধ শুরু হয় সিটি কর্পোরেশনের। মামলা রিট মামলায় চলতে থাকে এবং মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের হাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব। এখন তা আবারো নিজের কাছে নিতে চাইছে সিটি কর্পোরেশন। প্রবর্তক মোড়ে নালার উপরে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও পরবতীর্তে ওয়াসা মোড়ে সিটি কর্পোরেশনের ভবন এবং জিইসি মোড়ে নিজস্ব জায়গায় ক্যাম্পাস গড়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনসহ ৩ জনের পদত্যাগ