অনলাইন ডেস্ক : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় আর জিপিএ ৫ পাওয়ার সুযোগ থাকছে না। আগামী জেএসসি পরীক্ষা থেকেই কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ- সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার সময় বা ব্যাপ্তিও কমিয়ে আনা হবে। এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে পরীক্ষা নেওয়া থেকে সরে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গতকাল আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক ও পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বৈঠকসূত্র এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবলিক পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছিলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বোর্ডগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমতে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (সিজিপিএ) পদ্ধতি রয়েছে। সর্বোচ্চ গ্রেড সিজিপিএ ৪ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল প্রকাশ করা হয়। আর প্রাথমিক সমাপনী, ইবতেদায়ি সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমান, এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমানে জিপিএ পদ্ধতি চালু রয়েছে।

এসব পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড-৫ ধরে ফল নির্ধারণ করা হয়। বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও গ্রেড সিজিপিএ-৪ নির্ধারিত রয়েছে। বর্তমানে এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলে কেন্দ্রগুলোতে বন্ধ থাকে ক্লাসসহ অন্য একাডেমিক কার্যক্রম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছাত্র-ছাত্রীরা। এ ক্ষেত্রে একটি পরীক্ষার পর অন্য পরীক্ষার বিরতি কমিয়ে আনা হবে। এক পরীক্ষার পর অন্য পরীক্ষার মধ্যকার ছুটি বাতিল করা হবে। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, পরীক্ষা সম্পন্ন করতে প্রায় দেড় মাস সময় চলে যায়। এ সময়ে পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। গত বছর জুলাইয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো পরীক্ষা শেষ করতে দুই মাস সময় লেগে যায়। সময় কমিয়ে আনতে পারলে শিক্ষার্থীরা আরও মনোযোগী হবে। পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুজব আর অপপ্রচার থেকেও মুক্তি মিলবে।

গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি জিপিএ-৪ এর ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারণের প্রস্তাবনা তুলে ধরলে শিক্ষামন্ত্রী এতে সমর্থন দেন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ জিপিএ-৪ নির্ধারণ এবং পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক ও পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা জমা দেব। পরে এসবের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এখন থেকে পরীক্ষার প্রায় ছয় মাস আগেই রুটিন প্রকাশ করা হবে। এক পরীক্ষার পর অন্য পরীক্ষার গ্যাপের (বন্ধ/ছুটি) কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। জেএসসি, জেডিসি আট থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, একটি পরীক্ষার পর দুই-চার দিন বন্ধ বা গ্যাপ রাখা অনাবশ্যক। পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা যুগোপযোগী ও ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা এক দিনে দুটি করে পরীক্ষা দিয়েছি। এ ছাড়া পাবলিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জিপিএ-৪ করা হলে এটি হবে আন্তর্জাতিক মানের। বিদেশের শিক্ষাব্যবস্থার গ্রেডিং পদ্ধতির সঙ্গে সমান্তরাল হবে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সর্বোচ্চ সিজিপিএ-৪ নির্ধারিত রয়েছে।

এ ছাড়া বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিধিমালা, শিক্ষা বোর্ডগুলোর অর্গানোগ্রাম যুগোপযোগী করাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here