অনলাইন ডেস্ক : আগামী অর্থবছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে আশা প্রকাশ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে এ আশা প্রকাশ করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে তেমন কোনো উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করি নাই। এটা দেশবাসীকে অবহিত করাটা প্রয়োজন মনে করছি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব করেন। আজ বিকেল ৩টার পর বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরুর পর বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের কর রাজস্ব এবং বাৎসরিক সম্ভাব্য অর্থ প্রাপ্তির ওপর কথা বলব। আমাদের সরকারের কর রাজস্ব আহরণের মূলনীতি হচ্ছে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করতে হবে। তবে সেটি করের হার বাড়িয়ে নয়। বরং সেটি করতে হবে করের আওতা বিস্তৃত করে। এ কাজটি করার লক্ষ্যে দেশের সকল উপজেলা, প্রয়োজনে গ্রোথ সেন্টারসমূহে আমার প্রয়োজনীয় জনবল ও সহায়ক অবকাঠামোসহ রাজস্ব অফিস স্থাপন করব।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ভ্যাট আইন আগামী অর্থবছর ২০১৯-২০ থেকে আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এই আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবলসহ আনুষঙ্গিক সব সহায়তা আমরা নিশ্চিত করব।’

কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ছে মাত্র ১ কোটি টাকা!

কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মহল থেকে ভর্তুকি বাড়ানোর দাবি থাকলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। খাতটিতে এবার ভর্তুকি ও প্রণোদনার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯ হাজার ১ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এখাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত বাজেটে কৃষির জন্য ভর্তুকির এ প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতা থেকে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি ও প্রণোদায় খরচ হবে ৯ হাজার ১ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেই ভর্তুকি কমে ৮ হাজার ৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন অর্থবছরে কৃষিখাতে বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের খাতওয়ারী মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ কৃষিখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।

বরাদ্দ বেড়েছে স্বাস্থ্যে

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। যা কিনা বর্তমানে ২০১৮-১৯ বছরে ছিল ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হয় জাতীয় সংসদে। মূল বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, এটি জিডিপির ১৮.১ শতাংশ।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণসংক্রান্ত কার্যক্রম ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা জিডিপির এক দশমিক ২ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৫.৬৩ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।’

এমপিওভুক্তির দ্বার খুলছে, বরাদ্দ বাড়ল শিক্ষাখাতে

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রম ফের চালু হতে যাচ্ছে। এ জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় এ তথ্য জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বাজেট বক্তৃতা পড়েন।

বাজেট বক্তৃতায় জানানো হয়, নানাবিধ কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এমপিওভুক্তি কর্যক্রমের জন্য অর্থের যোগান রাখা হয়েছে।

এবারের বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৬.৭৫ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.০৪ শতাংশ।

এরমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা গত বাজেটে ছিল ২০ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও ‍উচ্চ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, যা গত বাজেটে ছিল ২৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা গত বাজেটে ছিল ৫ হাজার ৭৫৮ কেটি টাকা।

বাজেটের এ অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

বাজেট বক্ততায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, গুণগত উৎকর্ষ সাধান ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ছাত্র/ছাত্রীর ঘাটতি নেই। ঘাটতি দেখা দিয়েছে উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের। প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার সর্বস্তরে উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কাছে শিক্ষা ব্যবস্থা হস্তান্তর করতে চাই।’

গ্রাম পর্যায়ে শহরের সুবিধা দিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ

নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮ তে বর্ণিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ধারণাটিকে ভিত্তি করে গ্রামের সকল বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখে গ্রাম পর্যায়ে সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব করেন।

আজ বিকেল ৩টার পর বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরুর পর বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে  বাজেট উপস্থাপনের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখিত বাজেটবক্তব্য শেষ করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট এটি। গত ১১ জুন একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন (বাজেট অধিবেশন) শুরু হয়।

উত্থাপিত বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে জানোনো হয়, গ্রাম হবে শহর স্লোগানকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার পল্লী উন্নয়নকে রেখেছে অগ্রাধিকার তালিকায়। নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮ তে বর্ণিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ধারণাটিকে ভিত্তি করে গ্রামের সকল বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র ও ওয়ার্কশপ স্থাপন, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাতকরণ ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।

এছাড়া বলা হয়, পল্লী এলাকায় উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ তৈরি, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানসহ প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি প্রদান এবং নাগরিক জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগে নেওয়া হবে। এ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের জন্য আমারা প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ব্যবস্থা করবো।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here