আবো. প্রতিবেদন:
প্রকাশ- ২৮/১/২০২১
একজন সৎ, ত্যাগী, পরিছন্ন ও নিভৃতচারী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে নেতা থেকে নগর পিতার আসনে অলংকৃত করলেন।
২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মেয়র পদে নির্বাচনের এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে বিজয়ী রেজাউল করিম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট এবং বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট।
এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও ডা. শাহাদাতের ভোটের ব্যবধান তিন লাখ ১৬ হাজার ৮৫৫। অবশ্য ভোটগ্রহণের হার ছিল ২২ শতাংশ। এবারের চসিক নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং নারী ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল রেজাউল করিম চৌধুরী একজন সৎ, ত্যাগী ও পরিছন্ন রাজনীতিবীদ হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী আওয়ামী লীগের ক্রান্তিলগ্নে এমনকি এক এগারোর সময়ে নেতা-কর্মিদের পাশে থেকে মনোবল যোগীয়েছেন এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করে গেছেন। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি তিনি।
বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক প্রবীণ এই রাজনীতিবীদ ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন জমিদার বংশ সম্ভ্রান্ত মুসলিম বহরদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও দাদা ছালেহ আহমদ ছিলেন ইংরেজ শাসিত ভারত এবং পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও চট্টগ্রামে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বিলুপ্ত কমরেড ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া তাঁর পূর্ব পুরুষেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ২৩টি মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯৬৭ সালে কলেজ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭০-১৯৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১নং সেক্টরের বিএলএফ-এর মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। ওই সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালী থানা এলাকায় সরাসরি যুদ্ধ করেন।
১৯৭৩-১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে ৬নং ওয়ার্ড পূর্ব ষোলশহর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে (এসএসসি), চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে (এইচএসসি), চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে (ব্যাচেলর অব আটর্স)-এ ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ লড়াইয়ে নেমে পড়াশুনায় আর এগুতে পারেন নি।
১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাএলীগে যোগদানের পর তিনি একাধারে ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৭০-১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ পরবর্তী ১৯৭২-১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭২-১৯৭৩ উত্তর জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, (১৯৭৩-১৯৭৫ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক), (১৯৭৬-১৯৭৮ সালে সাধারণ সম্পাদক, এবং ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, ১৯৯৭-২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এবং ২০০৬-২০১৪ সাংগঠনিক সম্পাদক, বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম নাগরিক আন্দোলনের আহবায়ক, চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও চট্টগ্রামের দুঃখ নামে খ্যাত চাক্তাই খালখনন সংগ্রাম কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের আহবায়ক এবং পরবর্তীতে সভাপতি ও কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯১-১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিজয় মেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক, ২০১১ সালে মহাসচিব এবং ২০১৪ সালে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ষাটের দশক ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের বছর। ষাটের দশকের শেষের দিকে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন চুড়ান্ত পরিণতির দিকে যখন এগিয়ে গিয়েছিল। তখন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের অগ্রসেনানী ছিল পূর্ব পাকিস্তান (তৎকালিন) ছাত্রলীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। ওই সময়ে অথ্যাৎ ১৯৬৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী সেলিনা আক্তার, দুই মেয়ে : তানজিনা শারমিন নিপুন (শিক্ষক-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ও সাবিহা তাসনিম তানিন (ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন), এক ছেলে ইমরান রেজা চৌধুরী (ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে অধ্যয়নরত)। সূদীর্ঘ পথ পরিক্রমার এই বর্ষীয়ান সৎ ও পরিছন্ন রাজনীতিবীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে অবশেষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে (নগরপিতা) মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ি করেছেন।
বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়াই আলোকিত বোয়ালখালী পরিবােরর পক্ষ থেকে প্রানান্ত অভিনন্দন জানানোা হল।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here