আলোকিত ডেক্স:

ইয়া নবী সালামু আলাইকা…, ছবছে আলা ওয়ালা হামারা নবী…, এমন সু-মধুর নাত পরিবেশন করতে করতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণ, বিভিন্ন ভাষায় হামদ-নাত আর দরুদে মুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস। জুলুসকে ঘিরে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

জুলুসের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণে সাজে নগরের মোড়, সড়কদ্বীপ ও সড়ক বিভাজক। লাখো মানুষের অংশগ্রহণ, হামদ-নাত আর দরুদে মুখর পরিবেশে জুলুসে লাখো মানুষের ঢল নামে। জুলুসে শিশু কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষের অংশগ্রহণে একাকার হয়ে পড়ে নগরীর রাজপথ।

জুলুসে চট্টগ্রামের যেসব রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ থাকবেআখতারুজ্জমান ফ্লাইওভার, সড়কের দুই পাশ, ফুটওভার ব্রিজ, বাসাবাড়ির ছাদে শুধু মানুষ আর মানুষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত মুসল্লিদের ভিড় ছিল সারাদিন। গত ২০ অক্টোবর সকাল পৌনে ৯টায় নগরীর মুরাদপুর আলমগীর খানকাহ্‌-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে বের হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) জশনে জুলুস।

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় জশনে জুলুস
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় জশনে জুলুস

জুলুসে নেতৃত্ব দিয়েছেন হযরতুল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ)। আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউছিয়া কমিটির ব্যবস্থাপনায় এ জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। জুলুস আলমগীর খানকা শরীফ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, ২ নম্বর গেটে ইউটার্ন হয়ে আবার মুরাদপুর হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে জুলুস শেষ হয়। এরপর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠে মাহফিল শুরু হয়।

মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)-মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন, আন্‌জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

বক্তব্য দেন, আন্‌জুমান ট্রাস্টের এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারি মুহাম্মদ সামশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মুহাম্মদ সিরাজুল হক, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি এস এম গিয়াস উদ্দিন সাকের, প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স সেক্রেটারি অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্‌রাসার পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ দিদারুল ইসলাম, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ অছিয়র রহমান রহমান প্রমুখ।

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্‌রাসার প্রভাষক হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান, যুগ্মহাসচিব অ্যাড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ারের সঞ্চালনায় মাহফিলে তকরীর পেশ করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্‌রাসার প্রধান ফক্বীহ্‌ মুফতি কাজী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, মুহাদ্দিস হাফেজ আশরাফুজ্জামান আল-কাদেরী, আন্‌জুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবীয়া মাদ্‌রাসার অধ্যক্ষ কাজী মুহাম্মদ আব্দুল আলিম রেজভী, উপাধ্যক্ষ আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, হালিশহরস্থ মাদ্‌রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া (ফাযিল)’র অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রেজভী, চন্দ্রঘোনাস্থ মাদ্‌রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া(ফাযিল)’র অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তৈয়্যব চৌধুরী।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনজুমান সদস্য মুহাম্মদ শাহজাদ ইবনে দিদার, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ তৈয়বুর রহমান, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, মুহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল, তসকীর আহমেদ, মুহাম্মদ কমরুদ্দিন সবুর, মুহাম্মদ আবদুল হাই মাসুম, মুহাম্মদ হাসানুর রশীদ রিপন, বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ, গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রামের মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, মুহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মুন্নাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-সদস্যবৃন্দ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও মাস্টার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহসহ বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা-সদস্যবৃন্দ, জামেয়ার শিক্ষক-ছাত্রবৃন্দ, হাজার হাজার পীরভাই ও আশেকানবৃন্দ প্রমুখ।

শেষে মিলাদ-ক্বিয়াম ও জোহরের নামাজ আদায়ের পর, বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করে মুনাজাত করেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোটের সাজ্জাদানশীন হযরতুল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।

পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌ বলেন, আমাদের রাসুল (দ) সমগ্র সৃষ্টির মূল। তাঁর কারণেই বাকি সব সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্টি এবং শুভাগমনের কারণে আল্লাহ্‌ পাকের শান আযমতের প্রকাশ ঘটেছে। তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত বা কল্যাণ হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নন, বরং হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ সমগ্র সৃষ্টির জন্য শান্তি ও কল্যাণ হিসেবে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, করোনাকালীন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের দাফন সৎকার সহায়তায় নিজেদের উৎসর্গ করার মাধ্যমে হুজুর কেবলা আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্‌ (রহ)’র প্রতিষ্ঠিত মানবতার সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সৈনিকরা প্রমাণ করেছে প্রকৃত সূফী মুসলিমরা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। বাংলাদেশ দিন দিন উন্নতি করছে এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নতি করবে ইনশাআল্লাহ।

মাহফিলে প্রধান অতিথি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর রহমত হিসেবে আবির্ভূত হন আমানের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ)। তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শের শিক্ষাদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে তাঁর সুন্দরতম আদর্শের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি-সৌহার্দ্য, সাম্য-মানবতা প্রতিষ্ঠা করেন।

আন্‌জুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন জশনে জুলুছে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসাসহ সকল দফতরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে জুলুসে আগত লাখো আশেকে রাসুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও জুলুসের শৃক্সখলা রক্ষায় ভোর থেকে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স, গাউসিয়া কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে জুলুস দেখতে সড়কের পাশে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। এছাড়া জুলুসের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণে সাজানো হয় নগরীর সড়ক, মোড় সড়ক, বিভাজক। জশনে জুলুস উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

আয়োজকরা জানান, জুলুসের শৃক্সখলা এবং মাহফিলের আদব রক্ষায় আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের পাশাপাশি কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here