সুহাদা আফরিন

ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিতে বাংলাদেশ থেকে সাত দিনে প্রায় ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে, যা প্রায় ৫০ লাখ টাকার সমান। প্রার্থীরা নিজেরা যেমন ব্যয় করেছেন, তেমনি খরচ করা হয়েছে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ থেকে।

ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি সময়ের বিজ্ঞাপনের এই হিসাব পাওয়া যায়। দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু হয় গত ১৮ ডিসেম্বর, শেষ হয় গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায়।

২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে মেটা বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের পেছনে অর্থ আয়ের হিসাব দিচ্ছে। অবশ্য তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট লিমিটেড (ডিআরএল) গত মাসে এক গবেষণায় জানায়, অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তে ভুল করে মেটা।

মেটার হিসাবে দেখা যায়, সাত দিনে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বাবদ বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম, প্রায় পাঁচ হাজার ডলার। তিনি ঢাকা-১ আসনে দলের প্রার্থী। এর পরে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম এ রাজ্জাক খান, প্রায় দুই হাজার ডলার। তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জামালপুর-২ আসনে দলের প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ। তিনি ব্যয় করেছেন প্রায় ১ হাজার ৭০০ ডলার।

মোস্তফা আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ ঘুম থেকে উঠেই এখন ফেসবুক দেখে। ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ। সে কারণেই এই মাধ্যম বেছে নিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পেজ থেকে সারা বছরই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সাত দিনে তাঁর নামের পেজ থেকে ব্যয় করা হয়েছে ৯৪১ ডলার।

মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে গত এক মাসের ব্যয়ের হিসাবও পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, এ সময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ডলার (১ কোটি ৪১ লাখ টাকা)। সে তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছেন সালমা ইসলাম, সালমান এফ রহমান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ। গত ১৫ মাসের হিসাবে সবার আগের নামটি সালমান এফ রহমানের। এরপর রয়েছেন জুনাইদ আহ্‌মেদ ও এম এ রাজ্জাক খান।

ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনদাতা প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী, জামালপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ, নোয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম, ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী, গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হোসেন, ঢাকা-৪ আসনে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন পাভেল, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রমুখ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার পোল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ফেসুবক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটির কিছু বেশি। মেটার হিসাবে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বেশি দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগকে লক্ষ্য করে। এরপরে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বাকি বিভাগগুলো।

ডিজিটালি রাইটের প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সারা বিশ্বেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারের জন্য রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও তা হচ্ছে। মেটা যে তথ্য দিচ্ছে, তার বাইরেও অনেকভাবেই রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রকৃত ব্যয়ের অঙ্ক আরও বেশি হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here