আগামী ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলবে। দীর্ঘ ১৭ মাস ২৫ দিন পর স্কুলগুলো আগের চেহারা ফিরে পাবে। এই সংবাদ নিঃসন্দেহে আনন্দের। এই আনন্দের সঙ্গে স্কুলগুলোকে কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আগের সেই উদ্যোম ফিরে আনতে এবং আগামীর দিনগুলো ভালোভাবে মোকাবিলায় জরুরি ১০টি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
সেগুলো হলো-
১. কোভিডের বিস্তার রোধে মানসম্মত অভ্যাস
স্কুলগুলোকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ও সহজ নির্দেশাবলী তৈরি করা উচিত। এই নির্দেশাবলী অবশ্যই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বারে অবশ্যই হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ ও তাপমাত্রা পরীক্ষার সরঞ্জাম থাকতে হবে।
২. শিক্ষক-কর্মীদের টিকা ও প্রশিক্ষণ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মীদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজিএইচএস) কারিগরি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মীদের স্বাস্থ্য প্রোটোকলের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
৩. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও কমিউনিটিকে যুক্ত করা
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সব তথ্য নিয়মিত নজরদারির জন্য একটি নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা। সেই কমিটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিনিধি রাখা এবং স্কুল ও অভিভাবকদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা। উভয় পক্ষেরই একে অপরের সঙ্গে পরিষ্কারভাবে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে শেয়ার করা উচিত। স্কুলের উচিত অভিভাবক ও কমিউনিটির সদস্যদের সহযোগিতায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো।
৪. নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ তৈরি
প্রত্যেক শিক্ষার্থী করোনার এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে। শিক্ষকদের সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীলভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বুঝতে হবে যে, তারা মানসিক ও একাডেমিকভাবে কোথায় আছে। কোভিড-১৯ সময়টা কীভাবে কেটেছে, কার মনের অবস্থা কেমন তা জেনে নেবেন। এমন পরিবেশ তৈরি করবেন যেন একজন শিক্ষার্থী মহামারির ধকল দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারে। স্নেহপূর্ণ, ইতিবাচক শব্দ ও দৃষ্টিভঙ্গি তাদের এই ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।
৫. কাউন্সেলিং
করোনার এই সময়টাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা আলাদা সাপোর্ট দেওয়ার জন্য স্কুলে সাপোর্ট গ্রুপ বা কাউন্সেলিং সেবা বাধ্যতামূলক চালু করা উচিত। স্কুলের শিক্ষক, কর্মী, ও অভিভাবকের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কুলে প্রচারণার আয়োজন করতে পারেন।
৬. অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য খেলাধুলার আয়োজন
শুরুতেই পড়াশোনার প্রতি খুব বেশি চাপ না দিয়ে স্কুলে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে। যা শিক্ষার্থীদের পরস্পরকে এবং শিক্ষকদের সহকর্মীদের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ তৈরি করতে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
৭. চাপমুক্ত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিখন দুর্বলতা চিহ্নিত করা
শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর, স্কুল প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখন দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত মূল্যায়ন করতে পারে। এই মূল্যায়নের লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের বর্তমান যোগ্যতা যাচাই, গ্রেড নয়। স্কুলগুলোকে এই ধরনের পরীক্ষার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপ ও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
৮. শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুনঃপরিকল্পনা
শিক্ষার্থীদের দুর্বলতাগুলো মূল্যায়নের পর সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি পুনঃপরিকল্পনা করা যেতে পারে। যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাজগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। এই পরিকল্পনা সাপ্তাহিক ও মাসিক পর্যবেক্ষণ পূর্বক পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার সুযোগ রাখতে হবে।
৯. উৎসাহিত করা
যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার, শিক্ষার্থীরা সেসব বিষয় মেনে চলছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে সেগুলো মেনে চলে এ জন্য তাদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে। এই উৎসাহ হতে পারে ছোটো কোনো পুরস্কার বা আনুষ্ঠানিক প্রশংসা।
১০. শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি
শিক্ষকরা এই শতাব্দীর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এ জন্য তাদের প্রয়োজন সঠিক দক্ষতা। শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরি করা উচিত যাতে করোনার কারণে যদি আবারও বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায় তখন যেন তারা দক্ষতার সঙ্গে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য ব্লেন্ডেড লার্নিং এর উপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্লেন্ডেড লার্নিং হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রযুক্তি ও শিক্ষাবিজ্ঞানের সমন্বয় পদ্ধতি। যেখানে অনলাইন ও মুখোমুখি শিক্ষণ উভয়ই ব্যবহার করা হয়।
সময়ের যে কোনো সমস্যা মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে স্কুলগুলোকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে এবং স্কুলের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কগুলো সতেজ রেখে যে কোনো মহামারি মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সফল হতে হবে।
লেখকেরা আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোর সৌজন্যে