মহসিন কাজী

মোজাম্মেল ভাই (খোন্দকার মোজাম্মেল হক) আমাদের আপন ভাবতেন সবসময়। গত বিএফইউজে নির্বাচনে জেতার পর গর্ব করে বলেছেন এবারের কমিটিতে আমার তিনজন জিতেছে। অর্থাৎ মহাসচিব শাবান মাহমুদ, সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার এবং যুগ্ম মহাসচিব পদে আমি। আমরা তিনজনই তাঁর সম্পাদিত বহুল প্রচারিত আজকের সূর্যোদয়ে কাজ করেছি। তখন আমাদের তিনজনের ছবি দিয়ে আজকের সূর্যোদয়ে সংবাদও ছাপা হয়। তুলে ধরা হয়, আমরা তিনজনই সে পত্রিকার সাংবাদিক ছিলাম।

আসলে আমরাতো আজকের সূর্যোদয় তথা মোজাম্মেল ভাইয়ের হাতে গড়া। তিনিই আমাদের গুরু। তাঁর কাছে আমি চিরঋণী।

অনেক আগে আজকের সূর্যোদয় ছেড়ে আরও অনেক হাউজে কাজ করে আসলেও সেই পত্রিকা এবং পত্রিকাটির প্রাণ মোজাম্মেল ভাইকে সবসময় আপন ভেবে এসেছি। এ পত্রিকার সাথে আমার সেতুবন্ধনে আরেকটি নাম জড়িয়ে আছে। তিনি হলেন জুবায়ের ভাই (জুবায়ের সিদ্দিকী) । সাংবাদিক হিসেবে আমার পরিচয়ের প্রথম আশ্রয় আজকের সূর্যোদয়।

গণমাধ্যমের নানা শাখায় এখন ভরপুর দেশ। নব্বই দশকে এখনকার মতো মিডিয়া ছিল না। ছিল না স্যাটেলাইট টিভি, এফএম রেডিও, অনলাইনসহ অনেক অনেক পত্রিকা। নামডাক করা কিছু জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক আর কয়েকটি সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক। এসবের মধ্যে প্রগতিশীল ধারার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় ছিল স্বকীয়। এটির সার্কুলেশন ছিল শীর্ষে। গেদু চাচার খোলা চিঠি এবং কিছু নিয়মিত কলামের জন্য ছিল এটি বিখ্যাত। খোলা চিঠির জন্য মোজাম্মেল ভাই দেশজুড়ে গেদু চাচা হিসেবে পরিচিত। এ চিঠির ভেতর কোন কিছু উঠলেই আলোড়ন। আর পত্রিকায় হাতেগোনা কয়েক শব্দের একটি অনিয়ম কিংবা অব্যবস্থাপনার নিউজ ছাপা হলে শুরু হতো কর্তৃপক্ষের অ্যাকশন।

নিউজ প্রিণ্টে ছাপানো মাত্র ৩২ পৃষ্ঠার এ ম্যাগাজিন দেশের আনাচে কানাচে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নেয়ার কৃতিত্ব শুধুই মোজাম্মেল ভাইয়ের। গেদু চাচার খোলা চিঠি, সুসংবাদ দুঃসংবাদ শিরোনামে নিজের স্বনামে দুটি কলাম ছাড়াও আরও দুটি কলাম থাকে ছদ্মনামে। এ কলাম দুটিও জনপ্রিয়।

আজকের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে মোজাম্মেল ভাই অনেককে সাংবাদিক হিসেবে তৈরি করার পাশাপাশি লেখক হিসেবেও পরিচিত করেছেন।

মোজাম্মেল ভাই লেখনির মতো বক্তা হিসেবে হিসেবেও ছিলেন জনপ্রিয়। প্রতিবছর বিজয় মঞ্চে তার বক্তব্য শোনার জন্যও মানুষের ভিড় লেগে যেত। সাবলীল ভাবে বর্ণনা করতেন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশচেতনার কথা।

তিনি শুধু একজন সাংবাদিকই ছিলেন না, দেশের প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে লড়াই করা বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৬৯ সালের উত্তাল দিনে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সারাজীবন লালন করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। চেতনার প্রশ্নে জীবনে আপস করেননি। ছড়িয়ে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

এই বীরের মৃত্যুতে আজ কাঁদছে গোটা দেশ। ৬৮ হাজার গেরামের সুখ দুঃখের বার্তাবাহক গেদু চাচাকে হারিয়ে সবাই শোকে মুহ্যমান। সবাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন।

লেখক: যুগ্ম মহাসচিব, বিএফইউজে
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here