অবশেষে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সকল আগ্রহের পরিসমাপ্তি হলো। টাইগারদের প্রধান কোচ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডমিঙ্গোর নাম ঘোষণা করেছে বালাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
শনিবার (১৭ আগস্ট) মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোর নাম ঘোষণা করেন। দুই বছরের জন্য টাইগারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। আগামী ২১ আগস্ট দলের দায়িত্ব নেবেন তিনি।
গত ০৭ আগস্ট ঢাকায় এসে প্রধান কোচের জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে যান প্রোটিয়া কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। কোচ নিয়োগের তিন জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন এই প্রোটিয়া কোচ। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তু্লে ধরেন বিসিবির কাছে। বিসিবিও তার পরিকল্পনার কথা শুনে সন্তুষ্ট হয়।
বাংলাদেশের কোচ হওয়ার দৌড়ে ডমিঙ্গোর সঙ্গে আরও ছিলেন সাবেক কিউই কোচ মাইক হেসন। তবে তিনি ভারতের পছন্দের তালিকাতেও ছিলেন। কিন্তু ভারত তাদের কোচ হিসেবে রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেই চুক্তি নবায়ন করে। ফলে বাংলাদেশের কোচর তালিকায় অন্যতম পছন্দ ছিলেন হেসন।
কিন্তু ডমিঙ্গোর ইন্টারভিউ শেষে বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, তার পরিকল্পনা বেশ ভালো লেগেছে। সে জন্যই হয়তো আর অপেক্ষা করেনি বিসিবি। তাকেই প্রধান কোচ হিসেবে নিযোগ দেয়। ফলে আসন্ন আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ ও এরপর ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে নতুন কোচের অধীনেই খেলবে বাংলাদেশ।
এক নজরে টাইগারদের নতুন কোচের ক্যারিয়ার
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচের সাক্ষাৎকার দিতে সবার আগেই আসেন রাসেল ডমিঙ্গো। চূড়ান্ত তালিকায় আরও নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার হাতেই উঠলো টাইগারদের প্রধান কোচের দায়িত্ব। চলুন দেখে নেওয়া যাক নতুন এই কোচের খেলোয়াড়ি ও কোচিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে-
পুরো নাম রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গো। ১৯৭৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথে জন্ম। ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারে তেমন কিছুই করতে পারেননি। দ্বিতীয় সারির লিগ পর্যন্তই খেলার অভিজ্ঞতা তার। মাত্র ২০ বছর বয়সেই ইতি টানেন খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের। খেলা ছেড়ে স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং মার্কেটিংয়ের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন প্রভিন্স যুব দলের কোচের দায়িত্ব পেয়ে যান। ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৯ , বি দল ও এ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বেও।
২০০৫ সালে মিকি আর্থার দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল ওয়ারিয়র্সের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিলে সে দায়িত্ব পান ডমিঙ্গো। দায়িত্ব নিয়েই ডমিঙ্গো দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গ্যারি কারস্টেনকে নিয়ে ৩৫ দিনের ক্যাম্প করেন। রাসেল ডমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানে ওয়ারিয়র্স জেতে দুটি ট্রফি। তার দল থেকে ৬জন সুযোগ পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে।
২০১১ বিশ্বকাপের পর জয়ী ভারতকে ফেলে নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হন গ্যারি কারস্টেন। তার সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন ডমিঙ্গোকে। যা তাকে আরও বড় সুযোগের দরজা খুলে দেয়। এক বছরের মাথায় টি-টোয়েন্টি দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়ে যান ডমিঙ্গো। ২০১৩ সালে গ্যারি কারস্টেন প্রধান কোচের দায়িত্ব ছাড়লে তিন সংস্করণেই প্রধান কোচের দায়িত্ব পান ডমিঙ্গো।
তার অধীনে ১৩ টেস্ট সিরিজের ৮টিতে জয়ী হয়ে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের সাত থেকে দুইয়ে উঠে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডমিঙ্গোর সময়ে ২২ ওয়ানডে সিরিজের ১৪টিতে জয়ী হয়ে ওয়ানডেতে শীর্ষ দল হিসেবে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টিতে ৪২ ম্যাচের মধ্যে ২৩ জয় এসেছে তার সময়ে। তার অধীনেই ২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্ব ছাড়েন ডমিঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে কোনো দল নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই তার। সে হিসেবে বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে নিজ মহাদেশের বাইরের কোনো দল নিয়ে কাজ করার প্রথম অভিজ্ঞতা।