চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পুলিশ মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন।

শাহাদাতের অভিযোগ- গত ২৮ জানুয়ায়ী রাতে নাসিমন ভবনে ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে চলছিল। বৈঠক চলাকালে কোতোয়ালী থানা ও ডিবি পুলিশ বিনা কারণে কার্যালয়ে ঢুকে নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং গুলি চালায়। এসময় পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। যা শিষ্টাচার বহির্ভূত।

পুলিশের গুলিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুদ্দীন শহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ খান, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কে এম আব্বাস ও গাজী শওকতসহ ১০/ ১২ জন নেতা কর্মীসহ আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আলম সর্দ্দার, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দীন নিলয়, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদল নেতা ইব্রাহিম খলিল এবং মো. বেলালকে গ্রেফতার করে।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে চার রাউন্ড গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন অভিযোগ করে শাহাদাত বলেন, ‘অথচ পরের দিন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার ৫ জনসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল না এমন নেতাদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের এই ধরনের কর্মকাণ্ড বিএনপিকে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন দলটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচিত শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আবারও ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা শুরু করেছে। তথাকথিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে যেভাবে গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, একইভাবে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা আবারও গ্রেফতার-নির্যাতন শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে দায়ের হওয়া গায়েবী মামলায় নেতাকর্মীরা হাইকোর্টের জামিনে থাকলেও নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

‘আমরা মনে করি, বিএনপির বলিষ্ঠ নেতাকর্মীরা যাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাজ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ এই গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। এভাবে নেতাকর্মীদের যদি মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’ বলেন শাহাদাত

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করার নীলনকশা বাস্তবায়নে সিএমপির অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এখন থেকে মাঠে নেমেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গায়েবী মামলা দিয়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছিল। আবারও সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য এখন থেকে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। হামলা-মামলার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রেখে যেনতেন ভাবে ২০১৮ সালের মতো একটি নির্বাচন করার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

সংবাদ সম্মেলনে নগর বিএনপির সহ সভাপতি এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, আনোয়ার হোসেন লিপু, সাহেদ বক্স, সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু, মো. কামরুল ইসলাম, সহ দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here