আলোকিত ডেস্ক: মাত্র ৬০০ টাকায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া শনাক্তের পরীক্ষা করা যাবে। সম্প্রতি থ্যালাসেমিয়া  শনাক্তে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষার মেশিনটি স্থাপন করা হয়েছে হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে।

এতদিন সরকারিভাবে থ্যালাসেমিয়া শনাক্তের সুযোগ ছিল না চট্টগ্রামে। এজন্য বেসরকারি ল্যাবই ছিল ভরসা। সেখানে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হতো। সামর্থবানদের সমস্যা না হলেও গরীব-অসহায় মানুষ পড়তেন বেকায়দায়।

শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে থ্যালাসেমিয়া শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হয় চমেক হাসপাতালে।

হেমাটোলজি বিভাগের ল্যাব ঘুরে দেখা যায়, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আবু সাইম একজন রোগীর রক্তের নমুনা মেশিনে দিয়ে পরীক্ষা করছেন।

জানতে চাইলে আবু সাইম বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এক ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, অত্যাধুনিক মেশিনটি সম্প্রতি হাসপাতালে আনা হয়েছে। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করেছে। এ মেশিনের আনুমানিক ক্রয় মূল্য ৩০ লাখ টাকা। এ সেবা চালুর ফলে গরীব-অসহায়রা বিশেষভাবে সুবিধা পাবেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত বা জেনেটিক রোগ। এটি ঘাতক রোগও। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে লোহিত রক্তকণিকা ঠিকমত তৈরি হতে পারে না। এর ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আশংকাজনকভাবে কমে যায়। অন্য মানুষের দান করা রক্তই হচ্ছে রোগীর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। রোগীকে অবস্থাভেদে প্রতিমাসে ১ থেকে ২ ব্যাগ বা তার চেয়েও বেশি রক্ত নিতে হয়। সত্যিকার অর্থে থ্যালাসেমিয়া রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই।

চমেক হাসপাতাল হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহেদ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া মারাত্মক ব্যাধি। এ রোগ ধীরে ধীরে একজন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অথচ সচেতন হলে এই রোগ এড়ানো সম্ভব।

‘সরকারিভাবে সুযোগ না থাকায় রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষায় অনীহা ছিলো অসচ্ছলদের। এজন্য অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্বেও পরীক্ষা করাতে পারতো না। তবে হাসপাতালে সেবা চালু হওয়ায় সেই সমস্যা কাটবে।’

এদিকে সেবা চালুর ফলে থ্যালাসেমিয়া নির্মূল সহজ হবে বলে আশা করছেন এ রোগ নির্মূলে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের ধারণা, থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় সহজ হলে এ রোগ নির্মূল সম্ভব।

থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ক্যাম্পেইন বাংলাদেশের চিফ কো অর্ডিনেটর সূর্য দাস বাংলানিউজকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া নিয়ে মানুষ সচেতন নয়। যদি সচেতন হতো তাহলে এ রোগ নির্মূল সম্ভব হতো।

তিনি আরও বলেন, অর্থের অভাবে অনেকে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হন না। ফলে এ রোগটি ছড়াতে থাকে। তবে স্বল্প দামে সেবা চালু হওয়ায় সে সমস্যা কিছুটা কমবে।

এখনও বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসার শেষ আশ্রয় এ হাসপাতাল। সাধারণ থেকে জটিল সব রোগের চিকিৎসা চমেক হাসপাতালে দেওয়া হয়। ২৫ টাকার টিকিটের বিনিময়ে হাসপাতালটিতে সেবা মেলে। তবে রোগীর তুলনায় সুবিধা সীমিত। এজন্য চাহিদামতো সেবা পায় না রোগীরা।

প্রতিদিন এ হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে ছয়শ থেকে নয়শ রোগী ভর্তি হন। নিয়মিত হাসপাতালে ভর্তি থাকেন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী। এ ছাড়া বহির্বিভাগে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী সেবা নেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here