বিকল্প হিসেবে সেতুর পাশে নদীতে দুটি ফেরি চালু করা হয়। কিন্তু ফেরিতে যাতায়াতে মানুষের দুর্ভোগ রয়েছে।
কালুরঘাট সেতুতে রেলপথের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। চলাচল করছে ট্রেন। এখন গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কের সংস্কারকাজ চলছে।
কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজের কারণে বন্ধ রয়েছে গাড়ি চলাচল ও মানুষের পারাপার। এ জন্য বিকল্প হিসেবে রয়েছে ফেরি। কিন্তু অপেক্ষা না করে ঝুঁকি নিয়ে অনেকে চলাচল করেন নৌকায়। গতকাল 13-01-2024 বেলা দেড়টায়। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রামের ৯৩ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দুই থেকে তিন মাস। সেতুর ওপর রেলপথের সংস্কারকাজ শেষ হলেও সড়কের তৈরির কাজ শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। মার্চের আগেই এই কাজ শেষ করতে চায় রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ। এর মধ্যে সেতুর এক পাশে পায়ে হাঁটার পথের (ওয়াকওয়ে) নির্মাণকাজও হয়ে যাবে।
গত বছরের আগস্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট রেলসেতুতে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যে সেতুর মূল সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। ফলে ডিসেম্বর থেকে সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে কক্সবাজারগামী দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। তবে সড়কপথের কাজ বাকি রয়েছে। সংস্কারকাজ শুরু হলে সেতুতে যান চলাচল ও হেঁটে পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য বিকল্প হিসেবে সেতুর পাশে নদীতে দুটি ফেরি চালু করা হয়। কিন্তু ফেরিতে যাতায়াতে মানুষের দুর্ভোগ রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়, এ দাবি জানিয়েছেন দুই প্রান্তের বাসিন্দারা। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার যানবাহন ও ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর ১৯৩১ সালে নির্মিত হয় কালুরঘাট রেলসেতু। ১৯৬২ সালে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে দুইবার সংস্কার করা হয়েছিল। কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচলের জন্য ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটিতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। সংস্কারকাজের জন্য গত বছরের জুনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকার চুক্তি করা হয়। গত বছরের আগস্টে কাজ শুরু হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী মার্চে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কালুরঘাট সেতুতে রেলপথ স্থাপনের কাজ গত নভেম্বরে শেষ হয়েছে। এখন ট্রেন চলাচল করছে। বর্তমানে সেতুর এক পাশে ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। ইস্পাতের পাটাতন দিয়ে এই ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। শ্রমিকেরা নাট-বল্টু দিয়ে জোড়া লাগানোর কাজ করছেন।
ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, সেতুর মূল সংস্কারকাজ, তথা রেলপথ বসানোর কাজ তাঁরা শেষ করেছেন। কোনো ধরনের ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই ট্রেন চলাচল করছে। এখন গাড়ি চলাচলের পথ এবং হাঁটার পথের নির্মাণকাজ বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, রেলপথের ওপর বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ করা হবে। সড়ক করার পরপর যাতে সেতুতে পানি না জমে, সে জন্য পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, সেতুটিতে সড়কপথ থাকায় রেললাইনের অভ্যন্তরে পানি জমে রেলপাত ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে রেললাইন মেরামতের প্রয়োজনে সেতুটিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হতো। এতে দুই পাশের মানুষের ভোগান্তি হতো। এ জন্য চলমান সংস্কারকাজে বিদ্যমান পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পানিনিষ্কাশনের পথ রাখা হবে। এরপর ওই কংক্রিট ঢালাইয়ের ওপর পিচ দিয়ে সড়কপথ নির্মাণ করা হবে। এতে সড়ক ও রেলপথ উভয়ই আগের চেয়ে সুরক্ষিত থাকবে।
সেতুতে গাড়ি চলাচলের অপেক্ষায় মানুষ
সেতুতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এখন নদীর দুই প্রান্তের বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয় ফেরি দিয়ে। কিন্তু ফেরি দিয়ে পার হতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে যাত্রীদের। ফেরিঘাটে যখন গাড়ির লম্বা সারি হয়, তখন নদী পার হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টাও সময় লেগে যায় গাড়িচালক ও যাত্রীদের। অনেকে সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে পার হন।
গতকাল দুপুরে ফেরিঘাটে কথা হয় হুইলচেয়ারে বসা ৬০ বছর বয়সী মো. ইয়াসিনের সঙ্গে। পায়ের সমস্যার কারণে প্রতি সপ্তাহে নগরের কালুরঘাটে অবস্থিত এ কে খান সিআরপি কেন্দ্রে থেরাপি নিতে আসেন বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখিলের এই বাসিন্দা। তিনি বলেন, ফেরি দিয়ে চলাচলে বেশি কষ্ট হয়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ঘাটে বসে থাকতে হয়। যদি সেতুর ওপর গাড়ি চলাচল করত, তাহলে খুব অল্প সময়ে চলে আসতে পারতেন।
চার মাস আগে প্রবাস থেকে দেশে আসেন আবদুল মাবুদ। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে আসার পথে কথা হয়। বোয়ালখালীর এই বাসিন্দা বলেন, ছেলের অসুস্থতা ও পারিবারিক প্রয়োজনে প্রতি মাসেই বেশ কয়েকবার নগরে আসতে হয়। কিন্তু দিনের বেলায় ফেরি পাওয়া গেলেও রাত বেশি হলে ফেরি থাকে না। আবার ফেরি পাওয়া গেলেও এ জন্য কখনো কখনো এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এসব কারণে ঝুঁকি জেনেও নৌকায় করে পার হন তাঁরা।
দেবু প্রসাদ নামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, সেতুতে গাড়ি চালু হলে তাঁদের কষ্ট অনেক কমে যাবে। তখন আর ঘাটে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, সব ধরনের সংস্কারকাজ ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।