বিভাগের সম্পাদক :
বহু গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, খালি পায়ে হাঁটার সঙ্গে আমাদের শরীরের ভাল থাকার সরাসরি যোগ রয়েছে। মস্তিষ্ক থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি কণাকে সুস্থ রাখতে খালি পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই। তাই দিনে অন্তত কিছু সময় খালি পায়ে হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। আসুন জেনে নেওয়া যাক খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা।
খালি পায়ে হাঁটাও সুন্নত…..
রাসুলুল্লাহ (সা.) মাঝেমধ্যে খালি পায়ে হাঁটতে নির্দেশ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ : ৪১৬০, মুসনাদে আহমাদ : ২৩৯৬৯)। হাদিসবেত্তারা বলেন, ‘মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটলে বিনয় আসে, অহমিকা দূর হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।’ কিন্তু এক পায়ে জুতা পরিধান করে অন্য পা খালি রেখে হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে। হয়তো উভয় পায়ে জুতা পরে হাঁটবে নয়তো উভয় পায়ের জুতা খুলে হাঁটবে।’ (বোখারি : ৫৮৫৫; মুসলিম : ২০৯৭)।
শাইখ বিন বাজ (রহ.) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, যদি মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় একটি জুতা কাছে থাকে আরেকটি সামান্য দূরে এ অবস্থায় একটি জুতা পরে দুই এক কদম হেঁটে গিয়ে অপরটি পরলে কি সমস্যা আছে? জবাবে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও রাসুলের নিষিদ্ধ পথে এক পাও অগ্রসর হওয়া উচিত নয়’!
শরীরে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে
খালি পায়ে হাঁটার সময় দেহের সমস্ত নেগেটিভ চার্জ মাটিতে চলে যায়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সারা শরীরে রক্তচলাচল সঠিকভাবে হয়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বেশি বেশি করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে যায়। স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো কমে যায়।
পেশী এবং হাড়ের গঠন মজবুত হয়:
আপনারা কর্মজীবী মানুষ বিশেষ করে গ্রামের মানুষের পেশী গঠনের দিকে খেয়াল করলে অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন। খালি পায়ে হাঁটার সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায়। অর্থাৎ বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছে যেতে শুরু করে হার্টে। ফলে পেশী এবং হাড় আরও শক্তোপক্তো হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে হার্টের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
দেহ গঠনের উন্নতি
একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে স্টাইলের চক্করে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই তাদের পায়ের গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জুতো পরেন না। ফলে ধীরে ধীরে পায়ের তলার গঠন খারাপ হতে শুরু করে। আর একবার পায়ের গঠন খারাপ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পরে আমাদের শরীরের উপর। ফলে ব্যাক পেইন, ঘারে যন্ত্রণা এবং গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাহলে কী জুতো পরাই ছেড়ে দিতে হবে? একেবারেই না। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়া পা যুগলেকে পুনরায় চাঙ্গা করে তুলতে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এমনটা করলেই পায়ের শক্তি বাড়তে থাকবে। ফলে ভুল জুতো পরলেও শরীরের উপরে আর কু-প্রভাব পরবে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি
আমাদের পায়ের তলায় থাকা একাধিক সেন্সারি নার্ভ, খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভিতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে নানাবিধ সংক্রমমের আশঙ্কা একেবারে শূন্যের কোঠায় দাঁড়ায়।
অনিদ্রার সমস্যা দূরীকরণে
রাতে কি ঠিক মতো ঘুম আসে না। তাহলে আজ থেকেই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন বিনিদ্র রাত্রি যাপন আর করতে হবে না। কারণ খালি পায় হাঁটার সময় আমাদের শরীর থেকে নেগেটিভ এনার্জি বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে স্ট্রেস রিলিজও হয়। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘুম আসতে আর কোনও অসুবিধাই হয় না। প্রসঙ্গত, শুধু খালি পায়ে হাঁটলেই যে এমন উপকার হয়, তা নয়। সাঁতার কাটলেও একই ফল মেলে।
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে
শরীরে রক্তচলাচল যখন স্বাভাবিকভাবে হতে থাকে, তখন ব্লাড ক্লট এবং আর্টারিতে ময়লা জমার আশঙ্কা কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। খালি পায়ে হাঁটার আরেকটি উপকারিতা হল, এই সময় ব্লাড সেলগুলি মারাত্মক অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে একটু খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। এমনটা করলেই দেখবেন ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনগুলো দ্রুত কার্যক্ষম হয়ে যাবে। ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বুদ্ধির জোরও বাড়তে শুরু করবে। আপনারা জানেন, আমাদের শরীরের অধিকাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই তো মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, তত আমাদের শরীরের ভেতরের তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
অনুভূতি জোরদার করে
শুধু মানুষের অনুভূতিই নয়, পৃথিবীর অন্দরেও সেনসারি চ্যানেল রয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের শরীরের সরাসরি যোগাযোগও রয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হল মানুষ যখন থেকে ভদ্র হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ জুতো পরা শুরু করেছে তখন থেকে মাটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে এখন আর পরিবেশে উপস্থিত শক্তি মনুষের শরীর প্রবেশ করতে পারে না। সে কারণেই রোগের এতো প্রকোপ বেড়েছে। তাই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। এমনটা করলে আমাদের পায়ের তলায় থাকা কিছু প্রেসার পয়েন্ট অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীর আরও বেশি করে অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে সিক্স সেন্সও বাড়তে শুরু করে। সূত্র : বোল্ডস্কাই।