ম্যাচের শুরুতেই সাফল্য পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির অ্যাসিস্টে দলকে লিড এনে দেন লাউতারো মার্টিনেজ। কিন্তু, এগিয়ে যাওয়ার স্বস্তি শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। পালটা গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান লুইস দিয়াজ। নির্ধারিত সময় সমতায় শেষ হলে ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। ভাগ্য পরীক্ষায় অবশ্য শেষ হাসি হেসেছে আর্জেন্টিনাই। কলম্বিয়াকে বিদায় করে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছে লিওনেল স্কালোনির দল।
ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় শুরু হওয়া কোপা আমেরিকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার মধ্যকার ম্যাচটি ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয়। আর্জেন্টিনার হয়ে একমাত্র গোল করেছেন লাউতারো মার্টিনেজ। আর কলম্বিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন লুইস দিয়াজ।
ভাগ্য পরীক্ষায় আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক বনে যান গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার তিনটি গোল সেভ করে তিনিই মূলত ফাইনালে তোলেন প্রতিযোগিতার ১৪বারের চ্যাম্পিয়নদের।
এর আগে টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এবার আর্জেন্টিনা ওঠায় কোপার ফাইনালে দেখা হবে লাতিন আমেরিকার দুই অন্যতম পরাশক্তির। আগামী ১১ জুলাই কোপার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
এদিন ম্যাচের জালের দেখা পেতে দেরি হলেও বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল কলম্বিয়া। ম্যাচের ৫১ ভাগ সময় বল দখলে রেখে ১৪বার আক্রমণ করেছে কলম্বিয়া। যার মধ্যে চারটি ছিল অন-টার্গেটে নেওয়ার মতো। অন্যদিকে, ১৩ বার আক্রমণে যাওয়া আর্জেন্টিনার অন-টার্গেটে যাওয়ার মতো শট ছিল চারটি। যার মধ্যে একটিতে সফল আর্জেন্টাইনরা।
আর্জেন্টিনা সাফল্য পেয়ে যায় শুরুতেই। কলম্বিয়া নিজেদের গুছিয়ে নেবার আগেই সপ্তম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দেন মার্টিনেজ। অবশ্য গোলে মূল ভূমিকা ছিল লিওনেল মেসির। ছোট ডি-বক্সের কাছ থেকে মার্টিনেজকে বল বাড়ান অধিনায়ক। সুযোগ হাতছাড়া না করে বল ঠিকানায় পাঠান মার্টিনেজ।
এই নিয়ে চলতি কোপা আমেরিকায় পঞ্চমবার অ্যাসিস্ট করলেন মেসি। আর্জেন্টাইন তারকার আগে কোপায় কেউ চারটির বেশি অ্যাসিস্ট করতে পারেননি।
এগিয়ে যাওয়ার দুই মিনিট বাদেই বড় বিপদ থেকে বাঁচে আর্জেন্টিনা। কুয়াদ্রাদোর শট ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
২৭ মিনিটে বড় সুযোগ পায় কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনার ডি বক্সে ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় কলম্বিয়া। কিন্তু, ওই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। বল পোস্টের ওপর দিয়ে গেলে সেই যাত্রায় বেঁচে আর্জেন্টিনা।
৩৭ মিনিটের মাথায় আরেক দফায় রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন কলম্বিয়ার বারিয়স। কিন্তু, ভাগ্যক্রমে পোস্টে কাছ ঘেঁষে বল চলে গেলে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। পরের মিনিটে ফের সুযোগ পায় কলম্বিয়া। সেটিও যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। এরপর বিরতির আগ পর্যন্ত দুদলই বেশ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু জালের দেখা পায়নি কেউ। ফলে লিড নিয়েই মাঠ ছাড় আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফিরে নিজেদের আক্রমণে আরো ধার বাড়ায় কলম্বিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনার রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। ৫২ মিনিটে প্রথম সুযোগ আসে। কিন্তু আর্জেন্টিনার ডি বক্সে গিয়ে সেই যাত্রায় ব্যর্থ হয় কলম্বিয়া। ৫৫ মিনিটে মেসিকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু দূরের ফ্রি কিক কাজে লাগাতে পারেনি লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। দুই মিনিট বাদে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ফাউল করেন মার্টিনেজ। তাতে ফ্রি কিক মিলে কলম্বিয়ার। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তাদেরও।
বারবার আক্রমণের পর অবশেষে ৬১ মিনিটে জালের দেখা পেয়ে যায় কলম্বিয়া। মাঝ মাঠ থেকে বল লুফে নিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে কাছ থেকে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন লুইস দিয়াজ। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক কিছুই করতে পারলেন না।
৭২ মিনিটে বড় সুযোগ হারায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে কলম্বিয়ার ডি বক্সে ঢুকে যান ডি মারিয়া। গোলপোস্ট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক। কিন্তু ভালো ফিনিশিং টানতে পারলেন না ডি মারিয়া।
তিন মিনিট বাদে মেসিকে ফাউল করলে ফের ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের বাইরে থেকে মেসির নেওয়া কিক লক্ষ্যে যায়নি। দুবার কর্নার পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি মেসিরা। একের পর সুযোগ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় সমতায়।
কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে উরুগুয়েকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় কলম্বিয়া। অন্যদিকে ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট পায় আর্জেন্টিনা।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে আগের ২০ বারের দেখায় ১১টিতে জয় তুলে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। ছয়টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। বাকি তিনটিতে জিতেছে কলম্বিয়া। শেষ পাঁচ বারের মুখোমুখি সাক্ষাতে আর্জেন্টিনা জিতেছে দুবার, দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে আর একটি ম্যাচ জিতেছে কলম্বিয়া
ঘরের মাটিতে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে খুব কাছে পৌঁছে গেল ব্রাজিল