নিজস্ব প্রতিবেদক:  বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু দ্রুত নির্মাণ বাস্তবায়নের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন বোয়ালখালীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পূর্ব কালুরঘাটে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে মুক্তিযোদ্ধা এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। যাতে শোভা পাচ্ছিল ‘দাবি শুধু একটাই, বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন চাই’।
অনশন কর্মসূচিতে মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় ও দিনব্যাপী ছিলো কবিগানের আসর।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা জানান, প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুঘাটে রেল-কাম-সড়ক সেতু বাস্তবায়নে যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন তার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতেই এ কর্মসূচি। এ সেতুটি হলে চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রসার ঘটবে। এছাড়া নগরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী দূরত্ব ও ভোগান্তি হ্রাস পাবে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার হারুন মিয়া বলেন, বিট্রিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে বিপদ সংকুল হয়ে উঠেছে। এছাড়া একমুখী এ সেতুতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজট দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবদুল মোমিন জানান, চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন রেল-কাম সড়ক সেতুর প্রয়োজনীতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাল বিলম্ব না করে নতুন রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবি দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর।

বোয়ালখালী উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দুল আলম বলেন, কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতু শুধু বোয়ালখালীর নয়, সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগে বিপ্লব ঘটাবে ।

বিকেল ৪টায় শরবত পান করিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনশন ভঙ্গ করান চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল। তিনি এ সময় বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীকে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি এ বিষয়ে আন্তরিক। সেতু নির্মাণে অর্থের যোগানও রয়েছে।’
সাংসদ বাদল বলেন, ‘চট্টগ্রামের গণ মানুষের প্রাণের দাবিতে একাত্তরের রণাঙ্গনের সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের অনশন কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন এ দাবি পূরণ না হলে আগামী ডিসেম্বরের সংসদ থেকে সরে দাঁড়াবো।’
সেতুর দাবিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাত্তরের রণাঙ্গনের সৈনিক মুক্তিযোদ্ধাদের অনশন কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন, সাতকানিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এলএমজি তাহের, বোয়ালখালী- কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ, বোয়ালখালী প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. শাহিনুর কিবরিয়া মাসুদ, সহ-সভাপতি রাজু দে, সাধারণ সম্পাদক এস এম মোদ্দাচ্ছের, উপজেলা জাসদ সভাপতি মনির উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক মো. ওবাইদুল হক, যুবলীগ নেতা মো. ইব্রাহীম, আবু ছিদ্দিক তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বোয়ালখালী শাখার সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস,সিনিয়র সহ-সভাপতি সমীর চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক অধীর দে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি রমা বৈদ্য ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইলা বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খিষ্টান ঐক্য পরিষদ বোয়ালখালী শাখা সভাপতি সজল কান্তি চৌধুরী, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. রিয়াদ হোসেন সহ নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচিতে কবিগান পরিবেশন করেন সরকার কমল দাশ, মাধুরী ভট্টচার্যী ও তার দল।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট কর্ণফুলীতে কালুরঘাটে দ্বিতীয় সড়কসহ রেলসেতু প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে অনুমোদন দেন। ২০১৮ সালে ৭ আগষ্ট অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প নিয়ে অধিকতর সমীক্ষার নির্দেশ দেন।
বৈঠক শেষে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সমীক্ষার কাজ শেষ হলে প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে।
ব্রিটিশ আমলের ১৯৩০ সালে কালুরঘাট রেলসেতুটি নির্মিত হয়। ১৯৫৮ সালে সেতুটি অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৯১ সাল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ কালুরঘাটে একটি দ্বিমুখী রেলওয়ে কাম সড়ক সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১০ টনের অধিক পরিবহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক গবেষণায় সাত মাত্রার ভূমিকম্পে সেতুটি ধসে পড়ার শঙ্কার কথা বলা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here