ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর অভিযোগে ওই থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই আইনের ২৯ ধারায় আসামি আরও  তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। জরিমানার টাকা নুসরাতের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি জরিমানার টাকা অনাদায়ী থাকলে আসামিকে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে আসামির বিরুদ্ধে ৩১ ধারায় আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আসামির উপস্থতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

গত ২০ নভেম্বর বিকেলে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।

এদিন পৌনে ১০টায় ওসি মোয়াজ্জেমকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর তাকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে এ মামলার ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ১৪ নভেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান ওসি মোয়াজ্জেম। ওই সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

চলতি বছরের গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এ আবেদন গ্রহণ করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

এর আগে, সোনাগাজীর ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিতে থানায় গিয়েছিলেন নুসরাত। সে সময় ওসি মোয়াজ্জেম তার অভিযোগ গ্রহণ না করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ওই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়েও দেন ওসি মোয়াজ্জেম।

গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজরুমে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। কারাগারে থেকেই নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকেন সিরাজ। তবে মামলা তুলে না নিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন অধ্যক্ষের সহযোগীরা। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাতের মৃত্যু হয়।

নুসরাত হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here