নিজস্ব প্রতিবেদক: বোয়ালখালীতে ভাণ্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। শুরু হয়েছে উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়কের পাশ ঘেঁষে খোঁড়াখুঁড়ি কাজ। বসানো হবে পানির পাইপ লাইন।

খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উপজেলার সড়কগুলাে। একই সাথে উপজেলার সড়কগুলাের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ওজনের গাড়ি প্রতিদিন আনা নেওয়া করছে বড়বড় পাইপ।

সড়কের পাশে অতিরিক্ত জায়গা থাকলেও এ প্রকল্পের পানি সাপ্লাইয়ের কাজে ব্যবহৃত পাইপ লাইন নেয়ার কাজে রাস্তার পাকা অংশের পাশ ঘেঁষে ৩ মিটার গভীর এ খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এতে বর্ষা মৌসুমে সড়ক দেবে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

দোহাজারী সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার সাথে চুক্তি অনুযায়ী এইচ ডি ডি পদ্ধতিতে পাইপ চালানোর কথা থাকলেও তা না করে সনাতন পদ্ধতিতে বুলডোজার দিয়ে খোঁড়াখুঁড়িতে ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে সওজ জানায়। এ নিয়ে চুক্তি ভঙের অভিযোগ করে এবং চুক্তি বাতিল করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ দোহাজারীর পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর গতকাল বুধবার চিঠি দিয়েছে।

জানা গেছে, নতুন এ প্রকল্পের অধীনে বোয়ালখালীর ভাণ্ডাল জুড়ি হয়ে পটিয়া ও আনোয়ারায় পাইপ লাইন সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে। ওয়াসার এ প্রকল্পের কাজ করছে ‘তেইঅং’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে এ প্রকল্পের কাজ নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ দোহাজারীর মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের এ কাজের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিং জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যেভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করছে তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমে সড়কটি দেবে গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও কক্সবাজার-চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

তিনি আরো জানান, ওয়াসা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী রাস্তার পাশে শেষ প্রান্তে গিয়ে তারা পাইপ লাইনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করবে। কিন্তু এটা না করে তারা মহাসড়কের পাকা অংশের পাশ ঘেঁষে খোঁড়াখুঁড়ি করার ফলে সড়কটি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে পটিয়া থানায় একটি অভিযোগও করা হয়। অভিযোগের পরও তারা পূর্বের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। এতে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং চুক্তি বাতিলের জন্য চিঠি প্রেরণ করেছি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা রাস্তার পাশ ঘেঁষে বুলডোজার দিয়ে মাঠি খোঁড়ার কাজ করছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘তেইঅং’ এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাজী ফরিদ।

এ বিষয়ে ফরিদ বলেন, সড়ক বিভাগের সাথে ওয়াসার চুক্তি অনুযায়ী রাস্তা থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পাইপ লাইন চলানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া চুক্তি’তে আড়াই মিটার গভীর পাইপ লাইনের জন্য গর্ত করার কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অধিক নিরাপত্তার জন্য ৩ মিটার গভীর করে পাইপ লাইনের কাজ করার জন্য মাটি খননের কাজ করছি। এতে ঝুঁকির কোন সম্ভাবনা থাকবে না। তিনি আরো জানান, সড়ক ও ওয়াসার কাজ দু’টিই সরকারি কাজ। তাই কোন অভিযোগে সরকার এটা বাতিল করবে না।

সড়ক বিভাগ ও ওয়াসার সাথে চুক্তির প্রথম শর্ত হচ্ছে ‘এ ভূমি ব্যবহার অনুমতি সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে এবং দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে প্রস্তাবিত মহাসড়ক সমূহের রাইট অব ওয়ে (রোড) এর শেষ প্রান্ত বরাবর সওজ কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন ও নকশা মোতাবেক চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন প্রয়োজন অনুযায়ী (২০০-৯০০মিলিমিটার ব্যাস) এইচ ডি ডি পদ্ধতিতে স্থাপন করতে হবে। এবং চুক্তির সাত নাম্বার ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ রয়েছে মহাসড়কের পাকা অংশে (পেভমেন্ট) কেটে বা সোল্ডার কেটে কোন অবস্থাতেই পানির পাইপ স্থাপন করা যাবেনা। সর্বনিম্ন ২.৬০ মিটারের কম মাটি খনন করা যাবে না। এসব শর্ত অনুযায়ী ওয়াসা স্পষ্টত চুক্তি ভঙ্গ করছে মনে করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ দোহাজারী।

বোয়ালখালী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.ফারুক হোসেন বলেন, সড়কের ধারণ ক্ষমতা কয়েকগুণ ওজণের ট্রাকে করে পাইপ ও যন্ত্রাংশ বোয়ালখালীতে আনছে ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা উপজেলা বিভিন্ন সড়কও ব্যবহার করছে। এতে উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

তিনি বলেন তাদের সাথে শুধু মাত্র চুক্তি হয়েছে যেসব সড়কে পাইপ বসানো হবে তা কেটে আবার সমান করে দিতে হবে। অথচ চুক্তির বাইরে পরিবহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোর সংস্কার তারা করবে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here