করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তারা পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকার এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে যেখানে একই স্থানে পশু ক্রয়-বিক্রয় ও জবাই করা হবে এবং সেখান থেকেই ইউনিয়ন, গ্রাম বা ওয়ার্ডের মতো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে গোশত বিতরণ করা হবে। অনলাইনে গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচারণার পাশাপাশি, প্রচলিত পশুর হাটগুলোতে পশু কেনা-বেচা, সেগুলো জবাই ও গোশত বিতরণকালে স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আযহার ১৫ দিন পরে আমরা আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়ার ক্ষেত্রে তীব্রতা দেখতে পারি, কারণ কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চারপাশে বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।’

দেশে করোনা সংক্রমণের হার ২১-২২ শতাংশ (পরীক্ষিত কোভিড নমুনাগুলোর মধ্যে) রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের পর দেশে সংক্রমণ হারে তেমন বড় পার্থক্য দেখা না গেলেও ঈদুল আযহার বিষয়টি ভিন্ন।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল জানান, তারা সম্প্রতি সরকারকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম শহরাঞ্চলের মধ্যে কোনো গবাদি পশুর হাট স্থাপনের অনুমতি না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সারা দেশের গবাদি পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে বজায় রাখা প্রয়োজন বলেও সরকারকে জানিয়েছে উপদেষ্টা কমিটি।

গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউইচও) সাবেক আঞ্চলিক (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, যদি কোরবানির প্রচলিত প্রক্রিয়া এ সময়েও অব্যাহত থাকে তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না এবং এর মাধ্যমে সারা দেশে তীব্র আকারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।

তারা জানান, দেশে প্রতিবছর সাধারণত এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানি দেয়া হয় এবং পশু কেনা, বেচা এবং জবাই করা থেকে শুরু করে কোরবানির পশুর গোশত বিতরণ ও সংগ্রহের কাজে সরাসরি জড়িত থাকে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ।

এ দুই বিশেষজ্ঞ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় গোটা দেশে পশু কোরবানির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে, সৌদি আরবের মডেলটি অনুসরণ করা যেতে পারে। হজযাত্রীরা সেখানে পশু কোরবানি করার জন্য অর্থ জমা দিলেও, পশু কেনা, জবাই বা গোশত বিতরণে তাদের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘কোরবানির ঈদে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে কারণ এ সময় দেশে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে এবং প্রায় ছয় কোটি মানুষ সরাসরি এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোরবানির পুরো প্রক্রিয়াটি আমরা একটি জাতীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারি। আমরা জানি, সৌদি আরবে যারা পশু কোরবানি করেন তারা সরাসরি এর সাথে জড়িত হন না। আমাদের দেশে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় কি না বা কোরবানির পশুর সাথে সম্পর্কিত কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য একটি একক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’

‘আমরা যদি এটি করতে পারি তবে সামাজিক দূরত্ব বহুলাংশে বজায় রাখা সম্ভব হবে এবং পশু খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না,’ যোগ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক।

অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সৌদি আরব এবং অন্য কিছু উন্নত দেশের মতো, গোশত বিতরণ থেকে শুরু করে কোরবানির পশু কেনা সব কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সরকার কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

তিনি বলেন, যদি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা চালু না করা যায় তাহলে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ইউনিয়ন, গ্রাম বা ওয়ার্ডের মতো প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সরকার একক ব্যবস্থাপনা চালুর উদ্যোগ নিতে পারে।

‘অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচারণার পাশাপাশি, পশুর হাটগুলো বিভ্ন্নি শহরের বাইরে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে,’ যোগ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক।

সূত্র : ইউএনবি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here